বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নবীজির মহানুভবতা

মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম

নবীজির মহানুভবতা

নবীজি (সা.) দয়া ও মহানুভবতার অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। কঠিন পরিস্থিতিতেও তাঁর মধ্যে ফুটে উঠত দয়া ও মহানুভবতা। শত্রু-মিত্র, মুসলিম-অমুসলিম, ধনী-গরিব সবার প্রতি তিনি মহানুভব ছিলেন। তাঁর উদারতা ও মহানুভবতায় আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। হাদিসে তাঁর মহানুভবতার বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনি ছিলেন প্রশস্ত হৃদয়-মহানুভব। সত্যবাদিতায় সবার আগে, নম্রতা আর কোমলতায় অনন্য, আচার-আচরণে অভিজাত। প্রথম যে তাঁকে দেখত ভয় করত। কিন্তু যখনই কেউ তাঁর সঙ্গে মিশত তাঁকে ভালোবাসত।’ তিরমিজি। নবীজি (সা.) কত মহানুভব ছিলেন তা এ ঘটনাগুলো থেকে কিছুটা আঁচ করা যায়। একবার জায়েদ নামে এক ইহুদি পাদরি নবী (সা.)-এর সঙ্গে একটি অগ্রিম কেনাবেচা করে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দু-তিন দিন আগেই এসে সে পণ্য পরিশোধের দাবি করে বসে। এমনকি চাদর টেনে নবী (সা.)-এর সঙ্গে বেয়াদবি করে। বিকৃত চেহারায় রূঢ় কণ্ঠে নবী (সা.)-এর দিকে তাকিয়ে বলে, হে মুহাম্মদ! আমি তোমাকে চিনি। তোমরা আবদুল মুত্তালিবের বংশধর, বড় টালবাহানাকারী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওমর (রা.)। নবীর সঙ্গে লোকটির এ অশিষ্ট আচরণ দেখে তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে তাকে ধমক দেন। কিন্তু রসুল (সা.)-এর মুখে ছিল হাসি। তিনি ওমর (রা.)-কে বলেন, ওমর! আমি ও এই ব্যক্তি তোমার থেকে অন্যরূপ আচরণ পাওয়ার হকদার ছিলাম। দরকার তো ছিল তুমি আমাকে সত্বর তার প্রাপ্য আদায় করার পরামর্শ দিতে আর তাকে কথায় ও আচরণে নম্রতা অবলম্বনের তাগিদ দিতে। এরপর তিনি ওমর (রা.)-কে প্রাপ্য পরিশোধের নির্দেশ দেন। এবং তাকে আরও ২০ সা বেশি দিতে বলেন, যা ছিল ওমর (রা.) কর্তৃক লোকটিকে ধমক দেওয়ার বদলা। মহানবী (সা.)-এর এ মহানুভবতা লোকটির ইসলাম গ্রহণের কারণ হয়। যাওয়ার পথে সে ওমর (রা.)-কে বলে, হে ওমর! আমি হচ্ছি ইহুদি পন্ডিত জায়েদ ইবনে সানা। আসলে লেনদেন আমার উদ্দেশ্য ছিল না, বরং মহানবীর ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা পরীক্ষা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কারণ শেষ নবীর অন্যতম গুণ হবে এই যে তাঁর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ক্রোধের ওপর প্রবল থাকবে, যতই রূঢ় আচরণ করা হবে তার ক্ষমা ততই বৃদ্ধি পাবে। অতএব ওমর! আমি যা চেয়েছি তা পেয়ে গেছি। এরপর তিনি নবী (সা.)-এর হাতে খালেসভাবে ইমান আনেন এবং তাঁর অঢেল সম্পদের অর্ধেক উম্মতের জন্য দান করে দেন। মুসনাদে আহমদ। আরেকবার নজদ-অভিমুখী এক অভিযানের সময় পথিমধ্যে দ্বিপ্রহর হলে সাহাবিরা একটি বিস্তীর্ণ বাগানের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। রসুল (সা.)ও একটি বাবুল বৃক্ষের ছায়ায় আরাম করছিলেন। আর তাঁর তলোয়ার বৃক্ষের ডালে ঝোলানো ছিল। এমন সময় এক বেদুইন-কাফির তলোয়ারটি টেনে নামায়। রসুল (সা.) ঘুম থেকে জেগে দেখেন তাঁর শিয়রে এই দুশমন তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে আছে এবং বলছে, আমার হাত থেকে তোমাকে এখন কে বাঁচাবে? রসুল (সা.) বলে ওঠেন, ‘আল্লাহ!’ এ কথা শুনে তার আত্মা কেঁপে উঠল। সে তলোয়ার কোষবদ্ধ করে বসে পড়ে। নবীজি তাকে কোনো শাস্তিই দেননি বরং ক্ষমা করে দেন। বুখারি। আল্লাহ আমাদের নবীজির এ ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার তৌফিক দান করুন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় দেওয়ার তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর