মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীনতাযুদ্ধসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন, অভিবাদন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর দুই ব্রিগেডিয়ার ও এক জেনারেলের সঙ্গে একমাত্র বাঙালি হিসেবে হানাদার সেনাপতি টাইগার নিয়াজির গুহায় গিয়েছিলাম। সেদিন কল্পনাও করিনি স্বাধীন দেশে এত দিন বেঁচে থাকব। কোনো বড় কাজ করে বেশিদিন বাঁচতে নেই। তাতে অবহেলার শিকার হতে হয়। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সমগ্র বাঙালি জাতিকে যেমন দিশাহারা এতিম করা হয়েছিল, তেমনি আমি এবং আমার পরিবার হয়েছে নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত। রাস্তাঘাটে এখনো সাধারণ মানুষ কমবেশি সম্মান করে, কৃতজ্ঞতা জানায়, সাহায্যও করে। কিন্তু যাদের কৃতজ্ঞ থাকার কথা তারা অনেকেই কিছুই করে না। এবার ১৬ ডিসেম্বর ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষ। সকালে প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজে যাইনি। কিন্তু সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গিয়েছিলাম। সেখানেও বোধহয় যাওয়া হতো না। ১৪ তারিখ ১১টা-সাড়ে ১১টার দিকে সুভাষ সিংহ রায়ের টেলিফোন পাই। সুভাষ এক অসাধারণ মানুষ। ’৯০-এ দেশে ফিরে সুভাষকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনার সহকারীদের মধ্যে পেয়েছিলাম। চটপট কথা বলত, লেখালেখি করত অবিরাম। আবার আমার খুবই  স্নেহের প্রিয় মমতা হেনা লাভলীকে বিয়ে করেছে। লাভলী এখন মহিলা কোটায় একজন সংসদ সদস্য। ফোন ধরেই বলেছিল, ‘স্যার, মুজিব শতবর্ষের দাওয়াত পেয়েছেন তো?’ বলেছিলাম, পেয়েছি। ‘মুজিব শতবর্ষের সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।’ তিনিও বললেন, ‘স্যার, দাওয়াত পেয়েছেন?’ জানি না, কীভাবে যেন দাওয়াতপত্র পেয়েছিলাম। কে বা কারা দাওয়াতপত্র পৌঁছে দিয়েছিল তার বিন্দুবিসর্গও জানতাম না। এর আগে সেনাকুঞ্জে সেনা দিবসের দাওয়াত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে কেউ এসে দেখা করে কথা বলে দিয়ে যেত। যেদিন থেকে মুজিব শতবর্ষ গণনা হয়েছিল ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কি এক ডক্টর কার্ড নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলাম, বুড়ো বয়সে একা যাব না। তারা বেগম সাহেবার জন্যও কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং নিয়ে বসিয়ে ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পেছনে প্রথম সারিতে। এবার অনুষ্ঠানে যাওয়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না। কারণ শরীর খারাপ। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই মাস দুই আগে করোনা হয়েছিল। কিন্তু সুভাষ সিংহ রায় এবং অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর অনুরোধে রাজি হয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে কামাল আবদুল নাসের বলেছিলেন, করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে। আমি সকালেই লোক পাঠাচ্ছি। ১৫ তারিখ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রিয় ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে গিয়েছিলাম। কেবিন ব্লকের ৩১২ ভিআইপি রুমে তিনি ছিলেন। আমিও এবার তাঁর নিচতলা ২১২-তে প্রথম এবং করোনায় আক্রান্ত হলে ৫১২-তে কাটিয়ে এসেছি। ২১১, ২১২ থেকে সব তলারই ১১, ১২ ভিআইপি রুম। শুধু তলা অনুসারে ২, ৩, ৪, ৫, ৬ এই ব্যবধান। আমি যে কবার হাসপাতালে গিয়েছি প্রতিবারই ওবায়দুল কাদের আমাকে দেখতে গেছেন। শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। মেডিকেল বোর্ড বসেছিল। তাই অনেকক্ষণ বসে থেকেও দেখা হয়নি, চলে এসেছিলাম। বাসায় ফিরেই শুনি কভিড পরীক্ষার জন্য লোক এসেছিল। ফোন করলেই তারা চলে আসবে। বাসায় ফিরে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট দুটি মেয়ে এসে হাজির। মিষ্টি খেয়ে নমুনা নিয়ে ছবি তুলে তারা চলে যায়। রাতে করোনার রিপোর্ট আসে। ফল নেগেটিভ।

১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানের কার্ড উল্টে দেখি নির্দেশনা- মোবাইল ফোন থেকে কলম পর্যন্ত সবকিছু নেওয়া বারণ। লোকজন মনে করে আমি খুবই সাহসী। কিন্তু আমি যে আচার-আচরণে কতটা ভীতু তা অনেকেই জানেন না। যে কারণে মোবাইলসহ কলম পর্যন্ত নিইনি। ভিতরে ঢুকেই কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে দেখা। তার মধ্যে একজন সাবেক ছাত্রনেতা এনামুল হক শামীম ’৯০-এ যখন দেশে ফিরি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। আমাকে স্মৃতিসৌধের গেটে এক বিশাল সংবর্ধনা দিয়েছিল। যেখানে সাভারের নেতা শামসুজ্জোহা খান মজলিশ এবং গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ছিল। অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রথম কাতারে আসন পেলাম। ডান পাশে একসময়ের বঙ্গবন্ধুর পিএস মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন। বাঁ পাশে পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। তাঁর বাঁয়ে আলাদা চেয়ার নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বসেছিলেন। তারপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জনাব শেখ সেলিম, তারপর সংসদ সদস্য আমীর হোসেন আমু। ডানে শাজাহান খান, কিন্তু চেয়ারে নাম ছিল ফরাস উদ্দিনের। শাজাহান খান প্রথমে বাঁয়ে গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীকের চেয়ারে বসেছিলেন। গোলাম দস্তগীর এলে তাঁকে অন্য চেয়ারে বসতে বললেও তিনি বসেননি। কিছুক্ষণ পর অনেক বলেকয়ে শাজাহান খানকে দস্তগীরের আসন থেকে তুলে ফরাস উদ্দিনের আসনে বসানো হয়। শাজাহান খানের ডানে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, তাঁর ডানে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আমি পৌঁছেছিলাম ৩টা ২০ মিনিটের দিকে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ৪টায়। জানি না কী কারণে ৪টার জায়গায় ৪টা ২০-২৫ মিনিটে শুরু হয় জাতীয় সংগীত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শপথবাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে। খুব অল্প সময়ের অনুষ্ঠান। মঞ্চ ছিল বড় বেশি দূরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে যে শপথবাক্য পাঠ করেন আমরা যারা অনুষ্ঠানে ছিলাম তাদের থেকে ৭০-৮০ মিটার দূরে। দ্বিতীয় অনুষ্ঠান আলোচনা সভা। সেটাও প্রথম সারির মেহমানদের থেকে ৬০-৭০ ফুট ব্যবধানে। অনুষ্ঠানে গিয়ে সামনাসামনি বসে দেখার চাইতে ঘরে বসে টেলিভিশনে দেখলেও মনে হয় অনেক বেশি সান্নিধ্য পাওয়া যেত। তবু বলা যায় চমৎকার রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। মনে হয় ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি। তবে রাজনৈতিক তেমন সম্পৃক্ততা চোখে পড়ল না। সবকিছুই প্রশাসনিক। অবাক হলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শপথবাক্য পাঠের মঞ্চে লেখা ছিল ‘মুজিবর্ষ’। অথচ হওয়ার কথা ‘মুজিববর্ষ’। এত বড় মারাত্মক ভুল কারও চোখে পড়েনি! মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সূচনায় ১০ জানুয়ারি ২০১৯-এ যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রেহানা, জয় এদের পেছনের সারিতে যেভাবে আসন ছিল প্রায় একই রকম আসনবিন্যাস ছিল শতবর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে। আমি যেখানে বসেছিলাম তার প্রায় ৩০-৪০ ফুট সামনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, তাঁর বাঁয়ে বোন রেহানা, তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, মান্যবর অতিথি মহান ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আল্লাহর কি অপার মহিমা আমি যখন নির্বাসনে এই রামনাথ কোবিন্দকে প্রায় ২০-২৫ বার দেখেছি। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে পরাজিত করে জনতা পার্টি ক্ষমতায় এলে জর্জ ফার্নান্দেজ, ওড়িশার মুকুটহীন সম্রাট বিজু পট্টনায়েক, ইন্দিরাজিকে যিনি পরাজিত করেছিলেন সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজ নারায়ণ, জনতা পার্টির সভাপতি পরে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শেখর, মধু লিমাই ও সুরেন্দ্র মোহন এমপির বাড়িতে কতবার দেখেছি তার কোনো হিসাব নেই। সত্যিই আল্লাহর মহিমা বোঝা বড় কঠিন। শপথবাক্য পাঠ শেষে বিরতির সময় যখন চুপচাপ বসেছিলাম তখন নরসিংদীর এক মেজর জেনারেল মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক জিজ্ঞাস করছিলেন, শপথ পাঠটি কেমন হলো? বলেছিলাম, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। সরাসরি পেছনে বসেছিলেন এসপি মাহবুব বীরবিক্রম বরিশালের আমাদের প্রিয় নেতা সুলতান শরীফের বন্ধু। সুলতান ভাই কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করেছিলাম। এসপি মাহবুব বলেছিলেন, মোটামুটি ভালো।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে কেন প্রধান অতিথি করে মহান ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে বিশেষ অতিথি করা হয়েছিল ব্যাপারটা মাথায় আসেনি, এখনো আসছে না। যাক, ওসব নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। অনুষ্ঠানটি ভালো হয়েছে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ছাড়া, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িতরা ছাড়া কেউ অংশগ্রহণ করেনি। এখানে মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি ততটা সফল হতে পারেনি। ইদানীং রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেলে তেমন কিছু মনে হয় না। ভালো খারাপ কিছুই লাগে না। কিন্তু কেন যেন সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিল মহান আল্লাহর কি কুদরত ৫০ বছর আগে ১৬ ডিসেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনটিও বৃহস্পতিবার। ১৮ ডিসেম্বর শনিবার পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে। সেবারও ছিল শনিবার, এবারও শনিবার। কেন যে একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ একবারের জন্যও শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নাম উচ্চারণ করেননি, শ্রদ্ধা নিবেদন করেননি। অন্য সময় হোক বা না হোক সুবর্ণজয়ন্তীতে তখনকার ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান মানেকশ এবং সোহারওয়ার্দী উদ্যানে যার কাছে নিয়াজি আত্মসমর্পণ করেছিল সেই জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নাম উচ্চারণ করা উচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রীকে খুবই ভালোবাসি। কিন্তু তিনি দুবার ‘পাক হানাদার’ বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন আলোচনা করেন বক্তৃতা করেন তখন সব সময় বেশ শঙ্কায় থাকি তিনিও কখনো পাক হানাদার বলে ফেলেন কি না। সত্যিকার অর্থে পাকিস্তান হানাদাররা কখনো পাক না। হানাদার কখনো পাক হয় না, হানাদার সব সময়ই নাপাক। আল্লাহ পাক, রসুল পাক, পবিত্র কোরআন পাক। যাক, এসব বলে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু কেন যেন বারবার মনে হচ্ছিল ১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় নিয়াজির সঙ্গে যখন কথা হয় তখন মিত্রবাহিনীর পক্ষে জেনারেল নাগরা, ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজি ও ব্রিগেডিয়ার ক্লের ছিলেন, একমাত্র বাঙালি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি ছিলাম। কিন্তু সুবর্ণজয়ন্তীতে কেউ একবারের জন্যও মনে করেনি সেদিন আমি না থাকলে শুধু ভারতীয়রাই নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ করিয়েছে এমনটা আলোচনায় আসত। জেনারেল জ্যাকব তো বেশ কয়েকবার বলতে চেষ্টাও করেছেন মুক্তিবাহিনী নয়, মিত্রবাহিনী নয়, ভারতীয় বাহিনী ঢাকা দখল করেছে। কিন্তু সত্যটা তা নয়। সম্ভব হলে ঢাকা দখলের কথা ছিল আগরতলা থেকে আসা মিত্রবাহিনীর। সেজন্য তাদের বেশ শক্ত-সামর্থ্য করে সাজানো হয়েছিল। তাদের ট্যাংক ছিল, সাঁজোয়া বহর ছিল, আর্টিলারি সাপোর্ট ছিল। আর উত্তর দিক থেকে নেমে আসা বাহিনীর কিছুই ছিল না। সর্বক্ষণ চলাচলের জন্য শুধু একটা হেলিকপ্টার ছিল। প্রয়োজনে আরও দু-একটা হেলিকপ্টার পাওয়া যেত। অথচ আমরা উত্তর দিক থেকে এগিয়ে আসা দল ঢাকা দখল করেছিলাম। মিত্রবাহিনীকে একমাত্র সাভার ছাড়া আর কোথাও হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুখামুখি কোনো যুদ্ধ করতে হয়নি। কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে রাত-দিন যোগাযোগ রেখে ১০ ডিসেম্বর ছত্রীবাহিনী নামানো হয়েছিল। খাবার প্লেট থেকে দু-একটা ভাত পড়ে যাওয়ার মতো ছত্রীবাহিনীর একটি গাড়ি, দুজন সেনা শহীদ এবং সামান্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। আমি না হয় নগণ্য, কিন্তু যাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি সেই বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকারের নামও আসেনি, প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী কিংবা সেক্টর কমান্ডার শফিউল্লাহ, জিয়াউর রহমান ও অন্যদের। কেন যে আমরা কোনো ব্যাপারেই সবাই এক হতে পারি না! স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও পারলাম না। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের এক হওয়া প্রয়োজন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে জিয়াউর রহমান বীরউত্তম জাতির পিতা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- এটা কোনো ভালো কথা নয়। রাষ্ট্রের পিতৃপরিচয় ঠিক থাকতে হয়। বাংলাদেশের পিতা সকাল-সন্ধ্যা, রাত-দিন সব সময়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান ভারতবাসীকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়ানোয় অভিনন্দন জানাই। পুরনো বছর পেরিয়ে নতুন বছর আমাদের জন্য শুভ হোক।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর