সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিজয় উৎসব পালনে দিল্লিতে তিন দিন

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

বিজয় উৎসব পালনে দিল্লিতে তিন দিন

১১ ডিসেম্বর, শনিবার সকালে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তার টেলিফোন। জানালেন, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবার দিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ৫০তম বিজয় উৎসব পালন করছে। সেই অনুষ্ঠানে আমাকে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবিনয়ে বললেন, ১৪ তারিখেই ফ্লাইট, প্রস্তুতির জন্য সময় খুবই কম। তাই টেলিফোনে আমি সম্মতি দিলে তারা আনুষ্ঠানিক দাওয়াতপত্র পাঠাবেন। আমাদের বিজয় উৎসব, দিল্লিতে ভারত সরকারের পক্ষে বিএসএফ কর্তৃক পালন, সেটি হবে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের অসাধারণ এক এক্সিভিশন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সস্ত্রীক উপস্থিত থাকতে পারাটা অনেক বড় সম্মান ও গৌরবের। প্রস্তুতির জন্য মাঝখানে সময় মাত্র দুই দিন। শনিবার বিকালে অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ করে ১২ ডিসেম্বর সকালেই মূল কপি যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে জমা দিলাম। বর্তমান সময়ে যে কোনো বিদেশ যাত্রার বাড়তি ঝামেলা ৪৮ ঘণ্টা আগে কভিড-১৯ পরীক্ষা এবং তার ফল নেগেটিভ হলেই কেবল ভ্রমণ করা যাবে। শুধু তাই নয়, নেগেটিভ সনদ পাওয়ার পর সেটি আবার নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ কাজ বটে। ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে ভিসা ও টিকিট হয়ে গেল। ১৪ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিগো বিমানে ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লির ফ্লাইট। যথারীতি চেক-ইন ও ইমিগ্রেশন শেষ করে আমি ও আমার স্ত্রী ইয়াসমিন বহির্গমন লাউঞ্জে পৌঁছানোর পর খুঁজতে লাগলাম আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আর কারা যাচ্ছেন। কাউকে তেমন দেখছি না। হঠাৎ করে পেছন থেকে ঘাড়ে মৃদু টোকা পড়ায় ফিরে দেখি কর্নেল সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। পরস্পরের প্রতি একই প্রশ্নের উত্তরে বুঝলাম তিনিও একই অনুষ্ঠানের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন। জানালেন, ভাবি নয় তিনি একাই যাচ্ছেন। ভাবি যাচ্ছেন না শুনে ইয়াসমিন কিছুটা মন খারাপ করলেও দুজনে এই ভেবে খুশি হলাম যে, অন্তত একজনকে সঙ্গী হিসেবে পাওয়া গেল। এক ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকা থেকে ছেড়ে ইন্ডিগো ৩৫ মিনিটে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে কলকাতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামল। কলকাতায় দুই ঘণ্টা বিরতির পর অন্য ফ্লাইটে দিল্লি যাত্রা। বিমান থেকে নামতেই দেখি স্থানীয় বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ডেপুটি কমান্ড্যান্ট লোকজন নিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উপস্থিত। আমাকে ও ইয়াসমিনকে আলাদাভাবে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো ও ছবি তোলা পর্ব শেষ হওয়ার পর কভিড প্রটোকল এবং ইমিগ্রেশনের জন্য পাসপোর্টসহ অন্য কাগজপত্র ডেপুটি কমান্ড্যান্ট নিলেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে ১০ মিনিটের বেশি লাগল না। অবতরণের ১৫ মিনিটের ভিতর নিচে এসে দেখি বেল্টে আমাদের লাগেজ এসে গেছে। কর্নেল সাজ্জাদের সঙ্গে আফসোস করলাম এই বলে যে, একটা প্রাদেশিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের লাগেজ ১৫ মিনিটের মধ্যে চলে এলো আর আমাদের রাজধানী ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের লাগেজ দিল্লিগামী ফ্লাইটে দেওয়ার জন্য বিএসএফের লোকজন নিয়ে গেল। ডেপুটি কমান্ড্যান্ট আমাদের নিয়ে ভিআইপি লাউঞ্জে বসলেন। গরম পানি, চা, কফি আর কলকাতার সব রকমের মনিটর সমাহার। আপ্যায়নের পালা চলতে থাকল দিল্লিগামী প্লেনে ওঠার আগ পর্যন্ত। ভিআইপি লাউঞ্জে পরিচয় হলো ঢাকার স্মৃতি কালচারাল সেন্টারের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম হিরোর সঙ্গে। এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী শিল্পীকে নিয়ে তিনি একই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন। দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেনের চাকা যখন নামছে তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি স্থানীয় সময় রাত ১১টা। আমাদের বহনকারী বিমানটি বোডিং ব্রিজে না গিয়ে টারমিনালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল। সিঁড়ি বেয়ে প্লেন থেকে নামতেই দিল্লির কনকনে ঠান্ডা বাতাসের অভ্যর্থনা পেরিয়ে টারমিনাল ভবনে ঢুকতেই দেখি ইউনিফরম পরা বিএসএফের অফিসার ও জওয়ানরা অপেক্ষায় আছেন। তারা দ্রুত লাগেজ নিয়ে আমাদের গাড়িতে বসালেন। আমি আর ইয়াসমিন এক জিপে এবং কর্নেল সাজ্জাদ অন্য একটা কারে, আর সাংস্কৃতিক দলের জন্য আলাদা বড় গাড়ি। বিমানবন্দর থেকে দিল্লি শহর পেরিয়ে নিরিবিলি ছাওলা বিএসএফ ক্যাম্পে যখন পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে ১২টা। ক্যাম্পের ডেপুটি কমান্ড্যান্ট অন্য অফিসারসহ অপেক্ষা করছেন আমাদের নিয়ে একসঙ্গে রাতের খাবার খাবেন। আমরা মনে মনে কিছুটা বিব্রত, এত দেরিতে রাতের খাবারের জন্য আমাদের অপেক্ষায় আছেন। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে বের হতেই দেখি ছাওলা বিএসএফ ক্যাম্পের কমান্ড্যান্ট আমাদের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাতে এসেছেন। আলাপ, কুশলবিনিময় ও চা-কফি শেষে তিনি বিদায় নিলেন। লিয়াজোঁ অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে আমি আর ইয়াসমিন ছাওলা ক্যাম্প ঘুরে দেখতে বের হলাম। দিল্লি শহর থেকে কিছুটা বাইরে হরিয়ানার দিকে একেবারেই কোলাহলহীন মনোরম পরিবেশে সুন্দর সাজানো গোছানো বিশাল এলাকা নিয়ে ক্যাম্পের জায়গা। ভিতরেই রয়েছে বড় গলফ মাঠ। শীতের সকালে সোয়েটার ও কানটুপি জড়িয়ে কয়েকজন গলফারকে দেখলাম খেলছেন। দেখতে সবুজ কার্পেটের মতো ছোট্ট সমান সুন্দর ঘাসের বড় বড় মাঠ, একটার পর একটা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পোস্টার, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের নানা দৃশ্যসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির ছবি নিয়ে বড় বড় পোস্টার লাগানো। হয়েছে মূল ফটকসহ আমরা যেখানে আছি সেই অফিসার মেসের সামনের দিকে। অফিসার মেসের সামনে সবুজ খোলা মাঠের লনে শীতের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে বিএসএফের অফিসারদের সঙ্গে বসে চা-কফিসহ নানা গল্প। আন্তরিকতায় ভরা সবকিছু ছিল মনোমুগ্ধকর ও মায়াবী আকর্ষণীয়। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় নতুন দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সুষমা স্বরাজ ভবনে ছিল মূল বা প্রধান অনুষ্ঠান। বিশাল হলরুম সামনে বড় মঞ্চ। হলভর্তি মানুষ প্রধান অতিথি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। হোস্ট বিএসএফের মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংহ। অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বিজয় উৎসব’। বাংলাদেশের বিজয় উৎসব রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করছে ভারত। পৃথিবীতে বোধহয় এটাই একমাত্র উদাহরণ যে, অন্য একটি দেশের বিজয় উৎসব ঘটা করে পালন করছে প্রতিবেশী আরেকটি রাষ্ট্র। বিএসএফের অনেক সিনিয়র অফিসার উপস্থিত হয়েছেন যারা একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শুধু আমি আর কর্নেল সাজ্জাদ। সবাই এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে এমনভাবে আলাপ করছেন যেন কতদিনের পরিচয়, আপনজন। কিছু সময়ের জন্য মনে হলো আমরা সবাই যেন একাত্তরে ফিরে গেলাম। অন্য রকম এক পরিবেশ। কারও কারও চোখে জল এসে গেল, কত কঠিন সময় ছিল একাত্তর। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিএসএফের সাবেক ডিআইজি কলকাতার খাস বাঙালি এসকে মিত্র সব ভুলে জড়িয়ে ধরে বললেন, দাদা আপনি আসবেন শুনে খুব খুশি হয়ে কলকাতা থেকে এসেছি। ইয়াসমিনকে সালাম জানিয়ে কলকাতা যেতে বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন। এসকে মিত্রের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই আমার পরিচয়। অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রামাণ্য চিত্র। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অংশবিশেষ, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তখন মনে হচ্ছিল ঢাকার কোনো অনুষ্ঠানে আছি বোধহয়। প্রমাণ্য চিত্রের পর আমিনুল ইসলাম হিরোর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক দলের উপস্থাপনা। মাত্র ১৫ মিনিটে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের চলমান সোনালি অধ্যায়কে নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে যেভাবে তুলে ধরলেন তা এক কথায় বিস্ময়কর ও তুলনাহীন। উপস্থাপনার শেষ পর্যায়ে পিনপতন নীরবতা ভেঙে করতালি যেন আর শেষ হয় না। পাশে উপবিষ্ট ভারতীয় অফিসারদের প্রশংসায় মনটা যেন একদম ভরে গেল। তারপর ১৫ মিনিট ছিল দিল্লির বিখ্যাত ভারত নাট্যদলের অসাধারণ উপস্থাপনা। স্মৃতিচারণা পর্বে কর্নেল সাজ্জাদ ও এসকে মিত্র একাত্তরের চমৎকার কিছু বর্ণনা দিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিএসএফের অগ্রণী ভূমিকার অবিস্মরণীয় স্মৃতিকথায় সবাই আবেগ আপ্লুত ছিলেন। একাত্তরে ২৫ মার্চের পর ভারতের পক্ষে বিএসএফই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং প্রশিক্ষণ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে শুরু করে। বিএসএফের ব্রিগেডিয়ার বিসি পান্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে একাত্তরের ৩১ মার্চ আগরতলায় আসেন। ৪ এপ্রিল সিলেটের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধরত বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডারদের যে সমন্বয় সভা হয় তাতে ব্রিগেডিয়ার পান্ডে উপস্থিত হয়ে সব রকমের সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর পর্যন্ত বিএসএফ ২ হাজার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন করে। আরও ৯৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ চলমান অবস্থায় ৭ মে বিএসএফের কাছ থেকে সব দায়িত্ব ভারতের সেনাবাহিনী গ্রহণ করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চূড়ান্ত সামরিক অভিযানের জন্য একাত্তরের ১৫ অক্টোবর বিএসএফের ২৩টি ব্যাটালিয়নকে ভারতের সেনাবাহিনীর অপারেশনাল কমান্ডের অধীনস্থ করা হয়। যুদ্ধে ১২৫ জন বিএসএফ অফিসার ও জোয়ান নিহত এবং ৩৯২ জন আহত হন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সম্পর্ককে অবলম্বন করে দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আজ দুই দেশের শান্তি, সংহতি, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। প্রয়োজনের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু, ভারতের কাছ থেকে তার নিদর্শন একাত্তরে পেয়েছি। ভারতের সরকার ও বিএসএফসহ সশস্ত্র বাহিনীর অসাধারণ ত্যাগের কথা আমাদের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। জাতিগত এবং ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও আদর্শগত মেলবন্ধনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটা বিশেষ জায়গা রয়েছে, যার সংবেদনশীলতায় দুই দেশের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দিল্লিতে বিএসএফ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন বলে দেয় দুই দেশের সম্পর্ক বর্তমানে দৃষ্টান্তমূলক উচ্চতায় উঠেছে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর