সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

দোয়া কবুলের রাত শবেবরাত

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

দোয়া কবুলের রাত শবেবরাত

মাহে শাবানের বরকতময় এক রজনির নাম শবেবরাত। ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে এ রাতকে ভাগ্যরজনী হিসেবে খুব গুরুত্বের সঙ্গে যাপন করা হয়। আরব বিশ্বের এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বলে থাকে। পবিত্র কোরআনে এ রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং হাদিসে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যে পাঁচটি রাতে আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াদা করা হয়েছে তার মধ্যে শবেবরাতের রাত অন্যতম। রসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাতের দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। পাঁচ রাত হলো- রজব মাসের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত, কদরের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত এবং ঈদুল আজহার রাত। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহপাক এ রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে খাস রহমত নিয়ে নাজিল হন। তিনি বান্দাদের উদ্দেশে ডাকতে থাকেন, ‘কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিজিক দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি আছ কি? আমি তার বিপদ দূর করে দেব। এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ)।

আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসুল (সা.)-কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে হুজুরকে দেখতে পাই। আমাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার আয়শা! তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তার রসুল তোমার ওপর কোনো অবিচার করবেন? আমি বললাম, আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। রসুল (সা.) তখন বললেন, আসলে আজ হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাত বড়ই বরকতময় রাত। যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে তখন আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বনু কালব গোত্রের বকরির পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি)। শবেবরাতের রজনীর ইবাদতের ফজিলত ও তাৎপর্য বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যায় এমন আরেকটি হাদিস ইবনে হারিস (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মারা গেছেন। আমি তখন উঠে হুজরের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চিমটি কাটলাম। তিনি নড়েচড়ে উঠলেন। তিনি নামাজ শেষে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে আল্লাহর রসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন হয়তো। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রসুলই ভালো জানেন। রসুলুল্লাহ (সা.) তখন ইরশাদ করলেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাত বড়ই বরকতময়। (বাইহাকি)

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর