মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দোয়া বেশি বেশি পড়তেন

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দোয়া বেশি বেশি পড়তেন

উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত জুয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন আল্লাহর নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন, তখন আমি জায়নামাজে অজিফারত ছিলাম। আল্লাহর পিয়ারা হাবিব চাশতের সময় আমার ঘরে পুনরায় ফিরে এলেন। তখনো আমি জায়নামাজে অজিফারত ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, জুয়াইরিয়া! আমি যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই অজিফা আদায়ে মশগুল ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমার পরে চারটি বাক্য তিনবার বলেছি, যদি এগুলোকে ওজন করা হয় তবে তোমার কৃত সমস্ত অজিফা থেকে এগুলোই অনেক গুণ বেশি ভারী হবে। এরপর তিনি তা আমাকে পড়ে শোনালেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহি। অর্থ : আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্ট হওয়ার পরিমাণ, তাঁর আরশের ওজন সমপরিমাণ, তাঁর কথা লিপিবদ্ধ করার কালির পরিমাণ। সুবহানাল্লাহ।’ মুসলিম। ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ বলার দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে জান্নাতের বিরাট একটা অংশ দান করে তার মালিক বানিয়ে দেন। উম্মতের দরদি, আল্লাহর পিয়ারা হাবিব মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মতের আমলকে কিয়ামতের ময়দানে পরিমাণে অনেক বেশি এবং ভারী হওয়ার জন্য আমলের বিশেষ একটি কৌশল শিক্ষা দিলেন। যা অল্প সময়ে অল্প আমলে অনেক বেশি নেকি পাওয়ার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এখানে মূলত মূল দোয়াটি হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা করা। যা একটি বারের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু ‘আদাদা খালকিহি’ অর্থাৎ আপনার সৃষ্টি সংখ্যা পরিমাণ। এ কথাটি বৃদ্ধি করার কারণে বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করা অগণিত সংখ্যায় পরিণত হয়ে গেল। কেননা এখন পূর্ণাঙ্গ বাক্যটির অর্থ হলো- ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি আপনার সৃষ্টি সংখ্যার পরিমাণ।’ একমাত্র মহান রব্বুল আলামিনই স্রষ্টা। আর সবকিছুই তাঁর সৃষ্টি এবং মাখলুকাতের অন্তর্ভুক্ত। আমরা গভীরভাবে একটু চিন্তা ও গবেষণা করলে বুঝতে পারি আল্লাহর সৃষ্টির পরিমাণ কতটুকু। সাত আসমান-জমিন, লোহা, কলম ও এর মধ্যে যত মাখলুকাত রয়েছে। নুরের তৈরি সব ফেরেশতা, আগুনের তৈরি সব জিন্নাত, মাটির তৈরি সব মানুষ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, বৃক্ষলতা, পানির মধ্যে বেঁচে থাকা মাছ। মরুভূমিতে প্রতিটি বালুকণা, মহাকাশ গ্যালাক্সিতে বিরাজমান মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন, অগণিত নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ, এবং এগুলোয় অবস্থিত আল্লাহর সৃষ্টি মাখলুকাত। এভাবে সাত আসমান ও জমিনে অবস্থিত আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুকাত, যার হিসাব একমাত্র এগুলোর স্রষ্টা আল্লাহই জানেন। মানব দানব জিন ফেরেশতারা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুকাতের হিসাব করতে গেলেও কিয়ামত পর্যন্ত তার সঠিক হিসাব বের করতে কখনই সক্ষম হবে না। দুই সেকেন্ড সময় নিয়ে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আদাদা খালকিহি বাক্যটি বলে কেউ আল্লাহর পবিত্রতাসহ প্রশংসা করলে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে তাঁর সৃষ্ট মাখলুকাতের সমপরিমাণ নেকি তার আমলনামায় দান করেন। যে নেকির পরিমাণ শুধু আল্লাহই জানেন। সুবহানাল্লাহ।

এরপর বাক্যের দ্বিতীয় অংশ, ‘ওয়া রিজা নাফসিহি’ অর্থাৎ মহান রব্বুল আলামিন, তাঁর মাখলুকাতের ওপর সন্তুষ্টির পরিমাণ, এ কথা বলার দ্বারাও বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর পবিত্রতাসহ প্রশংসার নেকির পরিমাণ আগের চেয়েও কোটি কোটি গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। কারণ আল্লাহ তাঁর সমস্ত মাখলুকাতের ওপর সন্তুষ্ট রয়েছেন। বিশেষ করে নবী, ওলি, মানব জাতির আল্লাহওয়ালাগণ, যারা সর্বদা ইমান আমল বজায় রেখে চলেন, আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকায় চলেন। নেককার জিন, নিষ্পাপ ফেরেশতাসহ আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি তাঁর হুকুমেই চলে বিধায় তাদের ওপরও তিনি সন্তুষ্ট। সুতরাং দ্বিতীয় বাক্যটি বলার দ্বারা ওই পরিমাণ নেকি অর্জন হয়ে গেল। তৃতীয় বাক্যটি, ‘ওয়াজিনাতা আরশিহি’ অর্থাৎ মহান আল্লাহর আরশের ওজন পরিমাণ। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর আরশের সঙ্গে তাঁর কুল মাখলুকাত, কুল-কায়িনাতের তুলনা একেবারেই সামান্য। তাহলে আরশের ওজন পরিমাণ কতটুকু? যা একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামিনই জানেন। সুতরাং তৃতীয় বাক্যটি বলার দ্বারা বান্দা ওই পরিমাণই নেকি লাভ করবে।

এরপর চতুর্থ বাক্যটি হলো, ‘ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি’ অর্থাৎ মহান রব্বুল আলামিনের প্রশংসা গুণগান লেখার কালির পরিমাণ। সুরাতুল কাহাফে স্বয়ং রব্বুল আলামিন বলেন, ‘সমুদ্রের সমস্ত পানি কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে কালি বানিয়ে যদি আল্লাহর পবিত্রতা গুণগান ও প্রশংসা লেখা শুরু করা হয় তবে কালিই শেষ হয়ে যাবে তবু তাঁর গুণগান ও প্রশংসা লেখা শেষ করা যাবে না।’ অতএব চতুর্থ বাক্যটি বলার দ্বারা বান্দা ওই পরিমাণ নেকি অর্জন করবে। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর বান্দা, নবীর উম্মত একটু ভেবে দেখবেন, উল্লিখিত জিকিরটি আদায় করতে মাত্র পাঁচ সেকেন্ড সময় লাগে, ইচ্ছা করলে ১০ মিনিট সকাল-সন্ধ্যা ১০০ বার করে ২০০ বার পড়া খুবই সহজ। যা কোনো মুসলমানের পক্ষে অসম্ভব নয়। উম্মতের কান্ডারি মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য কত বিশাল নেকির ভান্ডার অর্জন করার কৌশল শিখিয়ে দিয়ে গেলেন, জান্নাতে প্রবেশ করা কত সহজ করে দিয়ে গেলেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকাল-সন্ধ্যা ওই জিকির বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইমাম ও খতিব কাওলার বাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর