শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

হাজির-নাজিরের আকিদা

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

হাজির-নাজির একটি প্রচলিত পরিভাষা, যার অর্থ হচ্ছে সর্বাবস্থায় সর্বস্থানে বিদ্যমান থাকা। এটা কেবল আল্লাহর গুণ। কোনো মানুষ, কোনো সৃষ্টি ও নবী-রসুলের গুণ নয় এবং হতেও পারে না। গায়রুল্লাহর ব্যাপারে এরূপ আকিদা পোষণকারীরা সীমালঙ্ঘনের দোষে দোষী। সীমালঙ্ঘনের কারণে ইহুদি-খ্রিস্টান ও কতিপয় শিয়া গোমরাহ হয়েছে। কেউ কেউ বলে, যদি বিশ্বনবী হাজির-নাজির গুণের অধিকারী না হবেন তাহলে তিনি গায়েবি খবর দিতেন কী করে? অথবা কিয়ামতের দিন তিনি উম্মতের সাক্ষী হবেন কী করে? কারণ তাঁকে আল কোরআনে ‘শাহিদ’ (সাক্ষী) বলা হয়েছে। বাস্তবেও তিনি হাশরের ময়দানে উম্মতের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবেন।

‘শাহিদের অর্থ : ক. যখন উম্মতে মুহাম্মদী হজরত মুসার পক্ষে না দেখে সাক্ষ্য দান করবে; আর উম্মতে মুসা না দেখার আপত্তি তুলবে তখন উম্মতে মুহাম্মদীকে না দেখে সাক্ষ্য দানের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলবে, আমরা বিশ্বনবীর কাছে শুনে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিশ্বনবীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আমি আমার উম্মতকে মুসার ব্যাপারে অবহিত করেছি। তাই বিশ্বনবী শাহিদ হলেন। নাসায়ি, তিরমিজি, বুখারিসহ বিভিন্ন কিতাবে আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে এরূপ রয়েছে।

খ. ইবনুল মুসাইয়্যেবসহ বিভিন্ন সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। প্রতিদিন অথবা প্রতি শুক্রবার উম্মতে মুহাম্মদীর সব ভালো-মন্দ আমল প্রত্যেকের নাম-পরিচয়সহ রসুলের দরবারে পেশ করা হয়। রসুল (সা.) এ সূত্রে উম্মতের ব্যাপারে আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। তাই এতে বাধা কোথায়?

আল্লাহর জন্য কিয়াম : হাজির-নাজির বলে রসুলের জন্য কিয়াম করা বাঞ্ছনীয় হলে এ গুণ তো সর্বসম্মতভাবে আল্লাহর মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে। তাহলে আল্লাহর সম্মানার্থে কিয়াম করা হয় না কেন? তবে কি তাদের কাছে রব্বুল আলামিন সম্মানের পাত্র নন? এটা বড়ই পরিতাপের বিষয়!

কিয়াম কখন করবে : যদি বলা হয় মিলাদ মাহফিলে বিশ্বনবী তাশরিফ আনেন, তাহলে প্রশ্ন হবে তিনি কখন তাশরিফ আনেন এবং তা বোঝার উপায় কী? তাশরিফ আনার আগে অথবা অনেক পরে কিয়াম করার কি যৌক্তিকতা আছে? সঙ্গে সঙ্গে কিয়ামের যৌক্তিকতা আছে বটে; কিন্তু তিনি কখন আসছেন তা বুঝব কী করে? প্রচলিত মিলাদে কিয়ামকারীরা ‘ইয়া নবী’ বলে কিয়াম করে থাকেন। এর আগে অথবা পরে কিয়াম করেন না। তবে কি বিশ্বনবী তাশরিফ এনে তাদের ‘ইয়া নবী’ বলার অপেক্ষায় আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকেন, নাকি এসে বসে যাওয়ার পর যখন তাদের ‘ইয়া নবী’র ছন্দ শুরু হয়, তখনো নবী বসে থাকেন আর তারা কিয়াম করেন? আর যদি তখন বিশ্বনবীও তাদের সঙ্গে কিয়াম করেন তাহলে তিনি কাকে সম্মান প্রদর্শন করেন?

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর