শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সব ভালো কাজের সূচনায় বিসমিল্লাহ পাঠ করুন

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

সব ভালো কাজের সূচনায় বিসমিল্লাহ পাঠ করুন

‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ কোরআনের একটি বরকতময় আয়াত। আল্লাহর দুটি গুণবাচক নামসহ তিনটি নামসংবলিত এ বাক্যটি সুরা তওবা ছাড়া কোরআনের সব সুরার শুরুতেই আছে। তা ছাড়া এটি কোরআনের স্বতন্ত্র আয়াত। নবী করিম (সা.)-এর প্রতি নাজিলকৃত প্রতিটি সুরার শেষ বুঝতে পারতেন যখন বিসমিল্লাহ নাজিল করা হতো। আবু দাউদ। প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে এ বাক্যটি উচ্চারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি এমন ফজিলতপূর্ণ আয়াত যা পাঠ করার মাধ্যমে ওই কাজে বরকত ও পূর্ণতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রতিটি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ মুসনাদে আহমাদ। তাই কল্যাণ ও পূর্ণতার জন্য মুমিনের প্রতিটি ভালো কাজের প্রারম্ভিক আমল এই বিসমিল্লাহ হওয়া উচিত। মূলত এ আমলের মাধ্যমে মুমিন বান্দা তার কাজের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ ও দয়ার স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। মুমিন আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে। কেননা বিসমিল্লাহ এমন একটি শক্তিশালী আমল যার মাধ্যমে শয়তানের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, অকল্যাণ ও অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খাওয়া-দাওয়াসহ যে কোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হলে সে কাজে শয়তানের অংশীদারি থাকে না। নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সে খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ মুসলিম। হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান ওই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।’ আবু দাউদ। হজরত জাবির (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ কর, কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও, বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।’ বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি খাদ্য খাবে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে খায়, যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে যেন বলে বিসমিল্লাহি আওউালাহু ওয়া আখিরাহু।’ আবু দাউদ, ইবনে মাজা। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” আল্লাহতালা তখন তাকে শয়তানের সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন।’ প্রিয় নবী (সা.)-এর কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময় এ উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা হচ্ছে- জিবরাইল বললেন হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় প্রার্থনা করুন। মুহাম্মদ বললেন, আমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। জিবরাইল বললেন, হে নবী আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ তাফসিরে ইবনে কাসির। দাওয়াতনামা পোস্টার-ব্যানারে যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন হয় না, আবার প্রয়োজন শেষে পথেঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকে, বরকত লাভের আশায় তাতে বিসমিল্লাহ লিখে রেখে কোরআনের আয়াতের অমর্যাদা করছি। তাই এগুলোয় বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম আরবি ও বাংলায় কোনোভাবেই লিখে রাখা উচিত নয়। আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : ইমাম ও খতিব : কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর