বাণিজ্যসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশ আইন প্রণীত হয়েছিল সদিচ্ছার প্রতিশ্রুতি হিসেবে। আশা করা হয়েছিল বাণিজ্যসংক্রান্ত বিরোধ প্রচলিত আদালতের বদলে সালিশের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। কিন্তু সে সদিচ্ছা পূরণ হয়নি আইনের নানা অস্পষ্টতার কারণে। ফলে বিরোধ নিষ্পত্তিতে গতি আসেনি। অর্জিত হয়নি আইন প্রণয়নের বা সালিশি ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য। সে অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং আদালতের বাইরে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে গতি আনতে প্রচলিত সালিশ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধিত আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে আইন কমিশন। প্রস্তাবিত খসড়ায় সালিশি কার্যক্রমে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে সালিশকারীদের ফি, সালিশ ও আদালতের ক্ষেত্র, ট্রাইব্যুনালের আওতা ও নিষ্পত্তির সময়সীমা সুস্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অনুরোধে আইন কমিশন সুপারিশমালাসহ প্রস্তাবিত সংশোধিত খসড়া প্রস্তুত করেছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় সালিশ দায়েরের পর ৩৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়েছে। দাবিদার কর্তৃক দাবির আবেদন দাখিলেও ৩০ কার্যদিবসের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। খসড়ায় আদালত, আপিল বিভাগ, সালিশ, সালিশি ট্রাইব্যুনালসহ অন্যান্য বিষয়ে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ও কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা যায় এ সংশোধনের মাধ্যমে সালিশি কার্যক্রম গতি পাবে। তবে সালিশ আইন সংশোধনের পর কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নির্ভর করছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আন্তরিকতার ওপর। এ ক্ষেত্রে সংকট থাকায় দেশের আদালতগুলোয় মামলাজট নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতে মানুষ যায় ন্যায়বিচারের জন্য। বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে সব পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে। দীর্ঘসূত্রতার যে নিয়তি আমাদের ভ্রুকুটি দেখাচ্ছে তা থামাতে নিজেদের সচেষ্ট হতে হবে।