সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মানুষকে ভাষা উপহার দিয়েছেন মহান আল্লাহ

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

মানুষকে ভাষা উপহার দিয়েছেন মহান আল্লাহ

দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। সব ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বিশ্বের অন্তত ১৮ কোটি মুসলমান এ ভাষায় কথা বলে। আরবি ভাষার পর বাংলাভাষী মুসলমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ভাষা মানুষের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত এক উপহার। আদি মানব হজরত আদম (আ.)-কে আল্লাহ জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। জ্ঞান শিক্ষার মাধ্যম হলো ভাষা। মানুষ যেমন আল্লাহর সৃষ্টি তেমন ভাষার স্রষ্টাও আল্লাহ। ইরশাদ হচ্ছে- ‘রহমান, তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী রয়েছে’ (সুরা আর রাহমান ১-৫)। কোরআনের বাণীতে স্পষ্ট বোঝা যায়, মানুষ সৃষ্টির পর মনের ভাব প্রকাশের পদ্ধতি ও তার মাধ্যম ভাষা আল্লাহই মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। ভাষা মহান সৃষ্টিকর্তার দান। অন্যান্য নিয়ামতের মতো ভাষাও আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত। বলা হচ্ছে- ‘তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও রঙের বিভিন্নতা। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ (সুরা রুম-২২)। আল্লাহ মানুষের ভাষাকে তাঁর সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করলেও সে ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট ভাষার কথা বলেননি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন আরবিভাষী। তিনি বলেছেন, ‘তিনটি কারণে আমি আরবি ভাষাকে ভালোবাসি। কেননা আমি আরবি ভাষাভাষী, কোরআনের ভাষা আরবি এবং জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি।’ তাঁর মাতৃভাষা আরবি হওয়ায় তিনি সে ভাষাকে ভালোবাসার গরজ অনুভব করেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে তার মাতৃভাষাকে ভালোবাসার তাগিদ সৃষ্টি করেছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন, ‘আফসাহুল আরব’ বা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। আরবি শুধু দীনি ভাষাই নয়; বরং সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক জনপদের বাসিন্দাদের মাতৃভাষাও বটে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশুদ্ধ ভাষার ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় সাহাবায়ে কেরামকে শুদ্ধ ভাষা ব্যবহারে সচেতন করতেন। সহজাত কারণে প্রতিটি মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা অতিশয় প্রিয়। আল্লাহর কাছে তাঁর প্রতিটি বান্দা যেমন সমান, ভাষার মর্যাদার ক্ষেত্রেও তেমন কোনো প্রভেদ থাকতে পারে না। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশু মাতৃস্নেহে বেড়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে মায়ের ভাষা শিখে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। মা, মাতৃভাষা মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে যেহেতু জড়িত সেহেতু একে অস্বীকার করা নিজের অস্তিত্ব অস্বীকারেরই নামান্তর। আল্লাহ যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের মাতৃভাষায় আল্লাহর দীন প্রচার করেছেন এবং আল্লাহ নবী-রসুলদের মাতৃভাষায় কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য। অতঃপর আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন যাকে চান এবং পথ দেখান যাকে চান, তিনি মহাসম্মানিত, প্রজ্ঞাময়’ (সুরা ইব্রাহিম-৪)। মুসলমান শাসনামলে বাংলা ভাষা রাজ দরবারের ভাষার মর্যাদা পায়। বাংলা সন উদ্ভবে ভূমিকা রেখেছে মুসলমানরা। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের ৯০ শতাংশই মুসলমান। বাঙালি মুসলমানরাই বুকের রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করেছেন। বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আল্লাহ ভাষা শহীদদের জান্নাতে ঠাঁই দিন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর