শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে দৈনন্দিন জীবনে বর্জনীয় বিষয়সমূহ

মো. আমিনুল ইসলাম

কোরআন ও হাদিসের আলোকে দৈনন্দিন জীবনে বর্জনীয় বিষয়সমূহ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা কি কি জিনিস বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে আমাদের দুনিয়ার জীবনে কামিয়াবি হব তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আমরা এই আলোচনার মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দার জন্য কি কি বর্জনীয় তা জেনে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে সচেষ্ট হব। মুমিন বান্দার জন্য বর্জনীয় বিষয়সমূহ -

১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক না করা- পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহতায়ালা কখনো এ বিষয়টি ক্ষমা করবেন না যে, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা হবে। এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।” সুরা আন নিসা, আয়াত ১১৬।

আল্লাহ তাঁর বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন কিন্তু তাঁর সঙ্গে শিরক (অংশীদার) করাকে তিনি কখনই ক্ষমা করবেন না। শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম ও বড় গুনাহ। ২. বিদআত থেকে বেঁচে থাকা : শরিয়তের মধ্যে নেই, অথচ নতুন কিছু শরিয়তের মধ্যে চালু করার নামই বিদআত।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনের মধ্যে এমন কোনো জিনিস উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (সহিহ বোখারি)। ৩. উপহাস না করা এবং কাউকে মন্দ নামে না ডাকা : কাউকে মন্দ নামে ডাকা বা উপহাস করা বা তিরস্কার করা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মানুষ তোমরা যারা ইমান এনেছ, তারা কোনো জাতি যেন অন্য কোনো জাতিকে উপহাস না করে, কেননা উপহাসকারী জাতি উপহাসকৃত জাতি থেকে উত্তম হতে পারে। আবার নারীরাও যেন কোনো নারীদের উপহাস না করে। কারণ সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ কর না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না। ইমান আনার পর একে অপরকে মন্দ নামে ডাকা বড় ধরনের নিকৃষ্ট গুনাহর কাজ।” সুরা হুজুরাত, আয়াত ১১।

৪. গিবত থেকে বেঁচে থাকা : গিবত অর্থ পরনিন্দা বা পরচর্চা। গিবত একটি কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা একে অপরের দোষ খোঁজার জন্য তার পেছনে গোয়েন্দাগিরি কর না। একজন আরেকজনের গিবত কর না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা এটাকে অত্যন্ত ঘৃণা কর” সুরা হুজুরাত, আয়াত ১২।

৫. অপবাদ না দেওয়া : কোনো মানুষের মধ্যে যে দোষ নেই, তাকে সে দোষে দোষী করার নামই অপবাদ দেওয়া। অপবাদ গিবতের চেয়েও গুরুতর অপরাধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “যারা সতী-সাধ্বী মুমিন নারীদের প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি। “সুরা আন নুর, আয়াত ২৩। ৬. মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা : মিথ্যা হলো সব গুনাহের মাথা। মিথ্যাই সত্যকে বিকৃত করে, ন্যায়কে অন্যায়ে রূপান্তরিত করে। আর সমাজ, রাষ্ট্রকে করে কলুষিত। ৭. চুরি না করা : কারও অনুপস্থিতিতে তার সম্পদ, অর্থ, মূল্যবান সামগ্রী আত্মসাৎ করা বা না বলে ভোগ করাই চুরি। আল্লাহ বলেন, “পুরুষ বা নারী, এদের যে কেউ চুরি করবে, তাদের উভয়ের হাত কেটে ফেল। এটা তাদেরই কর্মফল এবং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দণ্ড।” সুরা মায়েদা, আয়াত ৩৮। ৮. মদ জুয়া থেকে বিরত থাকা : মদ ও জুয়ার কারণে মানুষের নৈতিক জীবনের স্খলন ঘটে। তাই মদ জুয়াতে আসক্ত হওয়া কবিরা গুনাহ। আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ হচ্ছে ঘৃণিত শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, তোমরা যাতে সফলকাম হতে পার।” সুরা মায়েদা, আয়াত ৯০।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

সর্বশেষ খবর