মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২৭ দিন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২৭ দিন

মানুষের জীবনে সুখ অসুখ দুটিই কমবেশি থাকে। সুস্থ মানুষের অসুস্থ হওয়ার কোনো সময় নেই, যখন তখন হতে পারে। শুধু মানুষ নয়, যে কোনো জীবেরই অসুখ বিসুখ হতে পারে। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর প্রায় এক মাস বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছিলাম। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে হঠাৎই বমি শুরু হয়েছিল, সঙ্গে অনেকবার পাতলা পায়খানা। আমাদের পরম হিতৈষী অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ একজন সোনার মানুষ। আমার স্ত্রী তাঁর সঙ্গে পরামর্শ না করে এক গ্লাস পানিও খেতে চান না, খানও না। কিছু হলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমিও যোগাযোগ করেছিলাম প্রচন্ড পেটব্যথা ও বমি নিয়ে। আবদুল্লাহ ভাই কি এক ট্যাবলেট দিয়েছিলেন এই প্রথম মনে হলো তাঁর ওষুধে কোনো কাজ হয়নি। হাসপাতালে যাওয়াই ঠিক মনে হচ্ছিল। তাই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ডা. শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। শরিফুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর একজন সদস্য। স্বাধীনতার পর বাবর রোডের বাড়িতে থেকে ঢাকা কলেজে অনেকদিন লেখাপড়া করেছে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধ যুদ্ধেও শরিক হয়েছিল। একেবারে ঘরের মানুষের মতো। তাই প্রথম ওকেই ফোন করেছিলাম। শরিফুল বলেছিল, চলে আসুন। সঙ্গে ভিসি সাহেবকে একটা ফোন করতেও বলেছিল। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদকে ফোন করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, আপনি কেবিন ব্লকের সামনে চলে আসুন আমি ব্যবস্থা করছি। মোহাম্মদপুর বাবর রোড থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। তেমন যানজট ছিল না। কেবিন ব্লকের সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই দেখি হুইল চেয়ার নিয়ে দুজন দাঁড়িয়ে আছে। সোজাসুজি কেবিন ব্লকের দ্বিতীয় তলায় ২১২ নম্বর রুমে নিয়ে তোলে। কেবিন ব্লকের ২১১, ২১২ নম্বর রুমকে ভিআইপি কেবিন বলা হয়।

ঘরটির সঙ্গে আমি বেশ পরিচিত। ২১২-তে আমি বেশ কয়েকবার থেকেছি। আমাদের ছেড়ে যখন মা চলে যান সে যাত্রায়ও ২১২-তেই মার ঠাঁই হয়েছিল। যদিও মা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন ডি ব্লকের তিন তলায় আইসিইউতে। তাই কেবিন ব্লকের ২১২ আমার খুবই পরিচিত। এই তো বছর দুই আগে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে একেবারে অনাহূত গ্রেফতার করে ২১২-তে রাখা হয়েছিল। লতিফ সিদ্দিকী পাকিস্তান-বাংলাদেশ মিলে ১২-১৩ বছর জেল খেটেছেন। কিন্তু মন্ত্রিত্ব হারাবার পর বগুড়ার এক পাটের গোডাউন লিজ দেওয়ার ব্যাপারে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার আমার কাছে কোনো কাজের কাজ মনে হয়নি। বগুড়ার এক শ কয়েক ডিসেমল জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য মন্ত্রী বরাবর একজন আবেদন করেছিলেন। যিনি আবেদন করেছিলেন তিনি তার পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভারতে দেখা। তাই দরখাস্তের গায়ে লিখে দিয়েছিলেন প্রথামত জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করুন। আবেদনকারীর স্বামীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম। সেই আবেদন সব হাটঘাট ঘুরে বগুড়ার ডিসির প্রতিবেদনসহ ধীরে ধীরে নিচে থেকে ওপরে আসে। জমিটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দের বিরুদ্ধে বগুড়ার কয়েকজন আদালতে যান। আদালত থেকেও বলা হয় যথাযথ নিয়মে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকলে কোর্টের করার কিছু নেই। তারা হাই কোর্টে যান। হাই কোর্টেরও রায় বাদীর বিরুদ্ধে যায়। কিন্তু দুদক মাননীয় মন্ত্রী এবং আবেদনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে, ওই লিজ প্রদানে রাষ্ট্রের ১৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। বগুড়ার কোর্ট থেকে দুজনের নামেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আবেদনকারী মহিলার বয়স ৭০ বছর। বগুড়া কোর্ট তাঁর বয়স বিবেচনা করে জামিন দিয়ে দেয়। পরের সপ্তাহে মাননীয় মন্ত্রী কোর্টে উপস্থিত হলে তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। কারণ মাননীয় সাবেক মন্ত্রী সত্যিই অসুস্থ ছিলেন।

যে ধারায় মামলা হয়েছিল বা মামলা করেছিল সেটি জামিনযোগ্য। আর বগুড়ার ম্যাজিস্ট্রেট ৭০ বছর বয়স বলে দুই আসামির একজনকে জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু ৮০ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও মাননীয় সাবেক মন্ত্রীকে জামিন দেননি! আমার কাছে ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত মনে হয়েছিল। মামলাটি নিয়ে হাই কোর্টে যাওয়ার পর আমিও বেশকিছু ব্যারিস্টার-উকিলের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো উকিল তেমন সাড়া দেননি। এমনকি শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের ছেলে তাপসের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। তার কথা, ‘এগুলো আমাদের এখতিয়ারে না, চাচা আপনি জানেনই তো।’ প্রয়াত আবদুল মতিন খসরুর কাছেও গিয়েছিলাম। মতিন খসরু আমাদের একেবারে ঘনিষ্ঠজন। লতিফ সিদ্দিকীর প্রিয় কর্মী। আমাকেও ভীষণ সম্মান করতেন। তিনি সরাসরি বলেছিলেন, ‘লিডার, এটা তো যে কোনো উকিল দাঁড়ালেই বেল পেয়ে যাবে।’ সাত মাস বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ২১২ নম্বর ঘরে লতিফ সিদ্দিকী বন্দী ছিলেন। আমার জন্ডিস হয়েছিল তখন ছিলাম। অন্য সময়ও ২১২ নম্বর রুমে জায়গা পেয়েছি।

এর আগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছারপোকার বড় যন্ত্রণা ছিল। এবার কোনো ছারপোকার সঙ্গে দেখা হয়নি। প্রথম ভর্তি করা হয়েছিল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ আরাফাতের অধীনে। হাসপাতালে গিয়ে বমি ও পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শরীর ছিল মারাত্মক দুর্বল। রক্ত নেওয়া এবং একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। মনে হয় ১৪ তারিখ সারা দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই কাটে। রক্ত, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, ইকো আরও কত কি। আল্ট্রাসনোগ্রামে গলব্লাডারের মুখে ছোট্ট এক পাথর ধরা পড়ে। শরীর সাংঘাতিকভাবে দুর্বল। পেটে প্রচন্ড ব্যথা। সিদ্ধান্ত হয় পরদিন অপারেশন হবে। রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বিলোরবিন-৪-এর ওপরে। যেখানে জীবনে কোনো দিন বিলোরবিন-১-এর ওপর ওঠেনি সেদিন তা ৪.২। জন্ডিস হওয়া ছাড়া আর কখনো বিলোরবিন ওঠেনি। অনেকের নাকি ৩০-৩৫ পর্যন্ত বিলোরবিন উঠে যায়। আমার উঠেছিল ১৬-১৭ পর্যন্ত। যেভাবে উঠেছিল তার চাইতে যখন কমা শুরু করে তখন দ্রুত গতিতেই কমতে থাকে। মনে হয় ১৫-২০ দিন হাসপাতালে থেকে যেদিন বিলোরবিন ৪ বা ৩-এ নেমে আসে সেদিন বাসায় ফিরেছিলাম। তার দু-তিন দিন পর বিলোরবিন একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। আবার এবার পেট জ্বালাপোড়া প্রচন্ড যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়ে বিলোরবিনের সমস্যায় পড়েছিলাম। বিলোরবিন তখন ৪.২। বিলোরবিন ৪.২ নিয়ে অপারেশন হবে না। দুই দিনের মধ্যে বিলোরবিন স্বাভাবিক হয়ে যায়। করোনা পরীক্ষা করে দেখা যায় নেগেটিভ। মনে হয় তারিখটা ছিল ১৬ বা ১৭। তার পরদিন আবার টেস্ট করা হলো করোনা পজিটিভ। দ্বিতীয়বার অপারেশনের তারিখ হয়েছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু এক দিন আগে নেগেটিভ, পর দিন পজিটিভ। নিজের কাছেই ভালো লাগেনি। দিনে আট-নয়টি ইনজেকশন। চার-পাঁচ দিনে পেটের ব্যথা কমে গেল। বমি আর একবারও হয়নি, বমি বমি ভাবও ছিল না। এখন করোনাই হলো বড় সমস্যা।

প্রতিদিন করোনা নিয়ে কত কিছু শুনেছি। করোনা ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় তলা থেকে নিয়ে গেল পঞ্চম তলায়। করোনা ইউনিটে যাওয়ার আগে অনেক কিছু ভেবেছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখলাম অন্য রকম। নার্স, ওয়ার্ডবয়, ডাক্তার সবাই মাস্ক পরে ডিউটি করছেন। তাদের কোনো দ্বিধাবোধ নেই। করোনা হলে যে দূরে দূরে থাকতে হবে সে ব্যাপারটিও চোখে পড়ল না। সবাইকে আন্তরিক মনে হলো। প্রয়োজনীয় সময়ে নার্স আসছেন, ডাক্তার আসছেন, ওষুধ দিচ্ছেন আবার ডাক্তারই বলছেন করোনার কোনো চিকিৎসা নেই। অন্য ব্যাপারগুলো আমরা ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। বহু বছরের ডায়াবেটিস। অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমউদ্দিনের চিকিৎসায় আছি। খাজা নাজিমউদ্দিন একজন অত্যন্ত হৃদয়বান মানুষ, ভালো চিকিৎসক। মায়ের ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করতেন। সেই থেকে আমার। দু-তিনটি ট্যাবলেট খাই তাতেই সুগার ঠিক থাকে। হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে সব বন্ধ করে দিয়ে ইনসুলিন দেওয়া শুরু করল। কত সুই যে ফুটিয়েছে তা বলে শেষ করতে পারব না। আমার সঙ্গে ছিল ফরিদ আহমেদ ও আলমগীর হোসেন। দুই দিন পর তারাও করোনা পজিটিভ। কিন্তু ওদের কোনো লক্ষণ নেই। খাওয়া-দাওয়ায় কোনো আকার-বিকার নেই। ১০ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছি। এর মধ্যে আবার হঠাৎই ২০-২২ তারিখে বেগম সাহেবার করোনা পরীক্ষা করে দেখা যায় পজিটিভ। তাঁকেও নিয়ে তোলা হয়েছিল ৫১২-তে। তাঁরও চিকিৎসা চলল সমানতালে। ধীরে ধীরে মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। দু-তিন রাত বেশ জ্বর আসত। তারপর জ্বরটর সব চলে গেল। কিন্তু কিছুই খেতে ইচ্ছা করত না। ডাক্তারসহ সবাই বলছে করোনায় মুখের স্বাদ চলে যায়। কিন্তু আমি তার কিছুই বুঝতে পারলাম না। খাবার খেতে পারতাম না। এখনো ভালোভাবে খেতে পারি না। খাবারের পরিমাণ একেবারেই কম। আর ডাক্তাররা বলছেন শুধু খাবেন আর খাবেন। খাওয়া ছাড়া স্বাস্থ্য উদ্ধারের কোনো পথ নেই। করোনা নেগেটিভ হয়েছে তা-ও প্রায় এক মাস। কিন্তু মহাদুর্বলতায় ভুগছি। কবে এ দুর্বলতা কাটবে শুধু আল্লাহই জানেন।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময়ই অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহর ভরসাতেই যাই। তিনি আপনজনের মতো সবকিছু দেখাশোনা করেন। কিন্তু এবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অনেকদিন আবদুল্লাহ ভাইকে পাইনি। কারণ তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। তাই একটা শূন্যতা অনুভব করেছি। তবে দেশে ফিরে ৩-৪ তারিখ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তখন আমার এবং আমার স্ত্রীর করোনা নেগেটিভ হয়ে গেছে। তবু তাঁর সান্নিধ্য আমার বেশ ভালো লেগেছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যতবার ভর্তি হয়েছি কোনো না কোনো ব্যাপারে খারাপ লেগেছে। এবার তা লাগেনি। করোনার এত ভয়, মনে হয় কেউ কারও নয় তেমন পরিস্থিতিতে ২০-২৫ দিন ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী কারও মধ্যে কোনো দ্বিধা দেখিনি। তারাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এমন ভয় কারও মধ্যে দেখিনি। যেখানে যে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে সবখানেই চমৎকার তৎপরতা দেখেছি, যত্ন দেখেছি। কেউ কেউ হয়তো বলতে চেষ্টা করবেন আমার মতো একজন নাম জানা মানুষের যত্ন তো হওয়ারই কথা। কিন্তু শুধু আমাকে নয়, অন্যদেরও যত্ন করতে দেখেছি।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিবেশ অনেক ভালো হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি হাসপাতালে এটা জানতে পেরেছি। আমি করোনার মধ্যে হাসপাতালে যাই না। লোক পাঠাব।’ পাঠিয়েও ছিলেন। প্রথমে এসেছিলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। রেজাউল করিম আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে ফোন করেছিলাম। তিনিও দেখতে এসেছিলেন। করোনা ইউনিটে যে দেখতে আসা যায় আমার ধারণায় ছিল না। কিন্তু এসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শারফুদ্দিন আহমেদ এসেছেন, বারবার খোঁজ নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর ব্রি. জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান এসেছেন, দেখা করেছেন। কি এক সমস্যা নিয়ে বলেছিলাম সঙ্গে সঙ্গে ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন। এবার কেন যেন সবকিছুতে একটা গতিময় ভাব দেখলাম। এক সন্ধ্যায় প্যাথলজি বিভাগের এক ডাক্তার এষণা পাল তাঁর সাপ্তাহিক ডিউটি শেষে ইনজেকশন দিয়ে ব্লাড মেপে আমার বিছানার পাশে নিচু হয়ে বসে হঠাৎই বলে উঠলেন, ‘এ কদিন তো ডিউটি করলাম। কাল থেকে এক সপ্তাহ আমার ডিউটি নেই। এ কদিন রোগী হিসেবে দেখেছি। আজ একজন মানুষ হিসেবে আপনার হাতটা একটু ধরতে চাই।’ দুই হাতে আমার হাত ধরে বলছিলেন, ‘আমার বাড়ি হালুয়াঘাট। আমার দাদা আপনার কথা কত বলেছেন। ’৭৫-এ আপনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন, আমাদের এলাকায়ও আপনি ছিলেন। সেই আপনার সেবা করতে পারলাম এটা আমার জন্য সৌভাগ্য। দাদার কাছে, বাবার কাছে আপনার কথা কত শুনেছি।’ বলতে বলতে মেয়েটি তাঁর দুই হাত আমার কপালে ছুঁইয়েছিল। চমক খেলে গিয়েছিল অসুস্থ শরীরে। একটা তৃপ্তির নতুন শিহরণ জেগেছিল বুকে। মনে হচ্ছিল এ যেন আমার মায়ের হাত, আমার মেয়ের হাত। সে সময় ৬-৭ গজ দূরে কেবিনের দরজায় আমার এলাকার ইলা নামে একটি মেয়ে জারজার হয়ে কাঁদছিল। মেয়েটি খুবই ভালো। বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছে। তাঁর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না আমাকে বড় আলোড়িত করে ছিল। নার্স মিতু আলম বারবার খোঁজ করেছে। ওর বাড়ি সরিষাবাড়ী। রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই অথচ কত ভালোবাসা তাদের মধ্যে।

এবার সত্যিই করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেক কিছু বুঝলাম, চিনলাম। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। সর্বোপরি চিকিৎসায় অনেক যত্ন বেড়েছে। মনে হলো, মানুষ মানুষের জন্য- বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে এসে নতুনভাবে তা উপলব্ধি করলাম। ডাক্তার, নার্সেরা যদি রোগীদের প্রতি এমন যত্নবান হন তাহলে চিকিৎসাবিদ্যায় আরও সুনাম হবে।

 

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর