সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আন্দোলন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি

মেজর আখতার (অব.)

আন্দোলন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি

জনগণের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত উচ্চমানের একটি বিশেষ বাহিনী ও তার উচ্চপদস্থ সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। যদিও জাতীয় গণমাধ্যমে তেমন লেখালেখি বা আলোচনা নেই। তবে নিষোধাজ্ঞাজনিত স্পর্শকাতর বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মাথাব্যথার কারণে দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপির অত্যন্ত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী লাগাতার আন্দোলনগুলো সরকারের ওপর কোনো ধরনের চাপ তো দূরের কথা আঁচড়ও ফেলতে পারছে না। বিভিন্ন জেলা সদরে বিএনপির আন্দোলন খুবই আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে অনেক জেলায় বিএনপি যেভাবে বাধা ডিঙিয়ে জনসভাগুলো করেছে তাতে জাতির সামনে প্রমাণ হয়ে গেছে যে বিএনপি এখনো একটি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত দল যার কর্মীর কোনো অভাব নেই। এটি বেগবান করতে পারলে বিএনপি তার লক্ষ্য অর্জনে হয়তো শিগগিরই সফল হয়ে যেতে পারত। কিন্তু এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যেন বিএনপির আন্দোলন পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করছে।

যে বিশেষ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেই বিশেষ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিএনপিরও অভিযোগ আছে। সুবিধাজনক সময়ে হলে বিএনপি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে মাঠে থাকত। সমমনা দলগুলো নিয়ে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে বিএনপি একটি সফল গণআন্দোলন গড়ে তুলে ওই বিশেষ বাহিনীকে জনগণের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারত। শুধু তাই নয়, যে সাত কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জঙ্গি দলগুলো তাদের নিজেদের শত্রু মনে করে এবং বাগে পেলে হয়তো তাদের ওপর চরম প্রতিশোধ নিয়ে নেবে। এই সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিএনপিরও অনেক অসন্তুষ্টি রয়েছে। কারণ বিএনপিসহ জাতির একাংশ মনে করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের আগের রাতের নির্বাচনের মূল কুশীলবই এই সাত মহাপুরুষ। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধের মূল কারণ এই সাত মহারথীর লাগামহীন ক্ষমতার দাপট, প্রকাশ্যে সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের অধীন বাহিনীকে ব্যবহার এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়া। এ রকম দুর্ধর্ষ সাত কর্মকর্তার বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞা বিএনপি লুফে নিত। বিএনপি এত দিনে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সারা জাতিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যেত। সারা দেশের বেশির ভাগ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অবশ্যই অবস্থান নিয়ে নিত।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি জটিল ধূম্রজালে আছে। বলা হচ্ছে, মানবাধিকার ও দুর্নীতির জন্য বিশেষ বাহিনী ও তার সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যা বিএনপির জন্য আরও বিব্রতকর। কারণ সরকারের ভাষ্যমতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দুর্নীতি ও হত্যা মামলার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে কাজেই যে কারণে এবং মানদন্ডে বিশেষ বাহিনী ও তার সাত কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সে একই মানদন্ডে নিষেধাজ্ঞা তো বিএনপির জন্যও যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে দিতে পারে। কাজেই বিএনপির অনেকে মনে করেন এ নিষেধাজ্ঞার পেছনে যত না মানবাধিকার ও দুর্নীতি তার চেয়ে বেশি রাজনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের কায়েমি স্বার্থ। সেই সঙ্গে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী মনে করেন বিএনপির চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে এই সময়ে নিষেধাজ্ঞার ইস্যুটি সামনে নিয়ে এসেছে। না হলে বিএনপির কোনো ইস্যুকে সমর্থন না করে,  চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ বা বিএনপির পক্ষে অবস্থান না নিয়ে বা দেশমাতা খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য বা মতামত না দিয়ে বা তারেক রহমানের মামলার ব্যাপারে তার পক্ষে কোনো মন্তব্য বা মতামত না দিয়ে বা বিএনপির লাখো লাখো নেতা-কর্মীর মামলা, জেল, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য না দিয়ে একটি বিশেষ বাহিনী ও তার সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিএনপির অনেকের চোখে ভালো ঠেকেনি। বিএনপি মহাসচিবসহ অনেকের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে বিষয়টি জনমনে আলোড়ন তুলতে পারেনি, ফলে নিজেদের অতিকষ্টের আন্দোলন ব্যর্থতায় হারিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি যেন এখন অন্ধকার রাতে মাঝনদীতে দিকহারা এক তরী। কোন দিকে যাবে তা নির্ধারণ করতে কেন জানি পারছে না। কিন্তু এই ক্রান্তিকালে বিএনপির সামনে চারদিকে শুধু চারটি পথই খোলা। একটি পথ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া এবং আন্দোলনের মাধ্যমেই নিজেদের গতিপথ নির্ধারণ করা। তাতে অবশ্যই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দ্বিতীয় পথটি নির্বাচনের। নির্বাচন করে ক্ষমতার পরিবর্তন চাইলে অবশ্যই নির্বাচনের পথটিই বেছে নিতে হবে। দুই পথে হাঁটা যাবে না। নির্বাচন অবশ্যই পরিবর্তনের পথ তৈরি করে দেবে তবে এর জন্য যথাসময়ে নির্বাচনের পথেই হাঁটা শুরু করে দিতে হবে। তৃতীয় পথটি হলো, ভুলে যেতে হবে আন্দোলন, ভুলে যেতে হবে নির্বাচন তারপর শুধু সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন-নির্বাচন দুটোকেই বাদ দিয়ে সংগঠন নিয়ে শুধু পড়ে থাকতে হবে। কোনো ঝক্কি ঝামেলা থাকবে না। সংগঠনকে সুন্দরভাবে গোছাতে হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে, পদপদবি কেনাবেচা হবে, চলবে আনুষ্ঠানিকতা, উঠবে চাঁদা, আসবে ভ্যাট, মিলবে উপঢৌকন হবে শান্তিময় জীবন। হবে জেলায় জেলায় সভা, সমাবেশ, সম্মেলন, চলবে খানাপিনা, পাওয়া যাবে গাড়িভরা উপহার-উপঢৌকন। তার ওপর বাড়তি পাওনা সেমিনার, সংবাদ সম্মেলন, টক শো, মিডিয়ায় শিরোনাম। এ ছাড়া দল বা অন্যের টিকিটে বিলাত ভ্রমণ তো আছেই! চতুর্থ পথটি হলো রাজনীতি নামক অতিলাভজনক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্যকে সুযোগ করে দেওয়া।

৬ জানুয়ারি ২০২২ সালের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘এবার সংলাপ করবে বিএনপি, বাদ থাকবে জামায়াত’ শিরোনামে একটি খবরের কিছুটা অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো : ‘রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাচ্ছে না বিএনপি। তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিজেরাই সংলাপের আয়োজন করছে। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিসহ নানা প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দলগুলোর কাছে যাবে দলটি। তাদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনসহ সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে এ সংলাপ বা আলোচনা হবে। ডান, বাম ও মধ্যপন্থি ছোট-বড় সব ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আলোচনা করবে তারা। মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনী বৃহৎ ঐক্য গঠন। সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের হাইকমান্ড থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

এদিনের আলোচ্য সংবাদটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যেমন ২০ দল যা এখন ১৮ দলে দাঁড়িয়েছে এবং মান্না ও রেজা সাহেবদের বাইরে অন্য কোনো দল বিশেষ করে হেফাজত, জাতীয় পার্টি বা কমিউনিস্ট তথা বাম দলগুলোকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে আনতে পারবে? অথবা সরকার পতনের আন্দোলন কি বিএনপি তার নেতৃত্বে ওইসব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে করতে পারবে? অথবা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর চলমান আন্দোলনে কি ওদের শরিক করাতে পারেবে? যদি তা না হয় তাহলে এ ধরনের সংলাপ করে আন্দোলনের পটভূমি তৈরির কোনো সুযোগ যে নেই তা যে কোনো সচেতন মানুষ স্বীকার করবে। কাজেই আন্দোলনের পটভূমি তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে যে বিএনপি সংলাপ করতে চাচ্ছে তা অনেকটা ধোঁয়াশা এবং এজন্য ওই দলগুলো বিএনপিকে আস্থায় নেবে না বলেই বৃহৎ জনগণের ধারণা।

তা ছাড়া জনগণের মতে বিএনপির নেতৃত্বে বড় কোনো আন্দোলনের সম্ভাবনাও তেমন শক্তিশালী নয়। কাজেই বিএনপির সংলাপের অন্তর্নিহিত মূল লক্ষ্য যে আগামী জাতীয় নির্বাচন তা সবার কাছেই জলবৎতরলংয়ের মতো পরিষ্কার। যেহেতু বিএনপির সংলাপটির সূচনা নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে সরকারের সংলাপ নামক নাটিকাটি শুরুর কারণে এবং তৎপরবর্তী পটভূমিকায়। তবে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা হিসেবে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিসহ নানা প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দলগুলোর কাছে যাবে দলটি। তাদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনসহ সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে এ সংলাপ বা আলোচনা হবে।’ এখানে আন্দোলনের বিয়য়টি ‘পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি’ হিসেবে পরোক্ষভাবে বিষয়ভুক্ত করা হয়েছে সম্ভবত এই ভেবে যে বাম ও চরম ডান তথা চীন-রাশিয়া পন্থি এবং হেফাজত ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির ডাকে সাড়া দিতে উৎসাহিত না-ও হতে পারে। তারপর থাকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। ইতোমধ্যে জাতির সামনে বিএনপি যেখানে এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সেখানে আগামী নির্বাচন নিয়ে সংলাপ করার ইচ্ছা পোষণ হঠকারিতা ছাড়া কিছু নয় বলে জনগণ মনে করে।

আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই- এ চরম বাস্তবতাটি বিএনপি যত দ্রুত অনুধাবন করবে ততই দলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলে অনেকের বিশ্বাস। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বিএনপির পুলকিত হওয়ার কিছু নেই। যদি বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় যদিও দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ তার পরও যদি দেওয়া হয় তাহলে বিএনপির নেতারাও যে বাদ যাবেন না তার নিশ্চয়তা কে দেবে! কাজেই সেই ট্র্যাপে পা দেওয়া বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে না বলে বৃহৎ জনগণ মনে করে। তার চেয়ে বরং আগামী নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বৃহৎ জনগণের বিবেচনা ও সমর্থনের জন্য বক্তব্য দেওয়া যেতে পারে যে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারলে (১) দুর্নীতিমুক্ত, সজ্জন ও পারঙ্গম তিন ব্যক্তির নাম নির্বাচনের আগেই প্রকাশ করা হবে যাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হবে। (২) ধর্মীয় মৌলবাদ ও সন্ত্রাসকে কোনো প্রকার প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। (৩) বর্তমান সরকারের চলমান চীন, ভারত ও রাশিয়া নীতি অব্যাহত ও নিরবচ্ছিন্ন রাখা হবে এবং সব চুক্তি বলবৎ থাকবে এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় পুনর্মূল্যায়িত হতে পারবে ও বিনিয়োগ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। (৪) জাতিসংঘ ও ইউনাইটেড নেশন্স হাইকমিশন ফর রেফিউজিসের রোহিঙ্গা নীতি ও চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। (৫) রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বিদ্বেষ বা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গমূলক কোনো অপরাধ কার্যক্রম এই সাধারণ ঘোষণার আওতাভুক্ত হবে না। (৬) কোনো নির্বাচনে রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসন বা তার কোনো অংশকে ব্যবহৃত হতে দেওয়া যাবে না। দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা কায়েমে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সব মহলের সুবিবেচনা কাম্য।

                লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর