মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি সহজ নয়

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি সহজ নয়

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত দুই মাস লেখালেখি বন্ধ ছিল। কতজনের কত জিজ্ঞাসা কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারিনি। ১১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা এসেছিলাম। শরীরে কোনো জটিলতা ছিল না। স্বাভাবিক খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। যথারীতি ঘুমও এসেছিল। হঠাৎ রাত দেড়টায় আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। বমি বমি মনে হয়। প্রায় ৪০ বছর ধরে বিছানার পাশে সব সময়ই পানি থাকে। এক ঢোক পানি খেতেই গলগল করে বমি। কুলি করে আবার আরেক ঢোক মুখে দিতে আবার বমি। এভাবে পরপর তিনবার। মনে হয় সব খাবার বেরিয়ে এসেছিল। পায়খানার বেগ পেতে বাথরুমে গেলে সেখানে আবার বমি, কিছুটা পাতলা পায়খানা হয় এবং পেটে তীব্র যন্ত্রণা। এভাবে ছয়-সাত বার বমি ও তিন-চার বার পাতলা পায়খানা এবং পেটে ব্যথা। কোনোভাবে রাত কাটে। সকালে পারিবারিক চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ ভাইকে ফোন করি। তিনি কী একটা ট্যাবলেট দেন, খেয়ে কোনো কাজ হয় না। পাতলা পায়খানা চলতে থাকে। কিন্তু বমি বন্ধ হয়ে যায়। কষ্ট করে ১২, ১৩ তারিখ কাটিয়ে ১৪ তারিখ আর সহ্য করতে না পেরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হই। প্রথম নিয়ে তোলা হয় কেবিন ব্লকের ২১২ নম্বর ভিআইপি রুমে। শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা- রক্ত, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইকো আরও কত কি। প্রথমেই ধরা পড়ে গলব্লাডারে স্টোন। ১৫ তারিখ করোনার পরীক্ষা- ফল নেগেটিভ। আমার ধারণা ছিল দুটি টিকাই নেওয়া হয়েছে তাই করোনা হবে না। কী কারণে যেন আবার পরদিনের পরীক্ষাতেই পজিটিভ। একেবারে বিরক্তিকর। এ কেমন কথা আগের দিন নেগেটিভ, পরদিন পজিটিভ। ভালো ঠেকছিল না। গলব্লাডারের পাথর বের করতে ডাক্তাররা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেদিন দেখা গেল বিলোরবিন হাই। ৪ পয়েন্টের ওপরে। আমার বিলোরবিন জীবনভর স্বাভাবিক থাকে। হঠাৎ ৪ পয়েন্টের ওপরে, অপারেশন হলো না। পরদিন বিলোরবিন নেমে এলো ১.৬-এ। আবার অপারেশনের সিদ্ধান্ত। সেদিন করোনা পজিটিভ। এ রকম একের পর এক ঝকমারি চলতেই থাকে। ছয়-সাত দিন পেটে ছিল তীব্র ব্যথা। আস্তে আস্তে ব্যথা কমে এলো। দিনে ছয়-সাতটি ইনজেকশন। আবার ডাক্তাররা বললেন করোনার কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। তবু ইনজেকশন দিচ্ছেন ছয়-সাতটি। নাভির চারপাশে সকাল-বিকাল দুটি, আরও যে কত ইনজেকশন তার কোনো হিসাব নেই। যতবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি একবারও খুব একটা ভালো লাগেনি। কিন্তু এবার করোনার মধ্যেও হাসপাতালের লোকজনের সহমর্মিতা, চিকিৎসা, সেবাযতেœ মুগ্ধ হয়েছি। এ নিয়ে পরে পুরো একটি পর্ব লিখব। কারণ করোনার চিকিৎসা সম্পর্কে লোকজনের জানা দরকার।

এখনো শরীর ভালো না। সকালে কয়েকটি পত্রিকা পড়ি তাতেও কষ্ট হয়। তাই আরও এক-দুই সপ্তাহ পরে লেখা শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবার দুর্গোৎসব নিয়ে যে নির্মম সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো হলো তাতে হৃদয় ভেঙে গেছে। না লিখে থাকতে পারলাম না। জানি, আমার লেখায় আওয়ামী লীগের গা জ্বলে, বিএনপির পছন্দ হয় না। কিন্তু লাখ লাখ সাধারণ পাঠক আমার লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকেন- এটাই আমার বড় সান্ত্বনা। শুরুতেই বলব, শারদীয়া দুর্গাপূজায় প্রশাসন দৃষ্টি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বেশ হেলেদুলে অহংকারের ঢেঁকুর তুলে বলেছিলেন- এবারের পূজায় শঙ্কার কোনো কারণ নেই। অথচ যে কিয়ামত হয়ে গেল এর ধারণা কারও ছিল না। যেমনি সাধারণ মানুষের বুকের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো যেতে পারে ’৭১-এ হানাদারদের দেখার আগে কেউ জানত না। ঠিক তেমনিভাবে দিকে দিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো যেতে পারে সেই বাংলাদেশে যে বাংলাদেশ হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মিলিত রক্তে জন্ম।

কোথা থেকে শুরু করব ভেবে পাচ্ছি না। সূচনা যখন কুমিল্লায় তখন কুমিল্লা থেকেই শুরু করা যাক। কুমিল্লার প্রসিদ্ধ নানুয়ার দীঘির পাড় পূজামন্ডপে হনুমানের কোলে কোরআন শরিফ রাখা নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সূত্রপাত। নানুয়ার দীঘির পাড় এক বর্ধিষ্ণু এলাকা। ছয়-সাত বারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল আকবর বীরপ্রতীকের বাড়ি, বর্তমান এমপির বাড়ি, পৌরসভা বা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি, সব নামিদামি লোকের বাস। সেখানে পূজামন্ডপে হনুমানের কোলে কোরআন শরিফ রেখে দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভির কল্যাণে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আরও অনেককে করেছে। পুলিশ বলছে অস্থায়ী পূজামন্ডপের সামনেই দরগাহ ও মসজিদ থেকে কোরআন এনে ইকবাল হোসেন রেখেছিলেন। ইকবাল হোসেনকে ধরার পরই দেখা গেল সে একজন পাগল ভবঘুরে উন্মাদ। যেটা তার মা বলেছেন, নানি বলেছেন, স্ত্রী বলেছেন। দুই বাচ্চার বাবা ইকবাল হোসেন, বাচ্চারাও বোধহয় বলেছে। পুলিশও স্বীকার করেছে ইকবাল হোসেন একজন ভবঘুরে। তা হলে আমাদের কি মেনে নিতে হবে এটা একটা ভবঘুরে পাগলের কাজ। তা তো হওয়ার কথা নয়। কাজটি যদি ভবঘুরে ইকবাল করেও থাকে অন্য কেউ তাকে গাঁজা দিয়েছে, টাকা দিয়েছে, খেতে দিয়েছে, বুদ্ধি দিয়েছে। তাহলে ইকবালের পেছনে কেউ না কেউ তো আছে। কারও না কারও বুদ্ধিতে এ কাজটি সে করেছে। তবে গলায় গামছা নিয়ে বলতে পারি এ কাজ আওয়ামী লীগ, বিএনপি করেনি। দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হওয়ার পরের দিকে বিএনপি হয়তো হাততালি দিলেও দিতে পারে। কিন্তু শুরুতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিছুই জানত না এটা জোর দিয়ে বলতে পারি। মাজায় গামছা বেঁধে জাতীয় স্বার্থে সবার এক হয়ে যখন দাঁড়ানোর দরকার আমরা তখনই একজন আরেকজনের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেষ্টা করি। যে যা-ই বলুন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এখনো হিসাব করার মতো দল। একজন আরেকজনের ওপর সব ক্ষেত্রে দোষ চাপানোয় প্রকৃত অপরাধীরা খুব সহজেই বেঁচে যায়। তারা অনেকটা নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দবোধ করে। এটা শুধু এবারের ঘটনায় নয়, গত ২০-২৫ বছরের প্রতিটি ঘটনায়। দেশের মানুষ যখন আশা করে সব দল এক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তখনই কাদা ছোড়াছুড়ি অনেক বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

কুমিল্লার ঘটনায় আমরা কী দেখছি, পাঁচ-সাতটি সিসিটিভির ফুটেজ একত্র করে পুলিশ আমাদের যা দেখানোর চেষ্টা করছে আমরা তা-ই দেখতে পাচ্ছি। এর পেছনেও কি ঘটনা নেই? নিশ্চয়ই আছে। এ ঘটনায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে জাতীয়ভাবে বিশ্বের কাছে আমরা যে পরিমাণ ছোট হয়েছি অন্য কোনো ঘটনায় আমরা এর কানাকড়িও হইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এ ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি প্রতিবেশী ভারত নিয়ে ভাবছি না। ভারতীয় মুসলমানদের ওপর দিনের পর দিন অত্যাচার হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির সরকার তা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি। কাশ্মীরে ঘরে ঢুকে মানুষ হত্যা, আসাম থেকে মুসলমানদের বিতাড়ন এসব লেগেই আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই সাম্প্রদায়িক ঘটনা ভারতে বছরের পর বছর চালানো অত্যাচারকে পিছে ফেলে দেওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

যাই হোক, গোড়ার কথা বলি। আমাদের দেশের প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। দায়িত্ববোধ কাকে বলে প্রশাসনের অনেকের মধ্যেই নেই। সবাই ক্ষমতায় মত্ত। পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও বেশি। পুলিশকে রাতদিন রোদে পুড়তে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে সব সময় আমার মায়া হয়। কিন্তু পুলিশ দিয়ে ভোট চুরি করলে তাদের কি নৈতিকতা থাকে? ১০-১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে পুলিশের সিপাইয়ে ভর্তি হয়ে তাদের টাকা তোলার যদি ধান্ধা থাকে তাহলে কাকে দোষ দেওয়া যায়? পুলিশ যত্রতত্র দাপট দেখায়, কোনো কোনো জায়গায় তারা গর্ব করে বলে আমরা সরকার বানিয়েছি। আমরা কার কথা শুনব, সরকারকে আমাদের কথা শুনতে হবে। কথাটা তো একেবারে মিথ্যা নয়। চুরি করে সরকার বানিয়েছে বলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে না, এটা কেমন কথা? তথ্য বিবরণীতে জানতে পারছি, কুমিল্লায় হনুমানের কোলে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনা রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে ঘটেছে। ইকবালই যদি কোরআন রেখে হনুমানের গদা নিয়ে ঘোরাফেরা করে থাকেন ভালো কথা। তাহলে ওই পূজামন্ডপে তখন পুলিশ-আনসার-বিজিবি কোনো পাহারায় ছিল না, কোনো পুরোহিত ছিল না, পূজা কমিটি ছিল না মানে কেউ ছিল না। আগে পুলিশের কথা বলি, শহরের অমন কেন্দ্রস্থলে একটা পূজামন্ডপে যদি পুলিশ পাহারা না থাকে তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মফস্বলে কী হয়েছে, সেখানে কী হওয়ার কথা, প্রশাসনিক কোনো সতর্কতা যে কোথাও ছিল না, এখনো যে নেই তা এ থেকেই বোঝা যায়। জানি আমার কথায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন খারাপ করতে পারেন। কিন্তু কারও বেদনা বা আনন্দের জন্য আমি তেমন কিছু বলি না। আমার মন আমার বিবেক যখন যে নির্দেশ করে আমি তা-ই করি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে দেড় দশক ভারতের নানা স্থানে কাটিয়েছি। দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের এক জাতীয় উৎসব। বিশেষ করে কলকাতার দুর্গাপূজার জৌলুস না দেখলে অনুমান করা সাধ্যের অতীত। অনেক হিন্দুবাড়ি গিয়েছি, পূজায়ও গিয়েছি। এমনও দেখেছি চাকরি করা ছেলে পাড়ার পূজার জন্য লাখ টাকা খরচ করেছে, কিন্তু নিজের মাকে একটা নতুন শাড়ি কিনে দেয়নি। শুনলাম, নানুয়ার দীঘির পাড়ের পূজামন্ডপ ছিল কুমিল্লার মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো জাঁকজমকপূর্ণ। লাখ লাখ টাকা খরচ করে পূজামন্ডপ করা হয়েছিল। ধরে নিলাম প্রশাসন পুলিশ-আনসার-বিজিবি কেউ পাহারা দেয়নি। পূজার জন্য হিন্দু সম্প্রদায় এত টাকা খরচ করল, ২-৪ হাজার টাকা খরচ করে কয়েকটি সিসি ক্যামেরা কেন লাগানো হলো না? কেন পাঁচ-দশ জন পাহারার লোক রাখতে পারলেন না? সন্ধ্যা থেকে হয়তো অনেক রাত পর্যন্ত আরতি হয়েছে, ধুপ-ধুনো দিয়েছেন, ইচ্ছামতো নেচেছেন। তারপর সবাই যে মাকে একা ফেলে বাড়ি চলে গেলেন কারও একটুও বুকে বাধল না? যে মার জন্য এত আয়োজন সেই মাকে রাত দেড়টা-দুটায় একা পথের পাশে ফেলে গেলেন, দুজন পুরোহিতও তো সারা রাত পূজা অর্চনা করতে পারতেন, ৫০ জন ভক্ত বিনিদ্র রজনি কাটাতে পারতেন। হাজারো মা-বোন রংবেরঙের শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ান, পূজা দেখেন। তাদের কিছু বা কয়েকজন তো মন্ডপে মাকে সান্নিধ্য দিতে পারতেন। কই, কাউকে তো দেখলাম না? তাহলে পূজা বুকের ভিতরের টইটম্বুর ভালোবাসায় ভরপুর নয়, লোক দেখানো জৌলুস! এখানে ভক্তি কোথায়, ভালোবাসা কোথায়? এখানে মুক্তির আকুতি কোথায়? একটা খেটে খাওয়া মানুষও তো তার মাকে ওভাবে একা রাস্তায় ফেলে যাবে না। আর এ তো দেবী মা দুর্গা, তাকে সবাই একা ফেলে বাড়ি চলে গেলেন কারও বুকে বাধল না? পরদিন সকাল ৮টা-৯টার আগে নাকি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে পূজামন্ডপে দেখা যায়নি। এ কেমন কথা? এটা কেমন দায়িত্ববোধের পরিচয়?

আমি ছেলেবেলায় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় পড়তাম। আমার প্রধান গুরু ছিলেন দুখীরাম রাজবংশী। আমার জন্ম নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটিতে। সেখানে খুব বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস নেই। তবে বরাটিতে প্রায় সবাই হিন্দু। সেখানে যখন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হতো তখন কত শত নারী-পুরুষকে জার জার হয়ে কাঁদতে দেখতাম। মির্জাপুরের লৌহজং নদীতে প্রতিমা বিসর্জন হতো। সেখানে মানুষের ঢল নামত। অনেকেই কেঁদে আকুল হতো। আমার কাছে কারও কান্নাই কিন্তু মেকি বা নাটকীয় মনে হতো না। তাহলে কেন নানুয়ার দীঘির পাড়ের প্রতিমা ওভাবে পরিত্যক্ত ফেলে রাখা হলো?

অন্যদিকে আমরা সব ক্ষেত্রে জাতীয় বিভাজনের দিকে পা না বাড়িয়ে জাতীয় প্রয়োজনে যদি জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা নিতাম যে কোনো জাতীয় সমস্যা দলীয়ভাবে বা সরকারিভাবে মোকাবিলার চেষ্টা না করে জাতীয়ভাবে সবাই মিলেমিশে করতাম তাহলে অনেক ভালো হতো, কাজের কাজ হতো। এখন মানুষের কোনো মর্যাদা নেই, কারও কোনো সামাজিক গুরুত্ব নেই। সাধারণ মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। অন্যদিকে কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া কোনো রাজনীতি নেই, রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। দুস্থ মানুষের পাশে ছুটে যাওয়ার তাগিদ নেই। দলীয় নেতা-কর্মীরা হতাশ, দিশাহারা। তাদের কী করণীয় নিজেরাই জানেন না। আর কীই-বা তারা করবেন। সব কিছুতে প্রশাসন। রাজনীতি থাকলে, দলীয় নেতা-কর্মী থাকত। দলীয় নেতা-কর্মী থাকলে তারা তাদের উদ্যোগেই মানুষের পাশে দাঁড়াত। এখন ছাত্রনেতা, যুবনেতা, নেতা সবার কাজ পয়সা কামানো। আগে এমন ছিল না। এখনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে যদি রাজনীতি থাকত, তাদের কথার দাম থাকত, তারা নিজেরা তাদের নেতা বানাতে পারত, নির্বাচিত নেতা ভালো কাজ না করলে তারাই তাকে সরিয়ে দিতে পারত তাহলে একটা উৎসাহ থাকত। এসব ঘটনা মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের কোনো প্রয়োজনই হতো না। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই সামাজিকভাবে সবকিছু মোকাবিলা করতে পারতেন। কিন্তু সে রাজনীতি তো নেই। এখন সব চাটুকারের প্রাধান্য, পোঁ ধরাদের জয়জয়কার, বড় ছোটর পার্থক্য নেই। তাই সবার আগে এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক কর্মীদের কর্মচারী না বানিয়ে কর্মী বানানো, সামাজিকভাবে মানুষকে উৎসাহিত করা এবং একটা জাতীয় সম্প্রীতি গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা নেওয়া। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে একটি জাতীয় সম্মেলনের আহ্বান। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জেলেপাড়া পুড়ে ছারখার করার খলনায়ক রবিউল ও সৈকতের কীর্তিকাহিনি পরে বলি।

 

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর