বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়

অধঃপতিত অবস্থার অবসান হোক

স্থানীয় সরকারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার মচ্ছব শুরু হয়েছে। পাঁচ-ছয় বছর আগেও স্থানীয় সরকারের এই ইউনিটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কারও নির্বাচিত হওয়া ছিল প্রায় অকল্পনীয়। এখন তা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী সংকট শুরু হয়েছে দুটি কারণে। প্রথমত, দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সরকারি দলের প্রার্থীর বাইরে কারোর নির্বাচন করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ পদ্ধতির ফলে এলাকার নির্দলীয়, সৎ, সুশিক্ষিত সমাজসেবীরা নির্বাচন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ দলীয় ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেশিশক্তির দিক থেকে যারা সবল তারাই কেবল নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন। পরিণতিতে দেখা দিচ্ছে প্রার্থী সংকট। পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ৭৪৪ ইউনিয়ন পরিষদে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৫৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপে ১৪১, দ্বিতীয় ধাপে ৩৫৭, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯, চতুর্থ ধাপে ২৯৫ আর পঞ্চম ধাপে ১৯৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে তাদের ‘অসামান্য’ জনপ্রিয়তার প্রমাণ রেখেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৩৫৩, সংরক্ষিত সদস্য ৩৫৫ ও সাধারণ সদস্য ৮৪৭ জন রয়েছেন। স্মর্তব্য, প্রথম ধাপে ৩৬৫, দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩ আর তৃতীয় ধাপে ৯৯২ ইউপিতে ভোট হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৮৪০ এবং পঞ্চম ধাপে ৭১৪ ইউপিতে ৫ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞদের মতে কারসাজি ও প্রভাব খাটিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন প্রার্থীরা। তারা জনপ্রতিনিধি হতে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ শুধু নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করছেন। আবার অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বীকে টাকা দিয়েও নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশের রাজনীতি কতটা অধঃপতিত অবস্থার শিকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর মহাবিজয় তারই প্রমাণ। সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে এদের অনেকে নিজেদের জামানত বজায় রাখতে পারতেন কি না তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়।

সর্বশেষ খবর