মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্থানীয় সরকার পদ্ধতি

নির্বাচন ছিল প্রাচীন গ্রিসীয় শাসন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য এবং সেখানে সাধারণত লটারির মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন হতো। আমেরিকার আদিবাসীদের অনেক গোত্রের লোকেরা নির্দিষ্ট কোনো পাত্রে শস্যকণা নিক্ষেপের মাধ্যমে গোত্রপ্রধান নির্বাচন করত। প্রাচীন ভারতে কখনো কখনো স্থানীয় প্রধান নির্বাচিত হতেন। মুঘল শাসনবিধানে স্থানীয় জনগণের মনোনীত ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনা করতেন। সম্রাট জেলা পর্যায়ে ফৌজদার ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগ করতেন এবং অন্য কর্মকর্তারা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হতেন। বাংলায় গ্রামের লোকেরা নিজ নিজ গ্রামের মোকাদ্দম বা গ্রামপ্রধান, পাটোয়ারি বা কর আদায়কারী নির্বাচন করতেন। গ্রাম মোকাদ্দমদের পরামর্শক্রমে পরগনা কাজি ও থানাদার নিযুক্ত হতেন। ১৭৯৩ সাল পর্যন্ত প্রচলিত গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ছিল স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনধর্মী বৈশিষ্ট্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়। কিন্তু উনিশ শতকের সত্তর ও আশির দশকে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের আগ পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পঞ্চায়েত প্রথা বহাল ছিল। আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে গঠিত রাজনৈতিক দলের উদ্ভবের ফলে ঐতিহ্যগত নির্বাচন পদ্ধতির রূপান্তর ঘটেছে। নির্বাচন এখন গণতান্ত্রিক সরকার-ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ত্রয়োদশ শতকে ইংল্যান্ডে সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া সূচিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন নির্বাচনী আইনের (যেমন ১৬৯৪ সালের ট্রিনিয়্যাল অ্যাক্ট ও ১৭১৬ সালের সেপ্টেনিয়্যাল অ্যাক্ট) মাধ্যমে এর নিয়মিতকরণ সম্পন্ন হয় এবং উনিশ শতকে পরপর প্রণীত সংস্কার বিলগুলোর আওতায় ভোটাধিকারের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়। ১৮৭২ সালে গোপন ব্যালট পদ্ধতি প্রবর্তিত হয় এবং অবশেষে ১৯২৮ সালে সর্বজনীন ভোটাধিকারের বিধান চালু হয়। অবশ্য বাংলায় নির্বাচনব্যবস্থা অনুরূপভাবে বিকশিত হয়নি। ঔপনিবেশিক শাসকরা নির্বাচিত স্থানীয় সরকার সংস্থা যেমন- গ্রামপ্রধান, পঞ্চায়েত, পাটোয়ারি, আমিন, মুনসেফ, থানাদার ও কাজির পদ বিলুপ্তির মাধ্যমে প্রাচীন নির্বাচন- ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করেন। এসব প্রতিষ্ঠান জনসমর্থন ও সহযোগিতার মাধ্যমে পরিচালিত হতো।

                মোহাম্মদ সোহেল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর