শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসলামে হত্যাকাণ্ড মারাত্মক অপরাধ

মাওলানা আবু তালহা তারীফ

ইসলামে হত্যাকাণ্ড মারাত্মক অপরাধ

১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এ-দেশি দোসররা গণহত্যা চালিয়েছে বাংলাদেশে। দুনিয়ার ইতিহাসে এত বড় গণহত্যা অতীতে কখনো ঘটেনি। নারীর সম্ভ্রম হরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে পাকিস্তান  সেনাবাহিনীর মানুষবেশী নাপাক জীবেরা। দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ-শাসন অপমানের শিকার বাঙালি জনগণ তখন ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ হৃদয়ে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিজেদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে দেশের জন্য। জানা-অজানা বহু মানুষ হারিয়ে গেছে ফিরে না-আসার দেশে। বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয় তারা শহীদ। কারণ দেশের জন্য, মজলুম জনতার দাবি আদায়ের স্বার্থে লড়াই করা ইসলামী নীতিরই নামান্তর। আল কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর পথে জীবন দেয় তাদের মৃত বোলো না। বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৪)।  আল কোরআনে একজন মানুষ হত্যাকে গোটা মানব জাতিকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৩২)। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্মম হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের শিকার হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে খুন করবে, সে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না, যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ ৪০ বছরের পথের দূরে থেকে পাওয়া যাবে।’ (বুখারি)। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিনের হত্যাকাণ্ড আল্লাহর কাছে সারা দুনিয়া ধ্বংসের চেয়েও বেশি মারাত্মক।’ তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘জঘন্য কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, কাউকে হত্যা করা, জাহান্নাম অনিবার্য হয় এমন মিথ্যা শপথ করা।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসায়ি)। এদিকে রাষ্ট্র রক্ষার কাজে নিয়োজিত লোকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে অতি উত্তম।’ অন্য হাদিসে রসুল (স.) বলেছেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারে না, তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্নোত্তর থেকে সে মুক্তি পাবে।’ (তিরমিজি, আবুদাউদ)। ইসলাম কোনো পরাধীনতাকে পছন্দ করে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে মুক্ত করে তাদের গুরুভার ও শৃঙ্খল থেকে যা তাদের ওপর ছিল। সুতরাং যারা তার প্রতি বিশ্বাস করে তাকে সম্মান প্রদর্শন করে, তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করে এবং যে নুর তার সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে এর অনুসরণ করে তারাই হলো সফলকাম।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ১৫৭)। দেশপ্রেমিকরা মৃত্যু উপেক্ষা করে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন এবং জুলুম-নির্যাতন থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন। প্রত্যেক মানুষ তার ভূমিষ্ঠস্থান এবং তার লালনপালনের স্থানটিকে সহজাতভাবেই ভালোবাসে। কেননা জন্মভূমিকে ভালোবাসা একজন নাগরিকের নৈতিক ও ইমানি দায়িত্ব। তা ছাড়া এটা রসুল (স.)-এর আদর্শ। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা ত্যাগে তাঁর চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি ঝরছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘হে মক্কা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাফিররা যদি আমাকে বের করে না দিত তাহলে তোমাকে ত্যাগ করতাম না।’ আবার যখন মদিনা থেকে অন্যত্র বের হতেন তখন তাঁর মন কাঁদত। সফর শেষে ফিরে যখন উহুদ পাহাড় দেখতেন তখন খুশি হয়ে যেতেন এবং বলতেন ‘এ উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি।’ (বুখারি)

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর