বিলম্বিত বিচার বিচারহীনতার নামান্তর। এ তত্ত্ব সম্পর্কে বিচারক, আইনজীবী, মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষ এবং বিচারপ্রার্থী কারও কোনো দ্বিমত নেই। তার পরও আমাদের দেশে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া নিয়তির লিখন। আদালতে ঘুরতে ঘুরতে বিচারপ্রার্থীরা নিজেদের জীবনের প্রতিই বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছেন। মামলাজট কমানোর জন্য সব পক্ষের অঙ্গীকার থাকলেও তার বাস্তবায়ন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এক সমস্যার সমাধান টানতেই জেগে উঠছে আরেক সমস্যা। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নির্ভর করে আইনজীবীসহ সব পক্ষের সহযোগিতার ওপর। আইনজীবীদের একাংশ ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’ প্রবাদের অনুরক্ত হওয়ায় মামলা ঝুলিয়ে রাখেন এমন অভিযোগ প্রবল। করোনাকালে অভিযোগপত্রের তুলনায় আদালতে নিষ্পত্তির হার কমে যাওয়ায় বোদ্ধাজনদের উদ্বেগ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পুলিশ ৯২ হাজার ৭৫৩ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে। এ সময় নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার ১৪০টি মামলা। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে আদালতে মাত্র ৭৭২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ফলে দেশের প্রতিটি আদালতেই মামলাজট বেড়ে চলেছে ভয়াবহ হারে। আদালত-সংশ্লিষ্টদের মতে লকডাউনসহ নানা কারণে অনেক দিন আদালত বন্ধ ছিল। করোনা সংক্রমণসহ বিভিন্ন কারণে অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে পারেননি। সশরীরে না বসায় অনেক ক্ষেত্রে ভার্চুয়ালি আদালতের কার্যক্রম চলেছে। এতে মামলার জট কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিবর্তিত সাক্ষ্য আইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বা ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য নেওয়া যাবে। এর ফলে আদালত-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আন্তরিক হলে মামলাজট কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। দেশে অপরাধপ্রবণতায় রাশ টেনে ধরার পাশাপাশি আইনের শাসন কায়েমের স্বার্থে মামলাজট কমানোর বিকল্প নেই। মানুষ আদালতে বিচারপ্রার্থী হয়ে মাসের পর মাস বছরের পর বছর ঘুরবে তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এ সমস্যার সমাধানের কথা ভাবতে হবে।