চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের নিরিখে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাওয়া নিশ্চিতভাবে নেতিবাচক খবর। করোনাকালে জনশক্তি রপ্তানির হার হ্রাস পাওয়া, হাজার হাজার প্রবাসী কর্মীর চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরাকে রেমিট্যান্স হ্রাসের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে এমন সরল ব্যাখ্যার মধ্যে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। কারণ করোনাকালে অন্যান্য দেশে রেমিট্যান্স কমলেও বাংলাদেশে বরং বেড়েছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির যে ধারা শুরু হয় করোনাকালের আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে, সে গতি অব্যাহত ছিল চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত। জুলাইয়ে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। তারপর বৃদ্ধির বদলে কমছে। দেশে রেমিট্যান্স আসার প্রধান উৎস সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত, কুয়েত ও মালয়েশিয়া থেকে প্রতি মাসে ধারাবাহিকভাবে কমছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স আসার গতি তুলনামূলক স্বাভাবিক রয়েছে। মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই মূলত আশঙ্কাজনকভাবে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি বছর জুলাইয়ে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসে ৪৬ কোটি ডলার। আগস্টে ৪৩ কোটি, সেপ্টেম্বরে ৪০ কোটি ও অক্টোবরে আরও কমে ৩৯ কোটি ডলার আসে। সবচেয়ে বেশি কমেছে মালয়েশিয়ায়। জুলাইয়ে মালয়েশিয়া থেকে ১১ কোটি, আগস্টে ৯ কোটি এবং সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি ডলার করে। প্রতি মাসেই এভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে, সেখানে অক্টোবরে তা ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। রেমিট্যান্স হ্রাসের পেছনে প্রবাসী আয় কমার চেয়েও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ আসা অন্যতম দায়ী। দেশে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডির দিকে ঝুঁকছেন। এ প্রবণতা রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।