মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর মাস শাবান

এম এ মান্নান

রসুল (সা.)-এর মাস শাবান

রসুল (সা.) বলেছেন, রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। ইসলামী শরিয়তে শাবান মাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। শাবান গুনাহ থেকে রক্ষা করে, রমজান মানুষকে পবিত্র করে। শাবানকে বলা হয় রমজানের আগমন ঘোষণাকারী মাস। হজরত উসামা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ (শাবান) মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলাম। তিনি উত্তরে বললেন, লোকেরা রজব ও রমজান এ দুই মাসের গুরুত্ব বেশি দেয় এবং রোজাও রাখে। কিন্তু মধ্যবর্তী এ মাসটি উপেক্ষা করে চলে। অথচ এ মাসেই বান্দার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ হয়। আমার কামনা হলো আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করার সময় আমি রোজা অবস্থায় থাকি। এ কারণেই আমি শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখি।’ (মুসনাদে আহমাদ, নাসাই, আবু দাউদ)। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) তাঁর ‘গুনিয়াতুত তালিবিন’ গ্রন্থে বলেন, হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, শবেবরাতসহ চারটি রজনীতে আল্লাহ পৃথিবীর মানুষের জন্য তাঁর রহমতের দরজাগুলো খুলে দেন। ১৪ শাবান সূর্যাস্ত থেকে ১৫ শাবান ফজর পর্যন্ত তাঁর বান্দাদের জন্য রহমতের দরজা খোলা থাকে। এ রাতের ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। জিবরাইল (আ.) একবার রসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি উঠুন, নামাজ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। কারণ এটি ১৫ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য ১০০ রহমতের দরজা খুলে দেন। আপনি আপনার উম্মতের জন্য দোয়া করুন। ১৫ শাবানের লাইলাতুল বরাতকে রহমতের রাত হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ১৫ শাবানের রাতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীবের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং হিংসুক ও খুনি ছাড়া অন্য বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ)। লাইলাতুল বরাতে আল্লাহ বান্দাদের জন্য তাঁর রহমতের দরজা খুলে দেন। এ রাতে আল্লাহ বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তাদের পাপ ক্ষমা করেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদিন রসুল (সা.) বললেন, আজকের রজনীতে (শবেবরাতে) কী কী হয় তোমরা কি জান? আয়েশা (রা.) বললেন, আপনি বলুন এ রজনীতে কী কী হয়। রসুল (সা.) বললেন, আজকের রজনীতে আগামী এক বছরে পৃথিবীতে আগমনকারী আদমসন্তানদের নাম লেখা হয়। আগামী এক বছরে পৃথিবী থেকে কে কে বিদায় নেবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রজনীতে মানুষের আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। মানুষের রিজিক আল্লাহর কাছ থেকে বরাদ্দ হয়।’ (বায়হাকি)। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য সময় পূর্ণমাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবানের মতো অধিক পরিমাণ রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি।’ (বুখারি, নাসাই)। রজব ও শাবান আগমন করলেই রসুলুল্লাহ (সা.) এ দোয়াটি বেশি পাঠ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান অর্থ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবানকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদের হায়াতকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসাই)। মহান আল্লাহ শাবানের ১৫তম রজনীকে অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত করেছেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শাবানের মধ্য রাতে (১৫ শাবান) আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং প্রতিটি (মুমিন) বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তবে পরশ্রীকাতর ও মুশরিক ছাড়া।’ কিতাবুস সুন্নাহ, শরহুস সুন্নাহ। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘শাবানের ১৫তম রাতে নামাজ পড় এবং পরবর্তী দিনে রোজা রাখ। কেননা সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং আহ্বান করতে থাকেন- আছ কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? আছ কি কোনো রিজিক যাচনাকারী, আমি তাকে রিজিক দেব? আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেব? আছ কি এমন কেউ এমন কেউ ইত্যাদি।’ (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : ‘এ রাতে আল্লাহতায়ালা মাফ করে দেন উম্মতের গুনাহখাতা; কিন্তু সাত শ্রেণির মানুষের এ রাতে কোনো প্রকার অংশ থাকে না। ১. জাদুকর ২. শরাবখোর ৩. জিনাকারী ৪. আত্মীয়তা ছিন্নকারী ৫. মা-বাবার নাফরমান ৬. পরনিন্দাকারী ৭. কৃপণ; হিংসুক যে তিন দিনের বেশি অন্য মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রাখে। এদের কখনো মাফ করা হয় না।’ শবেবরাতের করণীয় সম্পর্কে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘১৫ শাবান তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ।’ শবেবরাত উপলক্ষে রাত জেগে ইবাদত যেমন নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, তওবা -ইসতিগফার ইত্যাদি। লাইলাতুল বরাতের পবিত্র রাত ধারণকারী শাবান মাসে আমাদের করণীয় হলো অধিক পরিমাণে রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া ও মাহে রমজানের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ। বিশেষ করে এ মাসের ১৫তম রজনীতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগি, দোয়া, জিকির, তওবা, ইসতিগফার, কবর জিয়ারত ও দান-সদকা ইত্যাদি করা। মহান আল্লাহ আমাদের মাহে শাবানের গুরুত্ব অনুধাবনের ও এ মাস থেকেই মাহে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের তৌফিক দান করুন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর