শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশের প্রতি ভালোবাসা নাগরিক কর্তব্য

মুন্সি জামিল উদ্দিন

আরবি প্রবাদ অনুযায়ী দেশকে ভালোবাসা ইমানের অংশ। রসুল (সা.) তাঁর জন্মভূমি মক্কাকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন মদিনা রাষ্ট্রকে। সবারই জানা, মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর রসুল (সা.) পিতৃভূমি মক্কার কথা ভোলেননি। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর মদিনাকে নিজের দেশ হিসেবে গণ্য করে মদিনার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মদিনার সব নাগরিককে নিয়ে এর সুরক্ষার জন্য অনেক যুদ্ধও করেছেন তিনি। ঐতিহাসিক মদিনা সনদের অন্যতম মৌলিক ধারা ছিল শত্রু কর্তৃক মদিনা আক্রান্ত হলে এখানকার সব নাগরিক ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও চাহিদার উপযোগী ভূখন্ডে তার জন্মের ব্যবস্থা করেছেন বলে আমরা মানুষ সারা বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী হয়েছি। যে যে অঞ্চলের অধিবাসী তাকে সে অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বিচরণ করার লক্ষ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে সে অঞ্চল তাকে স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে দান করা হয়েছে। যতক্ষণ একে অন্যকে অত্যাচার করার মাধ্যমে সে স্বভাবজাত স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া না হয় ততক্ষণ সে অঞ্চলটি তার জন্য স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি স্বাধীন ভূখন্ডে র স্বাধীনতার প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপত্তা। সেজন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন মক্কাকে নিজ নগর হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তখন সেই ভূখন্ডের জন্য প্রথম যে দোয়াটি করেছিলেন তা হলো নিরাপত্তার দোয়া।

এ দোয়া সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহিম বলেছিল হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীর তুমি নিরাপত্তা দান কর।’ সুরা বাকারা আয়াত ১২৬। এ নিরাপত্তার অর্থ ব্যাপক। একটি অঞ্চলের চারদিকে শুধু সেনা সদস্যদের পাহারায় রত থাকার নামই নিরাপত্তা নয় বরং একই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রতিটি পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে নিরাপদ থাকার নামই নিরাপত্তা, অর্থাৎ সন্তান মা-বাবার কাছে, মা-বাবা সন্তানের কাছে, স্ত্রী স্বামীর কাছে, স্বামী স্ত্রীর কাছে, ছাত্র শিক্ষকের কাছে, শিক্ষক ছাত্রের কাছে, শ্রমিক মালিকের কাছে, মালিক শ্রমিকের কাছে, শাসক শাসিতের কাছে, শাসিত শাসকের কাছে নিরাপদ থাকা মানেই নিরাপত্তা।

এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঝুঁঁকি মনে করলে তখন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার মিশনে লিপ্ত হয়ে যায়, অন্যদিকে এই ফাঁকে আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়ামত স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়ে যায়। স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য যা খুবই জরুরি তা হলো পারস্পরিক জুলুম পরিহার। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি এসব জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা পারস্পরিক জুলুম শুরু করে দিয়েছে।’ সুরা ১৮ আয়াত ৫৯। রসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর মক্কার অধিবাসীদের মধ্যে একে অন্যকে ঝুঁঁকি মনে করার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়া থেকে দূরে রাখা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমন করার নিমিত্ত নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্পষ্ট ঘোষণা দেন, ‘আজ কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ অর্থাৎ অতীতের ঘটনা কেন্দ্র করে অনৈক্য সৃষ্টি করে এ ভূখন্ডের ক্ষতিসাধন ও অর্জিত স্বাধীনতার ক্ষতি হয় সে রকম কোনো কাজ করা যাবে না।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর