সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

যার জন্ম-মৃত্যু দুটোই অপকর্মের ফল

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

যার জন্ম-মৃত্যু দুটোই অপকর্মের ফল

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এক আজব ও অদ্ভুত সত্তার নাম বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিশ্বের কোথাও এটা নেই। এটা কেন ও কীভাবে এলো এবং এর দ্বারা বাংলাদেশের কতটুকু উপকার বা ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। বিএনপি এখন মৃতকে জীবিত করার মিশনকে সামনে এনেছে। বিএনপির জন্মের ইতিহাস বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলে না।  আগে ক্ষমতা তারপর দল, এটা বিএনপি। অন্যদের বেলায় আগে দলের জন্ম তারপর ক্ষমতায়। গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অবৈধ ও অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম ও মৃত্যুর জন্য পঁচাত্তরের পর ক্ষমতায় আসা অবৈধ দুই সামরিক শাসকের প্রবর্তিত রাজনীতিই মূলত দায়ী, শেকড় সেখানে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সম্প্রতি একটি বড় প্রবন্ধ লিখেছেন। তাতে উল্লিখিত দুয়েকটি বিষয় আমার আজকের প্রবন্ধের সঙ্গে সামঞ্জস্য হওয়ায় সেখান থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃতি আকারে তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন- পঁচাত্তরের পরে তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে নিজের গদি পাকাপোক্ত করলেন। সেই সময় আইন ভঙ্গ, সংবিধান ভঙ্গ ও আইনের শাসন ভঙ্গের প্রতিযোগিতা চলছিল। এখানে উল্লেখ্য, পঁচাত্তরের পরে প্রথম অবৈধ রাষ্ট্রপতি মোশতাক, দ্বিতীয় সায়েম এবং তৃতীয় জিয়াউর রহমান। বিচারপতি খায়রুল হক প্রবন্ধের আরেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন- ‘১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল নতুন নির্বাচিত সংসদ অধিবেশনের প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সব অবৈধ রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কার্যকলাপের বৈধতা পঞ্চম সংশোধনীর মারফত দেওয়া হয়।’ শুধু নিজের নয়, মোশতাক ও সায়েমের সব অবৈধ অপকর্মকে জিয়াউর রহমান বৈধতার সিল দিলেন। কিন্তু সিল মারলেই সব অবৈধ কাজ বৈধ হয়ে যায় না। তাই একই প্রবন্ধের অন্য জায়গায় বিচারপতি খায়রুল হক লিখেছেন- ‘সংসদ সংবিধানের আওতায় সংবিধানে ব্যক্ত কার্যাবলি করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলেও অবৈধ রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কর্মের বৈধতা দিতে পারে না, এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।’ তারপর থেকে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি হয়ে গেল রাজনীতির মূল অবলম্বন। পঁচাত্তর থেকে পর্যায়ক্রমে দুই সামরিক শাসকই সমানতালে রাজনীতিতে প্রতারণা, ধোঁকাবাজি এবং মানি ও মাসলের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে গেছেন। দুজনের সব কার্যকলাপকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের ঘোষণা এখনো কেতাবে রয়ে গেছে, বাস্তবে কিছু হয়নি। আদালতের আদেশ কার্যকর হলে জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত রাজনীতি বাংলাদেশে আজ থাকতে পারত না এবং তাহলে এতদিনে রাজনীতির শুদ্ধিকরণ হয়ে যেত। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দুই সামরিক শাসকের প্রবর্তিত রাজনীতি থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতি শুদ্ধ হবে না। অশুদ্ধ রাজনীতির পথ ধরেই নির্বাচনকালীন অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম ও মৃত্যু ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি যখন সংবিধানে যুক্ত হলো তখন দেশের একজন খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী বলেছিলেন, সমাজের এক ঘরে একটি অবৈধ সন্তানের জন্ম হলো, কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশীসহ সব পক্ষই সেটা মেনে নিলেন। এ অপজন্মের জন্য অপকর্ম করেছে ক্ষমতাসীন দল বিএনপি, আর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সেটির সুবিধা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তখনকার বিএনপি সরকারের অপকর্মের দুয়েকটি খতিয়ান দিই। সেই সময়ে মাগুরার এক উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপি কর্তৃক ভোট ডাকাতির চরম প্রস্তুতি দেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রউফ রাতের অন্ধকারে মাগুরা থেকে ঢাকায় পালিয়ে আসেন এবং প্রকাশ্যে বলেন- আমি অসহায়, ওখানে থাকলে জীবন হারানোর আশঙ্কা ছিল। তারপর ঢাকার মিরপুরের উপনির্বাচনেও একই অবস্থা হয়। তখন দুটি উপনির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাতে সরকারের কোনো পরিবর্তন হতো না, মেয়াদের বাকি সময় বিএনপি সহজেই ক্ষমতায় থাকতে পারত। কিন্তু মানি, মাসল ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের এমন বেপরোয়া, অপব্যবহার দেখে সবারই ধারণা হয় বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে অন্য দলের একজন প্রার্থীও কোনো নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না। এটা যদি বিএনপি নিশ্চিত করতে পারে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে তারা বাংলাদেশকে নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ে তুলবে বলে মানুষের মনে শঙ্কা জন্মে, যার কিছু আলামত তখন ধরাও পড়ে। প্রথমত, এটা এখন সবাই জানেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিএনপিকে বিপুল অঙ্কের টাকা দেয়। দ্বিতীয়ত, আনঅফিশিয়ালি সামরিক বাহিনীসহ প্রশাসনের সর্বত্র হুকুম জারি হয়, একাত্তরের কোনো ঘটনার বর্ণনাকালে পাকিস্তান শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না, শুধু হানাদার বাহিনী বলতে হবে। তৃতীয়ত, সব রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে পাকিস্তানের একজন জেনারেলের মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা প্রেরণ করেন। দুই উপনির্বাচনের ঘটনাবলি এবং অন্যান্য আলামত দেখে মানুষের মনে হতে থাকে সামরিক শাসক হটানোর সফলতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন বোধ হয় ব্যর্থ হতে চলেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগসহ সব দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন শুরু করে। সারা দেশের জনগণ তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয়। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকার একতরফা একটা নির্বাচন করে ফেলে। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সাদেক আলী।  প্রহসনের নির্বাচন বুঝাতে কৌতুক করে মানুষ সেই নির্বাচনকে এখন সাদেক আলী নির্বাচন বলে। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর আবদুর রশিদকে বিএনপি কৌশলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে আনায় মানুষের মনে আরও বদ্ধমূল ধারণা হয় আগামী পাঁচ বছর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ আবার পাকিস্তান হয়ে যাবে। সুতরাং যা হওয়ার সেটাই হলো। একাত্তরের মতো গণজোয়ারে বিএনপির সব দুরভিসন্ধি ভেসে যায়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অবৈধ নির্বাচনের অবৈধ সংসদে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম দিয়ে বিএনপি ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়। সুতরাং অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্মের জন্য কাদের দায়ী করবেন, নির্মোহ দৃষ্টিতে বিচার করুন। উল্লিখিত এবং আলোচিত অপকর্মগুলো যদি বিএনপি না করত তাহলে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম হতো?

সেই অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তার মানে এই নয় যে, অবৈধ বিষয় এর মাধ্যমে বৈধ হয়ে গেল। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত আইনের ওপর কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথকে সুগম করে দেয়। কিন্তু তারপরই শুরু হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৃত্যুর অপকর্ম। বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথম দিন থেকেই প্রচন্ড বিতর্কিত কর্মকান্ড শুরু করে। তিনি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগের আগেই ওই রাতেই ১২ জন সচিবকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন এবং সদ্য ক্ষমতাত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসায় সব টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ দুটি কাজের জন্য কি দুই দিন বা এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা যেত না। কিন্তু তা না করে ওই রাতেই সেটা করার মাধ্যমে কি প্রমাণ হয় না যে, লতিফুর রহমান আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন। কিন্তু কেন? আওয়ামী লীগের সঙ্গে তো তার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ থাকার কথা নয়। শেখ হাসিনার সরকারই তাকে প্রধান বিচারপতি করেছেন। বিচারপতি লতিফ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরের দিনই প্রকাশ্য দিনের বেলায় সাভারে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জাতির পিতার ছবি ভাঙচুর ও পদদলিত করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নীরব ও নিশ্চুপ থাকে। কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। গভীর ষড়যন্ত্র ও সীমাহীন পক্ষপাতিত্বের সবকিছু স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনের ফল দেখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া হতবাক হয়ে যায়। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত বিশ্বের নামকরা বড় জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের জরিপের ফল বলেছে, আগামী নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগই জয়ী হতে চলেছে। কিন্তু নির্বাচনের ফল হলো সম্পূর্ণ উল্টো। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের পরের দিন জামায়াত-বিএনপির ক্যাডার বাহিনী দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও লুটপাট শুরু করে। বহু হিন্দু পরিবার সবকিছু ফেলে দেশত্যাগে বাধ্য হয়। কিন্তু লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীনের সরকার তখনো ক্ষমতায়, তারা জঘন্যতম এ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে একটি টুঁ শব্দও করেনি। লতিফুর রহমানের সরকার তিন মাসে যে অপকর্ম করেছে তার সামান্যই উল্লেখ করলাম। যা উল্লেখ করলাম এবং যা এখন সবাই জানেন তাতে কি প্রমাণ হয় না যে, ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারের মিশন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কনফেডারেশন গড়ে তোলার পথটিকে লতিফুর রহমানের সরকার আরও প্রশস্ত করে দিলেন। তারপর অনির্বাচিত জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদ যখন ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হলেন তখন তো সবকিছু আরও পরিষ্কার হয়ে গেল। মুজাহিদ প্রকাশ্যে বলা শুরু করলেন, একাত্তরে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, ওটা ছিল ভারতের ষড়যন্ত্র। এ কথার অর্থ কী দাঁড়ায়। অর্থ, হিন্দু ভারতের ষড়যন্ত্রের ফসল বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে আবার নতুন করে আমাদের মুসলমান হতে হবে। মুজাহিদের ফর্মুলা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড আক্রমণ চালিয়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়। একই উদ্দেশ্যে ভারতের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের জন্য ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্র পাচারের চেষ্টা করে জামায়াত-বিএনপি সরকার, যা অকস্মাৎ ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ধরা পড়ে। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অপকর্ম করে। রাষ্ট্রের অন্য কোনো ক্যাডার নয়, শুধু বিচারপতিদের চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করে, যাতে তাদের এক সময়ের দলীয় নেতা প্রধান বিচারপতি হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন। দেশের মানুষ সেটা মেনে নেয় না। তারপর একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে থাকে। একপর্যায়ে বিএনপি সরকার সব বিধান ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানায়। এ অপকর্মের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। বিএনপির সব অপকৌশল ব্যর্থ হয়ে যায়। এলেন ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বাংলাদেশকে এক পরাশক্তির তাঁবেদার রাষ্ট্র বানানোর মিশন নিয়ে তারা মাঠে নামলেন। সরকারের মেয়াদ তিন মাসের জায়গায় দুই বছর, পুরো মেয়াদে জরুরি আইন, বড় বড় সব প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলকে শেষ করে দিয়ে ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল তৈরিসহ বহু অবাঞ্ছিত ঘটনার জন্ম দেয় ফখরুদ্দীনের সরকার। তাতে রাষ্ট্র ও রাজনীতির সীমাহীন ক্ষতি হয়ে যায়। দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্মোহ যৌক্তিক বিচার করলে দেখা যায় ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের অপকর্মের ফলে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম হয়। তারপর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াত-বিএনপি এবং সর্বশেষ ২০০৭-২০০৮ মেয়াদে ফখরুদ্দীন সরকারের অপকর্মের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৃত্যু হয়।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর