রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

লঞ্চে অগ্নিকান্ড

বিপুল প্রাণহানির দায় নির্ধারিত হোক

আমাদের দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চের ব্যবসা যে খুবই জমজমাট তা একই মালিকের মালিকানাধীনে সিরিজ আকারে একের পর এক লঞ্চ চালুতে অনুমান করা সম্ভব। লঞ্চমালিকদের সম্পদ ফুলে-ফেঁপে বাড়লেও দেশের সিংহভাগ লঞ্চে নেই যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা। অতিরিক্ত যাত্রীবহন লঞ্চমালিকদের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যে কারণে লঞ্চডুবিতে প্রাণহানি প্রতি বছর নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। লঞ্চে প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেট, বয়া এবং অন্যান্য উপকরণ না থাকায় কোনো কারণে লঞ্চ ডুবলেই অসহায়ভাবে মরছে বিপুলসংখ্যক যাত্রী। যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা থাকারও কথা। বৃহস্পতিবার রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ নামের বরগুনাগামী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি ঘটেছে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা না থাকায়। অগ্নিকান্ডে শুক্রবার পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৩৯ জনের পোড়া লাশ। আগুনে পুড়ে বা অন্যভাবে আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। অগ্নিকান্ডের পর নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ৬০ জন। আশঙ্কা করা হচ্ছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার ভয়ে যারা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন তার মধ্যে নারী, শিশুসহ একাংশের সলিলসমাধি ঘটেছে। লঞ্চের মালিক অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অবশ্য ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করেননি। তার আশঙ্কা অমূলক বলে উড়িয়ে না দিয়েও প্রশ্ন করা যায়- লঞ্চটিতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টিও কি ষড়যন্ত্রমূলক? অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকলে ভয়াবহ বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানো যেত। তা না থাকার পেছনে যে বোধগম্য ‘ষড়যন্ত্র’ জড়িত ছিল তা হলো বাড়তি খরচ না করা। আর সেজন্যই এত মানুষকে প্রাণ দিতে হলো। আমরা মনে করি লঞ্চে অগ্নিকান্ডে হতাহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে সরকার সবকিছু করবে। এ বিষয়ে লঞ্চমালিকের দায় নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি। লঞ্চমালিকদের কাছে যাত্রীদের জীবন জিম্মি হয়ে থাকবে এমন পরিবেশ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর