রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে নজর দেওয়া উচিত

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে নজর দেওয়া উচিত

দেশের কভিড পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে যখন সারা বিশ্ব ভয়াবহ সময় অতিক্রম করেছে তখন আমাদের পরিস্থিতিও বেশ খারাপ ছিল। তবে তুলনামূলক ক্ষতি আমাদের কমই হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারটাও বেশ দ্রুতই হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কভিড ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। এখন আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু হয়েছে। তবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে কিছুটা নেতিবাচকতা দেখা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটা চাঙা হলে হয়তো রেমিট্যান্স পরিস্থিতি আবার আগের পর্যায়ে চলে যাবে। পাশাপাশি আমাদের যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বিশেষ করে কৃষি খাতের উৎপাদনে আরও নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীনের চেয়ে আমাদের কৃষি উৎপাদন অনেক কম। একইভাবে করোনার সময় দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে। তাই অর্থনীতিটাকে আবার আগের জায়গায় নিতে হলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বেশ ইতিবাচক পূর্বাভাসই দিয়ে যাচ্ছে। যদিও ওসব সংস্থার পূর্বাভাসের ব্যাপারে নানা বিতর্কও থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা হলো আসলেই আমরা এখন বেশ ভালো আছি। মানে আমাদের অর্থনীতিটার তুলনামূলক ক্ষতি কমই হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন পণ্যবাজারে কিছুটা অস্থিরতা রয়েছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর কিছুটা চাপ বাড়ছে। তাদের কষ্ট হচ্ছে। এখানে সরকারের তদারকি বাড়াতে হবে। আবার ই-কমার্সে নানা ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় এ খাতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাত, অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের নজরদারি বাড়িয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। কভিডের বাইরেও যেমন ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ জটিল কিছু রোগব্যাধি আবার মাথা চাড়া দিয়েছে। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে মহামারী কাটিয়ে উঠলেও দেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে চাপ বাড়বে যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রচন্ড চাপের মুখে ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার পরিস্থিতিও সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। এখানেও অস্থিরতা রয়েছে। পুঁজিবাজার বিপুলসংখ্যক মানুষের আয়ের ক্ষেত্র। এ ছাড়া এখানে অনেক কোম্পানি তাদের অর্থ লগ্নি করে। আবার পুঁজি সংগ্রহ করে। ফলে এ খাতেও আরেকটু নজর দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল তার বাস্তবায়নও ভালোভাবে হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তা পাননি। আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, শ্রমিক, এদেরও সরকারের প্রণোদনা দেওয়া উচিত।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। যার একটা প্রভাব পড়বে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর। এজন্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রেখে একে নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর