মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আল্লাহর সাহায্য লাভের একটি সহজ উপায়

মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম

আল্লাহর সাহায্য লাভের একটি সহজ উপায়

আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মানবজীবন অচল। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বান্দা আল্লাহর সাহায্যেও মুখাপেক্ষী। তিনি সাহায্য না করলে মানুষের পক্ষে কোনো কাজ করাই সম্ভব নয়। এজন্য সর্বদা তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করা বান্দার অবশ্যকর্তব্য। তাই তো বান্দা প্রতি নামাজে প্রার্থনা করে- ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।’ সুরা ফাতিহা।

নিজের জীবনে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার একটি সহজ উপায় হলো অন্যকে সাহায্য করা। অন্যকে সহযোগিতা করলে নিজের কাজেও আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়। এটা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এর ফজিলতও অনেক। এক হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সংকট থেকে একটা সংকট মোচন করে দেয় আল্লাহ তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন, আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ মুসলিম। মানুষ সামাজিক জীব। আর একে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া সমাজবদ্ধভাবে চলা অসম্ভব। তাই সামাজিক হতে হলে পরস্পর একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা, পাশে দাঁড়ানো, সহমর্মী হওয়া জরুরি। শুধু নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে বরং অন্যের মুখেও হাসি ফোটাতে চেষ্টা করা উচিত। এটিই ইসলামের শিক্ষা। ইমানের দাবি। সাহায্য নানাভাবেই করা যায়। অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং বিদ্যা দিয়ে। যার যেমন সাহায্য-সহযোগিতা দরকার, নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা করা। যেমন, শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করা। অনাহারীর জন্য আহারের ব্যবস্থা করা। অসহায় ও ছিন্নমূলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। গরিব ছাত্রের পড়ালেখার খরচ বহন করা। কারও ভারী বোঝা তুলতে ও নামাতে সাহায্য করা। কাজের লোকদের কষ্ট লাঘব করা। কেউ কোনো কাজ করতে চাইলে তাকে সে কাজের উপকরণ জোগাড় করে দেওয়া। যেমন গৃহপালিত পশু, সেলাই মেশিন, কাঁচামাল ইত্যাদি কিনে দেওয়া। যারা অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে না। আল্লাহর কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এক হাদিসে আছে, ‘আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে বনি আদম! আমি অসুস্থ ছিলাম তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি আপনাকে কীভাবে দেখতে যাব! আপনি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে আমাকে অবশ্যই তার কাছে পেতে। হে আদমসন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি আপনাকে কীভাবে খাবার দিতাম! আপনি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে। হে বনি আদম! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে পানি দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি কীভাবে আপনাকে পানি দিতাম! আপনি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল তুমি তখন তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি তাকে পানি দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে।’ মুসলিম। আল্লাহতায়ালা আমাদের এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর