বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

১৯৫৪ সালের নির্বাচন

১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উভয় আইনসভায় নির্বাচনের বিধান প্রবর্তন করা হয়। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় ভোটাধিকার ও নির্বাচনী সংস্থাকে সম্প্রসারিত করা হয়। ১৯০৯ সালে সম্প্রদায় ও পেশার ভিত্তিতে নির্বাচন শুরু হয়। ১৯২০ সাল থেকে অনিয়মিতভাবে হলেও পৃথক নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয়, পৌরসভা ও জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন তখনো সর্বজনীন না হলেও সেখানে ব্যাপকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক আইন পরিষদে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পৃথক নির্বাচনব্যবস্থার ভিত্তিতে এটাই ছিল সর্বশেষ নির্বাচন।

সূচনালগ্ন থেকেই বাংলার জনগণ নির্বাচনে উৎসাহী হয়ে ওঠে। ঢাকা পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের বিধান প্রবর্তিত হয়। ভোটাধিকার সম্প্রসারণের প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল জনগণের দাবির ফল। কিন্তু প্রতিনিধিত্বশীল ব্যবস্থায় জনগণের আগ্রহ সত্ত্বেও পাশ্চাত্য ধাঁচের নির্বাচন বাংলায় কখনো সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর হয়নি। লক্ষণীয় যে ভারতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো ঔপনিবেশিক শাসকের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঔপনিবেশিক, সাম্প্রদায়িক বা গোষ্ঠী স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। তাই ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ রক্ষায় সরকার সর্বদাই নির্বাচনকে স্থানীয় অনুগত প্রভাবশালী মহল, বিশেষ করে জমিদারদের অনুকূলে প্রভাবিত করতে সচেষ্ট ছিল। ১৯৩৫ সাল অবধি পৌরসভা, স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি ও বোর্ডে নির্বাচিত ও মনোনীত উভয় ক্ষেত্রেই জমিদারদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এমনকি ১৯৩৭ সালের নির্বাচনেও তাদের প্রভাব বজায় ছিল। এরপর নির্বাচনের ইতিহাসে রাজনৈতিক মেরুকরণের ধারা লক্ষ্য করা যায়। ১৯২০ সাল পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ছাড়াই প্রার্থীরা ব্যক্তিগত ও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। এমনকি ১৯৩৭ সালের নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। ২৫০ আসনের মধ্যে ৮১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী (মুসলিম ৪৩, হিন্দু ৩৯) জয়ী হন। দলীয়ভাবে মনোনীতদের মধ্যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ৫২, মুসলিম লীগ ৩৯, কৃষক প্রজা পার্টি ৩৬ এবং বিভিন্ন উপদল অবশিষ্ট আসন লাভ করে। নির্বাচনের ফলাফলে প্রতীয়মান হয় প্রার্থীদের মধ্যে তখনো তেমন রাজনৈতিক মেরুকরণ ছিল না। পরবর্তী দশকে অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন হয়। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে কংগ্রেস ও  মুসলিম লীগের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরঙ্কুশভাবে পরাজিত করেন। প্রায় ৩০০ প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তার মধ্যে মাত্র আটজন (হিন্দু ৬, মুসলিম ২) নির্বাচিত হন। এভাবেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। পরবর্তী সব নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাফল্য ছিল একান্তই ব্যতিক্রম। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর হিন্দুদের ব্যাপকভাবে দেশত্যাগ, জমিদারি প্রথার বিলোপ এবং ১৯৫৬ সালে সর্বজনীন ভোটাধিকারের বিধান প্রবর্তনের ফলে বিভাগ-পূর্ব নির্বাচন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ ও জেলা বোর্ড নির্বাচনে তুলনামূলকভাবে নবীন ও অনাবাসিক আইনজীবীরা প্রাধান্য বিস্তার করেন।

মোহাম্মদ সোহেল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর