রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত। নিঃস্ব, নির্যাতিত ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা, তাদের প্রতি সহানুভূতি-সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করা নিঃসন্দেহে বরকতময় ও পুণ্যময় কাজ। মানুষের কষ্ট, দুর্দশা দেখে যার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় না সে প্রকৃত মুমিন নয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সব সময় অসহায়, নির্যাতিত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, তাদের দিকে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। শুধু তাই নয়, তিনি সমাজের বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আইয়ামে জাহেলিয়ায় মাত্র ২৫ বছর বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন; যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল দুস্থ-অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। নবুয়তের ২৩ বছরেও তিনি মানুষের মধ্যে প্রচার করেছেন মানবতার মর্মবাণী। যারা নিঃস্ব অভাবী ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দীকে খাবার দান করে। তারা বলে আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমাদের আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ সুরা দাহর আয়াত ৮-৯। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর এবং বন্দীকে মুক্ত কর; যাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে।’ বুখারি।

হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে (মুসলমান) ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীন মুসলমানকে কাপড় পরিধান করায় আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে খানা খাওয়ায়, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করায় আল্লাহ তাকে এমন শরাব পান করাবেন যার ওপর মোহর লাগানো থাকবে।’ আবু দাউদ।

হজরত হারেসা ইবনে নোমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মিসকিনকে নিজ হাতে দান করা অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে।’ বায়হাকি।

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর শাসনামলে একবার মদিনায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। প্রচণ্ড খাদ্য সংকটে মদিনাবাসীর জীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠল। সে সময় হজরত উসমান (রা.) -এর একটি ব্যবসায়িক কাফেলা বিশাল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মদিনায় এসে পৌঁছল। এ খবর মদিনাবাসীর মধ্যে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ল। মদিনার কিছু ব্যবসায়ী তাঁর কাছে হাজির হয়ে খাদ্যসামগ্রী কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করল। হজরত উসমান (রা.) বললেন, যে আমাকে ৭০০ গুণ লাভ দিতে পারবে আমি তার কাছে এ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করব। কেননা একজন আমাকে ৭০০ গুণ লাভ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। এ কথা শুনে মদিনার ব্যবসায়ীরা নিরাশ হয়ে চলে গেলেন। এরপর তিনি তাঁর সমুদয় খাদ্যসামগ্রী বিনামূল্যে মদিনাবাসীর মধ্যে বিতরণ করে দিলেন। ব্যবসায়ীরা বললেন আপনি ৭০০ গুণ লাভ দাবি করেছিলেন অথচ এখন বিনামূল্যে বিতরণ করছেন! জবাবে হজরত উসমান (রা.) বললেন, আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করছি; যিনি পবিত্র কোরআনে ১-এর বিনিময়ে ৭০০ গুণ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন।

মহান রব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় ঋতুর পালাবদলে বাংলাদেশে আবারও শীত শুরু হয়েছে। এ শীতে দুস্থ, নিঃস্ব, গরিব ও অসহায়রা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গা প্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর