শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

দানশীলতা ও বদান্যতা সম্মানের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয়

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

দানশীলতা ও বদান্যতা সম্মানের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয়

সমাজে বিভিন্ন স্তরের মানুষ বসবাস করে। আল্লাহ কাউকে ধনী করেন কাউকে গরিব। ধনীদের জন্য উচিত গরিবদের সহযোগিতায় দানের হাত সম্প্রসারিত করা। সমাজের গরিব শ্রেণির প্রতি দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শন মহৎ কাজ। কেননা একমাত্র আল্লাহই ধনী এবং সবাই তাঁর সামনে গরিব, অসহায়, মিসকিন এবং প্রতিটি ধনী ব্যক্তির যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার সবই আল্লাহর দয়া, মেহেরবানি ও দান। সুতরাং আল্লাহর দানে ধনী ব্যক্তির গরিবকে সাহায্য করা আল্লাহরই নির্দেশ। কেননা শুধু আল্লাহই ধনী আর সবাই গরিব। আল কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ের প্রতি বিশেষ তাকিদ রয়েছে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি থেকে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দিই তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর।’ সুরা বাকারা আয়াত ২৬৭। দানশীলতার ফজিলতের কথা উল্লেখপূর্বক কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০ শস্যকণা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ।’ সুরা বাকারা আয়াত ২৬১। আল্লাহ হলেন সবচেয়ে বড় দাতা, তারপর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাতা হলেন রসুলুল্লাহ (সা.)। তাঁর দানের তুলনা হয় না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দাতা।’ বুখারি। রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন দানশীলতার মূর্ত প্রতীক। জীবনে কেউ তাঁর কাছে কিছু চেয়েছে এবং জবাবে তিনি ‘না’ বলেছেন এমনটি কখনো হয়নি। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) সমস্ত মানুষের তুলনায় সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ও সর্বাধিক সাহসী ছিলেন।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। দানশীলতা মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে এবং জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ এবং যে এর কোনো একটি শাখা ধারণ করবে তাকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। আর কৃপণতা জাহান্নামের একটি বৃক্ষ। যে এর কোনো একটি ডালপালা ধারণ করবে তা তাকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। বায়হাকি, মিশকাত। আল্লাহর দেওয়া শরীর দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর দেওয়া সম্পদ তাঁরই রাস্তায় ব্যয় করে জান্নাত অর্জন প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য, নিজের প্রিয় বস্তু আল্লাহর পথে ব্যয় না করা পর্যন্ত কল্যাণ লাভ করা কখনই সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যা ভালোবাস তা ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ৯২। এ আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর হজরত আবু তালহা (রা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমার কাছে বায়রুহা বাগানটি অত্যন্ত প্রিয়, এটি আল্লাহর ওয়াস্তে আমি দান করে দিলাম। এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে পুণ্য ও সঞ্চয় চাই। সুতরাং আল্লাহর নিবেদিত পথে আপনি তা ব্যয় করুন। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ তো অনেক লাভজনক সম্পদ, এ তো অনেক লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বললে আমি তা শুনলাম। তুমি এ সম্পত্তি বর্তমান নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দাও। এটাই আমি ভালো মনে করছি। তখন আবু তালহা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি তা-ই করব। তারপর আবু তালহা (রা.) তাঁর সম্পত্তি তার চাচাতো ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। বুখারি।

 

লেখক : ইমাম ও খতিব : কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর