শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বভাব ধর্ম ইসলাম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

স্বভাব ধর্ম ইসলাম

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলাম হলো স্বভাব ধর্ম।’ অর্থাৎ মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব যা, কমন চাহিদা যা- ঠিক সেই কথাগুলোই ইসলাম বলে। একজন খাঁটি আল্লাহওয়ালা মুসলমান হওয়ার জন্য এমন কোনো কাজ করতে হয় না, যা মানুষের স্বভাববিরোধী। যেমন একসময় মনে করা হতো আল্লাহকে পেতে হলে সংসারধর্ম ছাড়তে হবে, নারীসংস্রব ত্যাগ করতে হবে; অনেকে আবার আত্মিক শুদ্ধতা লাভ করতে গিয়ে দেহকে এত বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলত যে আসলেই তা খুব অমানবিক ছিল। এসব ছিল ইসলাম আসার আগে ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মগুরুদের সাধনার বিষয়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বুখারির একটি হাদিসে। একবার তিনজন সাহাবি একসঙ্গে বসে শপথ করলেন- আজ থেকে আমি আর রাতে ঘুমাব না। সারা রাত দাঁড়িয়ে নফল সালাত পড়ব। আরেকজন সাহাবি বললেন, আমি কখনো রোজা ভাঙব না। তৃতীয় জন বললেন, আমি কোনো দিন বিয়ে করব না। এসব শুনে রসুল (সা.) খুব রাগ করলেন। তিনি বলেন, আমার চেয়ে বড় আল্লাহসাধাক আর কেউ নেই। আমি রাতে ঘুমাই আবার সালাতও পড়ি। দিনে রোজা রাখি আবার রোজা ভাঙিও। আমার পরিবার আছে। তাহলে তোমরা কেন কষ্ট হয় এমন পথ বেছে নিতে চাচ্ছ? এসব বলে রসুল (সা.) শুধু এ কথাই বোঝাতে চাচ্ছেন, তাঁর ধর্মে কঠিন কিংবা অস্বাভাবিক কিছু নেই। মানুষের স্বাভাবিক ইচ্ছা যা যেমন : ঘুম, খাওয়া, বিয়ে-সংসার এসব করেই আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় তাকে এগিয়ে যেতে হবে। আর এ কারণেই ইসলামকে স্বভাব ধর্ম বা ফিতরাতের ধর্ম বলা হয়েছে।

‘দিনুল ফিতর’ বা ফিতরাতের ধর্মের আরেক নাম ‘মানবধর্ম’। অর্থাৎ মানুষের ধর্ম। এখানে মানুষের জীবন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু, বিয়ে থেকে শুরু করে জীবনের বড়-ছোট খুঁটিনাটি এমন কোনো বিষয় নেই যে এখানে আলোচনা করা হয়নি। এখানে যেমন অর্থনৈতিক বিষয় আলোচনা আছে, তেমনি আছে সমাজ ও পরিবারের কথাও। শুধু তাই নয়, কোরআন এবং নবীজি (সা.) মনোবিজ্ঞান নিয়েও আলোচনা করেছেন। সব মিলিয়ে পুরো ইসলামকে এক কথায় ব্যাখ্যা করতে হলে বলতে হয়- ইসলাম ইজ দ্য কমপিলিট কোড অব লাইফ। ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন পদ্ধতি ও ব্যবস্থার নাম।

বড়ই আফসোসের কথা হলো, আজকের বিশ্বে ইসলাম জীবনব্যবস্থা নয়, শুধু একটি ধর্ম বা মাজহাব ব্যবস্থা হয়ে টিকে আছে। অন্য প্রধান ধর্মগুলোর কিছু কিছু আইন তাদের দেশে স্থান পেলেও আমাদের মুসলিম দেশগুলোয় কোরআনের কোনো বিধান জানা এবং বোঝার-মানার চেষ্টা হয়নি বিগত ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে। না পারিবারিক জীবনে, না সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে- কোথাও কোরআন মানা দূরের কথা বোঝার জন্যও যুগোপযোগী-বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টা করেনি মুসলমানরা।

হে বিশ্বের মুসলমান! কোরআন নিছক কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়। এটি জীবনের সংবিধান। মানুষের জীবনের জন্য গাইডবুক। বলা চলে মানুষ নামক খোদার সৃষ্ট অত্যাধুনিক রোবটের ম্যানুফ্যাকচারিং বুক কোরআন। এ বইটি ছাড়া মানবজীবন অচল। তাই আল্লাহতায়ালা খুব দরদি ভাষায় মানুষকে আহ্বান করছেন- ইয়া আইয়্যুাহল্লাজিনা আমানুদ খুলু ফিসসিলমি কাফফাহ। হে বিশ্বাসীরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলাম নামক জীবন পদ্ধতিতে প্রবেশ কর। জীবনের এ টু জেড ইসলামের ছাঁচে কোরআনের আলোয় আলোকিত কর। তবেই তোমাদের জীবনে নেমে আসবে শান্তির ফল্গুধারা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন

চেয়ারম্যান. বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর