বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

ন্যায়ের আদেশকারী ও অন্যায় থেকে বিরত থাকার মরতবা

আবদুর রশিদ

ন্যায় এবং অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য অন্তহীন। এ দুটি পরস্পরবিরোধী। ন্যায়ের পথে যারা তারা আল্লাহর রহমতের অধিকারী হয়। পক্ষান্তরে যারা অন্যায়ের পক্ষে তাদের জন্য আখিরাতের জীবনে রয়েছে কঠিন শাস্তি। হজরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। নতুবা অবিলম্বে আল্লাহ তোমাদের ওপর তাঁর আজাব নাজিল করবেন। তখন তোমরা তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তা কবুল করবেন না।’ (মিশকাত, তিরমিজি)। জনৈক ব্যক্তি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমি দীনের দাওয়াতি কাজ করতে চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ মর্যাদায় পৌঁছেছ? আগন্তুক বললেন, হ্যাঁ, আশা তো করি। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, যদি তুমি মনে কর কোরআন মাজিদের তিনটি আয়াত থেকে তোমার অপমানিত হওয়ার কখনো আশঙ্কা নেই তাহলে অবশ্যই তুমি দীনের দাওয়াতের কাজ করতে পারবে। সেই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, আয়াত তিনটি কী? ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, প্রথম আয়াতটি হচ্ছে ‘তোমরা কি লোকদের উত্তম কাজের নির্দেশ দিচ্ছ আর নিজেদের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যাচ্ছ?’ (সুরা বাকারা আয়াত ৪৪)। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, তুমি কি এ আয়াতের ওপর উত্তমরূপে আমল করেছ? তিনি বললেন, না। দ্বিতীয় আয়াতটি হচ্ছে ‘তোমরা কেন এমন কথা বল যা নিজেরা কর না?’ (সুরা সাফ আয়াত ২)। এ আয়াতের ওপর কি তুমি যথাযথ আমল করেছ? তিনি বললেন, না করিনি। তৃতীয় আয়াতটি হচ্ছে ‘শুয়াইব (আ.) নিজ জাতির উদ্দেশে বলেছিলেন, আমি যেসব মন্দ কাজ করতে তোমাদের নিষেধ করছি সেসব কাজ আমি নিজে করব এমন উদ্দেশ্য আমার নেই। বরং এমন কাজ থেকে আমি দূরে থাকব এবং তোমার আমার কথা ও কাজে কোনোরূপ ব্যতিক্রম দেখতে পাবে না।’ (সুরা হুদ আয়াত ৮৮)। ইবনে আব্বাস (রা.) জিজ্ঞেস করলেন এ আয়াতের ওপর কি তুমি আমল করেছ? তিনি বললেন, না। আব্বাস (রা.) বললেন, যাও নিজেকে সৎকাজের আদেশ দাও এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখ। ভালো কাজের আদেশ দান ও মন্দ কাজের নিষেধ করা মুসলিমের ওপর আল্লাহর নির্দেশ। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকতে হবে যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। তারাই হবে সফলকাম। (সুরা আলে ইমরান আয়াত ১০৪।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই এমন এক উত্তম দল যাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা ভালো কাজের আদেশ কর ও মন্দ কাজের নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর; আর যদি গ্রন্থপ্রাপ্তরা বিশ্বাস স্থাপন করত তবে অবশ্যই তাদের জন্য মঙ্গল হতো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমরা মুমিন এবং তাদের অধিকাংশই দুষ্কর্মকারী।’ (সুরা আলে ইমরান আয়াত ১১০)।

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও নারী তারা পরস্পরের বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষী। তারা ভালো কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজের নিষেধ করে। তারা আল্লাহকে মান্য করে, তাঁর রসুলের আনুগত্য করে। তারা এমন মানুষ যাদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তওবা আয়াত ৭১)।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর