সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফাতেমার উদ্দেশে রসুলের অসিয়ত

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

রসুলেপাক তার কলিজার টুকরা ফাতেমাকে অসিয়ত করেছিলেন, ‘হে ফাতেমা! যদি তোমার কোনো কিছু চাওয়ার থাকে, আমার কাছে চেয়ে নাও, আর নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার আমল কর! কারণ আমি তোমাকে আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচাতে পারব না!’ আজ আমরা আখেরাতের ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন, নেক আমলের প্রতি আমাদের আকর্ষণ নেই। অনেকের মুখে শোনা যায়, ‘আমার কোনো ভয় নেই, আমার পীর আমাকে ত্বরায়ে নিবেন। অথবা নবীর শাফায়াতে আমার মুক্তি সুনিশ্চিত। বন্ধুগণ! সজাগ হোন! সতর্ক হোন! জাহান্নাম থেকে মুক্তির ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তৈরি হয়ে থাকুন, কখন ডাক আসে জানা নেই এবং জানার কোনো উপায়ও নেই। গভীরভাবে চিন্তা করুন! যদি প্রিয়নবী তাঁর কলিজার টুকরা ফাতেমাকে এরূপ বলতে পারেন, তাহলে আপনার আমার কী দুরবস্থা হতে পারে! আপনারা আমার জন্য দোয়া করুন, আমি আপনাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে নেক আমলের তাওফিক দিন।

নাজাতের একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে অন্তরে আল্লাহর ভয় বিদ্যমান থাকা। কেননা, অন্তরে আল্লাহর ভয় বিদ্যমান থাকলে পাপাচারিতা থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ নেক কাজ করতে সক্ষম হয় এবং জান্নাতি হতে পারে। অন্তরের ভয়ের কারণে মানুষ অতি সহজে নফসে আম্মারা এবং প্রবৃত্তির ফাঁদ থেকে মুক্তি লাভে সমর্থ হয়। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন। যাদের অন্তরে আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানোর ভয় আছে, তারাই নিজকে খাহেশাত থেকে বিরত রাখে, তাদের ঠিকানা অবশ্যই জান্নাত হবে। আর যারা বস্তুজীবনকেই মনে করে আসল জীবন এবং একে আখেরাতের ওপর প্রাধান্য দিয়ে পাপাচারিতায় লিপ্ত হয়, তার ঠিকানা অবশ্যই জাহান্নাম। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করেছে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। সুতরাং অন্তরের ভয় বড় নেয়ামত; তাই মেহনত-মুজাহাদা করে অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করা উচিত। যাদের অন্তরে আল্লাহপাকের ভয় বিদ্যমান রয়েছে, এমন আল্লাহ্ওয়ালাদের সংশ্রব অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।

এত সব অপরাধে অপরাধী লোকটি আল্লাহপাকের প্রশ্নের জবাবে বলল, হে আল্লাহ্পাক! তুমি বড় মহান, বড় ক্ষমাশীল। আমি যা অসিয়ত করেছি, ভুল করেছি, অপরাধ করেছি। তবে তা একমাত্র তোমার ভয়ে করেছি, অন্য কোনো কারণে নয়।’ লোকটির জবাব শুনে আল্লাহ্পাক ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন, ‘হে ফেরেশতাগণ! আমার এই বান্দার অন্তরে আমার ভয় বিদ্যমান ছিল এবং এখনো বিদ্যমান আছে। তাই আমার বিধান মোতাবেক আমি তাকে ক্ষমা ঘোষণা করে জান্নাতবাসী করলাম। তাকে জান্নাতের চির শান্তিপুরীতে দাখিল করে দাও।

মানুষ তার সৃষ্টির লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হয়ে ভুল-ত্রুটির শিকার হতে পারে, কিন্তু যদি তাতে সে লজ্জিত হয়, অনুতপ্ত হয়, আর আল্লাহ্পাকের দরবারে দীনতা-হীনতার সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে যেমন ক্ষমা লাভে ধন্য হতে পারে, তেমনি তার জন্য কল্যাণ ও সফলতার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। উপরোক্ত ঘটনাটি এরই একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর