শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মানবজীবনে সুন্নতের গুরুত্ব

মুফতি হেলাল উদ্দিন হাবিবী

মানবজীবনে সুন্নতের গুরুত্ব

মহানবী (সা.) ও খোলাফায়ে  রাশেদিনের ওইসব নীতি-আদর্শ যা উম্মতের জন্য আমলযোগ্য ও শরিয়তে পালনীয় তাকে সুন্নত বলে। মহান আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের গভীর থেকে। আর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রদর্শনের একমাত্র উপায় সুন্নত অনুসরণ। সংগত কারণেই মানবজীবনে সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তাহলে আমার অনুসরণ কর। তবে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ৩১।

আল কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। বিশেষ করে ওই ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।’ সুরা আহজাব আয়াত ২১।

কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রসুলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল, আর যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, আমি আপনাকে তাদের হেফাজতকারীরূপে প্রেরণ করিনি।’ সুরা নিসা আয়াত ৮০।

হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসবে সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।’ তিরমিজি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে; তবে যে অস্বীকারকারী সে ছাড়া। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! অস্বীকারকারী কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার অবাধ্যতা করে সে অস্বীকারকারী।’ বুখারি।

খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবায়ে কিরামের সুন্নতের অনুসরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বনি ইসরাইল সম্প্রদায় বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে, সবাই জাহান্নামে যাবে; কিন্তু একটি দল জান্নাতে যাবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ দল কারা? তিনি বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবিদের আদর্শের ওপর অটল থাকবে।’ তিরমিজি।

হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের খোদাভীতির এবং আমিরের আদেশ মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি; যদিও সে একজন হাবশি গোলাম হয়। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে অচিরেই তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে অবশ্যই আঁকড়ে ধরবে এবং তোমরা তা মাড়ির দাঁত দ্বারা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে।’ মুসলিম, আবু দাউদ।

এমন আরও অনেক আয়াত ও হাদিস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয়, মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসার চূড়ান্ত মাপকাঠি হলো রসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ। রসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতের মধ্যে রয়েছে উম্মতের প্রকৃত সফলতা, প্রশান্তি ও কল্যাণ। পক্ষান্তরে রসুল (সা.)-এর আদর্শ পরিপন্থী যাবতীয় পথ-মত, রীতি-নীতি, আইন ও আদর্শ অনুকরণ করে শান্তি সফলতা ও কল্যাণ অর্জন আদৌ সম্ভব নয়। তাই মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণই হলো ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র উপায়।

 

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ কাজলা (ভাঙ্গা প্রেস) যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর