মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মহাপ্রয়াণ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মহাপ্রয়াণ

শুক্রবার ১১ মার্চ প্রিয় পীর হাবিবের জল-জোছনার শহর সুনামগঞ্জে গিয়েছিলাম এক শোকসভায়। গত পর্বে এসব নিয়ে লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম এ পর্বে বিশদ আলোচনা করব। কিন্তু কেন যেন হঠাৎই ১৯ মার্চ আচমকা শরীরটা খারাপ হয়ে যায়। দুপুরে সাবালিয়ায় ইলাদের বাড়ি খেয়েছিলাম। বড় যত্ন করে ওরা খাইয়েছে। খাবারের পুরো সময়টাই ইলা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। যেমনটা আমার ছোট বোনেরা মা থাকতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকত। ৪টায় বাড়ি ফিরেছিলাম। সারা দিন বেশ ঝরঝরে লাগছিল। কিন্তু রাত ৯টায় খাবার খেয়ে ড্রয়িং রুমে বসতেই অস্বস্তি, অসম্ভব রকম বুকে চাপ। একদম দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম। কয়েকবার গরম পানি খাওয়ায় চার-পাঁচ বার বমি হয়েছে। বমি হলে মুখ বিস্বাদ হয়, তেতো হয়, চুকা ঢেঁকুর ওঠে- ওসবের কিছুই ছিল না। কোনো দুর্গন্ধ ছিল না। কিন্তু সারা রাত এক মিনিটও ঘুমাতে পারিনি। সারা শরীর এবং পেটে মারাত্মক ব্যথা। তাই গতকাল আবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সেপ্টেম্বরে গলব্লাডারে ছোট্ট একটা স্টোন ধরা পড়েছিল। হঠাৎ করোনা হওয়ায় অপারেশনের দিন তারিখ ঠিক করেও আর করা হয়নি। শরীরও মারাত্মক রকমের খারাপ হয়ে গিয়েছিল। দু-তিন দিন আগে মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাতের কাছে গিয়েছিলাম। বড় আগ্রহী মানুষ। রোগীর সঙ্গে এমন আন্তরিক ব্যবহারই করা দরকার। আমাদের আরেক প্রিয় ডাক্তার, মরমি মানুষ অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। তাঁর সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল। তিনিও তাড়াতাড়ি অপারেশনটা করে ফেলতে বলেছিলেন। হ্যাঁ, এভাবে যখন তখন আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পাওয়ার চাইতে অপারেশন করে ফেলাই ভালো।

পীর হাবিব সত্যিই একজন ভালো মানুষ। লিখতে ওর হাত কাঁপত না। তবে মনের কথা অনেক কিছুই লিখতে পারত না বলে কখনো সখনো ছটফট করত। জীবমাত্রই মরণশীল। যার আত্মা আছে তার মৃত্যু আছে। তবে সুনামগঞ্জের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই ওকে ভালোবাসে। পীর হাবিবের বড় ভাই অ্যাডভোকেট মো. মতিউর রহমান পীর, ছোট ভাই পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ সত্যিই আদর্শ ভাই। ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের এমন ভালোবাসা আর দরদ থাকাই উচিত। প্রায় দুই-আড়াই বছর পর একটা মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়েছিলাম। এর আগে দু-একটা ঘরোয়া আলোচনায় অংশ নিলেও প্রকাশ্য মাঠে হাজার হাজার মানুষের কোনো সভায় কখনো উপস্থিত হইনি। পীর হাবিবের আত্মার শান্তি কামনায় সভাটিকে শোকসভা না বলে জনসভা বলাই যথার্থ। বহু লোক যেমন কথা শুনতে হাজির হয়েছিলেন তেমনি বহু অতিথি জ্ঞানী-গুণীজন দূরদূরান্ত থেকে কষ্ট করে গিয়েছিলেন। পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ জাতীয় পার্টির সদস্য। জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্নু উপস্থিত হয়েছিলেন শোকসভায়। বেশ ভালো বলেছেন। নারায়ণগঞ্জের নাসিম ওসমানের ভাই শামীম ওসমান, সুনামগঞ্জ-১-এর এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৫-এর এমপি মহিবুর রহমান মানিক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, সাবেক রাকসু ভিপি রাগিব আহসান মুন্না, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, সাবেক কৃতী ফুটবলার কায়সার হামিদ ও আরও অনেকে। সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত। শোকসভায় জাসদের হাসানুল হক ইনুকে শুধু একটু অন্যরকম মনে হচ্ছিল। আর বাকি সবাই মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই পীরের জীবন, তার ছেলেবেলা, বেড়ে ওঠা এসব নির্বিবাদে আলোচনা করেছেন। ডিবিসির প্রণব সাহাকে দেখলাম। ভারতে চিনতাম প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আর দেশে চিনি আমার প্রিয় সহকর্মী রংপুরের হুমায়ুন কবীরের প্রণব সাহাকে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। খুবই সরল-সহজ অমায়িক মানুষ। ডিসি-এসপি দুজনই সিনেমার নায়কের মতো। দু-এক জন বললেন, ব্যবহারও নাকি ভালো। আমারও তেমনটাই মনে হলো। দেশে ভালো মানুষ পাওয়া খুবই মুশকিল। তাই সব সময় ভালো মানুষের চিন্তায় থাকি। মিসবাহ যাকে পথপ্রদর্শক হিসেবে দিয়েছিল সেই রেজোয়ান বড় ভালো, দারুণ চটপটে মানুষ। এ কথা-ও কথা আলাপ হতেই লেইস-কয়েসের কথা ওঠে। সে কীভাবে যেন লেইসকে ফোনে মিলিয়ে দেয়। প্রথম প্রথম লেইস বুঝতে পারেনি কারণ আমি নাম বলিনি। কিছু কথার পর সে পাগলের মতো বলে ওঠে, ‘হায় হায় স্যার!’ অতি আপনজনের সঙ্গে যেভাবে কথা হয় লেইসও সেভাবেই কথা বলে। ফেরার সময় খেয়ে যেতে বলে। লেইস-কয়েসদের বাড়িতে শতবার খেয়েছি। তাই কোনো আপত্তি করিনি। সাড়ে ৮টায় ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম। ওদের বাড়ি যেতেই চারদিক থেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, কর্মীরা আসতে থাকে। তাদের বড় বেশি আগ্রহ, তারা আমার প্রতি বিরাট আশা নিয়ে বসে আছে। যাদের ১৮-২০ বছরের দেখেছি তারা এখন ৭০ পার করেছে তবু সেই আগের মতোই আছে। বহুদিন পর সিলেটে বড় ভালো লেগেছে। স্টেশনে পৌঁছে দিতে লেইস এসেছিল। লেইস-কয়েসের আরেক ভাই খাইর আহমেদ ফুকু বহু বছর যাবৎ আমেরিকায় থাকে। কয়েকদিন হলো সিলেট এসেছে। ওদের পুরো বংশই আমার জন্য পাগল। কয়েকজন অতিথি ছিল বলে স্টেশনে আসতে পারেনি। তবে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন বীরবিক্রমের ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক’ ইংরেজি-বাংলা দুই কপিই আমাকে পাঠিয়েছে। সাড়ে ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাড়ে ১১টায় ট্রেনে উঠেছিলাম। সফরটা বেশ ভালো হয়েছে। রেজোয়ান সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য যার বাড়িতে তুলেছিল তারাও খুব ভালো মানুষ। ১০ তারিখ রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে কমলাপুর স্টেশনে গিয়েছিলাম দেড়-পৌনে দুই ঘণ্টায়। সকালে সে পথ পাড়ি দিতে মাত্র ১৩ মিনিটের প্রয়োজন হয়। সিলেট সফরে কোনো ক্লান্তি ছিল না, কোনো কষ্ট ছিল না। সাবলীলভাবেই সফর করে ফিরেছিলাম। কিন্তু বাদ সাধে ১৯ তারিখ রাতে। হঠাৎই কারও শরীর এতটা খারাপ হয়ে যেতে পারে আমার কল্পনায়ও ছিল না। তাই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে পারিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে দেখা যাক কী হয়।

মার্চ বাঙালির মাস, সংগ্রামের মাস, শৌর্য-বীর্যের মাস। ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ এসব পৃথিবী কাঁপানো দিন। হঠাৎই সেদিন খবর পেলাম সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি একজন ভালো মানুষ। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি হিসেবে যোগদান করে মেয়াদ শেষে তিনি আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে এসেছিলেন এটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। তা ছাড়া অনেক কিছুই ভালো করেছেন, করার চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার পছন্দে তিনি যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি শেখ হাসিনার পছন্দেই তাঁর সরকারের সময় মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকতে বেশ কয়েকবার বঙ্গভবনে গেছি। অবসরে যাওয়ার পর তাঁর ঢাকার বাসায় গেছি, অনেক আলাপ-আলোচনা করেছি। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে আমার যেমন ভালো লেগেছে, আমার সঙ্গে আলোচনা করে মনে হয় তাঁরও বেশ ভালো লেগেছে। ৯২ বছর পার করে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

কেন্দুয়ার এক উপনির্বাচনের সময় সাহাবুদ্দীন সাহেবের বাড়ির আশপাশে অনেক ঘুরেছি। লোকজনের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। বিচার বিভাগে চাকরি করার কারণে হয়তো কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না। আর যারা চাকরি-বাকরি করেন চাকরি থাকা অবস্থায় তারা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের তেমন প্রয়োজনবোধ করেন না। সেই ব্রিটিশ অফিসারদের মতো, কর্মচারীদের মতো সাধারণ মানুষ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা এটাই আমাদের সমাজে সব থেকে বড় দোষ, সব থেকে বড় অসুখ। এটা যে কবে দূর হবে বলা যায় না। আর জনপ্রতিনিধিদের দক্ষতা যোগ্যতা ক্ষমতা যেভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে তাতে সরকারি কর্মচারীদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার প্রবণতা খুব সহজে দূর হবে না। সমাজের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কেউ যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকর-বাকর নয়, বরং তারাই তাদের সেবক এ ধ্যান-ধারণায় সমাজের শক্তি বৃদ্ধি না হলে খুব সহজে বদলাবে না। সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সত্যিই একজন নির্লোভ নির্বিবাদী মানুষ। তাঁর মতো নির্লোভ মানুষ খুব সহজে পাওয়া যাবে না। সরলতার মূর্ত প্রতীক তিনি। নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন, কিন্তু কোনো হামবড়া ভাব ছিল না। নিজেকে কখনো বড় ভাবতেন না। মানুষের তাঁর কাছে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ ছিল না। কিন্তু কেউ কাছে গেলে ভালো আচরণ করতেন এও তাঁর একটা চমৎকার গুণ ছিল। আল্লাহ তাঁকে বেহেশতবাসী করুন এবং তাঁর নিকটজনদের এ দুঃখ সইবার শক্তি দিন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমার জীবন-মরণ, আমার সাধনা। যৌবনে প্রেম করিনি, কোনো মেয়েকে ভালোবাসিনি, ভালোবাসা কাকে বলে জানতাম না। ভালোবাসার দুর্নিবার আকর্ষণ সম্পর্কে কোনো বোধই ছিল না। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী হাত-পা ছুড়ে বক্তৃতা করে মানুষকে যখন নাচাতেন, তাঁকে দেখে দেখে অমন করার মাঝেমধ্যে সাধ জাগত, ইচ্ছা হতো। সে ইচ্ছার প্রতিফলন ’৬২ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে শুরু করেছিলাম। ’৬৫ সালে আবার দু-তিন বছরের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে আজোবধি একইভাবে আছি। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব-নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব, তাঁর দেশপ্রেম আমাকে উতলা করেছিল, পাগল করেছিল। তাঁকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেই দেশকে ভালোবাসতে শিখেছিলাম, জননী-জন্মভূমিকে স্বর্গদপী গরিয়সী জেনেছিলাম। মা-জননী চলে গেছেন কয়েক বছর, জন্মভূমি রয়ে গেছে বিদ্যমান, থাকবেও বহুকাল। তাই জননী-জন্মভূমিকে নিয়ে তাচ্ছিল্য হলে অবজ্ঞা অসম্মান হলে খুবই ব্যথিত হই। কিন্তু আমি ব্যথিত হলে কী হবে, যাদের গায়ে ব্যথা লাগার তাদের যদি না লাগে তাহলে বলে কয়ে কী হবে? যথাযথ সামাজিক মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ, ৭ মার্চ, স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ কোনোটাই পালন হয় না। বড় কষ্ট লাগে যখন সবখানে শুধু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে মোটেই খারাপ লাগে না। বরং ভালোই লাগে। কিন্তু যেখানে সেখানে যখন তখন মাইকের অপারেটররা ৭ মার্চের ভাষণ বাজিয়ে যখন লোক জড়ো করে তখন সত্যিই খারাপ লাগে। এবার ৭ মার্চের ভাষণের কোনো মর্যাদা বাড়েনি। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন খুব একটা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়নি। সরকারি অফিস-আদালতকে জাতীয় দিন পালন করতে সরকারি নির্দেশ দিলে সে তো পালিত হবেই। তার পরও বলব, বগুড়ায় তো এবারও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ যেনতেন করে পালন করা হয়েছে। বগুড়ায় আওয়ামী লীগের সামর্থ্য কমেনি। একসময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর রাজবাড়ি আওয়ামী লীগের একসময়ের সভাপতি মমতাজের ছেলে কিনেছে। আমি মমতাজকে সেই ’৭২ সাল থেকেই চিনি। তিনি বগুড়ার রাজা ছিলেন না। বগুড়া শহরে দুই পাখি জমি কেনার কখনো সামর্থ্য ছিল না। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজবাড়ি ওটা কারও কেনার কথা ছিল না, ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বাড়িটি সংরক্ষণ করার কথা। করটিয়ার জমিদারবাড়ি তার ছেলেমেয়েরা বিক্রি করে খেয়েছে। রাজা-বাদশাহ-জমিদারদের ছেলেমেয়ে এমনই হয়। মুঘল বাদশাহ বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেবের বংশ বুনিয়াদরা দু-এক জন যারা বেঁচে আছেন তারা এখন দিনমজুরি, ভ্যান-রিকশা ও অন্য কিছু বা কায়িক পরিশ্রম করে খান। মহীসুরের বাঘ টিপু সুলতানের বংশের অনেক লোককে আমি নিজেই কলকাতার নানা স্থানে এসব কায়িক পরিশ্রম করে সংসার চালাতে দেখেছি। বিপ্লবী কবি কাজী নজরুল ভুল বলেননি, ‘সকালবেলার আমির রে ভাই, ফকির সন্ধ্যাবেলা।’ তাই সবাই যদি এ কথাটা সব সময় মনে রাখতে পারে তাহলে আর কোনো দ্বন্দ্ব থাকে না।

১৫ মার্চ ছিল বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগপূর্তি। বাংলাদেশ প্রতিদিন দ্বিতীয় যুগে পা দিল। প্রতিদিনের সঙ্গে মিলেমিশে প্রথম যুগ কাটিয়ে দিলাম। পরের যুগের কতটা নাগাল পাব দয়াময় আল্লাহই জানেন। নঈম নিজামের সুদক্ষ পরিচালনায় এত বিপুল প্রচারিত আর দ্বিতীয় কোনো সংবাদপত্র নেই। কত মাধ্যম, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, হাতের মোবাইলের বোতাম টিপলেই সারা দুনিয়া এসে হাজির হয়। তার পরও এমন একটি পত্রিকা প্রতিদিন ঘরে ঘরে কড়া নাড়ছে। এ সত্যিই এক মহাবিস্ময়! মানিকজোড় পীর হাবিব ও নঈম নিজাম পাশাপাশি বসে পত্রিকাটি দেখভাল করত। একজন চলে গেছে, আরেকজনকে আল্লাহ সুস্থ রাখুন, দীর্ঘায়ু দিন। বাংলাদেশ প্রতিদিন মানুষের দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বেদনার খবর বয়ে বেড়াক রাতদিন, মানুষের বিশ্বস্ত সাথী হয়ে পাশে দাঁড়াক- এ প্রত্যাশা আমার দ্বিতীয় যুগের।

 

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর