মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সত্য সংবাদ প্রচারের তাগিদ দেয় ইসলাম

মাওলানা আবদুর রশিদ

সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের জীবনবিধান ইসলাম অসত্য অসুন্দর ও অকল্যাণের পথ থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। মহান আল্লাহ সুরা বাকারার ৪২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করছেন, ‘এবং তোমরা সত্য মিথ্যার সঙ্গে মিশিও না এবং জেনে-বুঝে সত্য গোপন কোরো না।’ রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মিথ্যা সংবাদ প্রচার, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবিরা গুনাহ।’ (বুখারি, মুসলিম)। মুমিনদের সত্যনিষ্ঠ হওয়ার যে তাগিদ আল কোরআন ও হাদিসে দেওয়া হয়েছে তা মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অবশ্যপালনীয় হওয়া উচিত। সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সত্য গোপন করা ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া যেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ সেহেতু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও এটি অনুসরণীয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সত্য প্রকাশই সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রসহ সব সংবাদমাধ্যমের জন্য তা অবশ্য-পালনীয় নীতি হওয়া উচিত। আল কোরআন নাজিল হয়েছিল মানব সমাজকে সত্য অবহিত করার জন্য। হজরত আদম (আ.) থেকে রসুল (সা.) পর্যন্ত লক্ষাধিক নবী-রসুলের আবির্ভাব হয়েছে মানুষকে সুপথে পরিচালনার উদ্দেশ্যে। তাঁরা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন আল্লাহ রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সত্যের সংবাদবাহক হিসেবে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও যা অনুসরণীয় নীতিমালা বলে বিবেচিত। এ যুগে যারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত তাদের সবারই উচিত সংবাদ পরিবেশনে আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশনা মেনে চলা। সংবাদমাধ্যমের জন্য এ ঐশী নির্দেশের তাৎপর্য অপরিসীম। সাংবাদিকদের দায়িত্ব সত্য তুলে ধরা। সঠিক খবর ও বিষয় সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা। এ ক্ষেত্রে কোরআনের নির্দেশনা গাইডলাইন হিসেবে বিবেচিত হলে দেশ, জাতি ও সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত হবে। সুরা হুজুরাতের ৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, পাছে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বস এবং তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হয়।’ প্রত্যেক সংবাদকর্মীর উচিত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। সংবাদ পরিবেশনে সীমা লঙ্ঘন যাতে না হয় সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দায়িত্বহীনতার পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশ, জাতি ও সাধারণ মানুষ। আল কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘কিন্তু সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে রসুল (সা.) মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে কবিরা গুনাহ উল্লেখ করেছেন। সংবাদ পরিবেশনে সততার ব্যত্যয় মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে অশান্তির দাবানল। অসত্য সংবাদ পরিবেশনা ও গুজব সৃষ্টি জাতীয় জীবনে কী বিপর্যয় ঘটায় তা দেশ ও বিশ্বের সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালেও অনুমিত হবে। রসুল (সা.) প্রাপ্ত প্রতিটি তথ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতেন। সংবাদ পরিবেশনের আগে তার যথার্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রত্যেক সংবাদকর্মীর নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর