বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

আসুন আমরা প্রকৃত ইমানদার হই

মাওলানা শেখ তারেক হাসান মাহদী

আসুন আমরা প্রকৃত ইমানদার হই

আরবি ‘ইমান’ শব্দের অর্থ বিশ্বাস স্থপন। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার সবকিছু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করাকে ইমান বলে। যিনি ইমান গ্রহণ করেন তাকে মুমিন বলা হয়। দুনিয়াজুড়ে মুসলিম মনীষীরা ইমান ও মুমিনের সংজ্ঞায় এমনটিই বলে আসছেন। দর্শন শাস্ত্রমতে ব্যক্তির বিশ্বাস তার কর্মে প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির আচরণ ও কর্ম তার বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। আগুন সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস হলো এটি সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। হাজার বছর ধরে আগুনের পূজা-আর্চনা করার পরও মুহূর্তের জন্য পূজারীকে শান্তির পরশ দেবে না আগুন। তাই আজ পর্যন্ত কোনো অগ্নিপূজক ভুলেও আগুনের দাহ্য শক্তি পরীক্ষার নামে নিজেকে কিংবা নিজের সম্পদকে তার কাছে সমর্পণ করেনি। এ উদাহরণের পর বলতে চাই, রসুল (সা.) আমাদের কাছে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার সব বিশ্বাসের সঙ্গে কাজে প্রতিফলিত করতে পারলেই আমরা মুমিন হব। আল কোরআন তাই বলছে, ‘ইন্নাল্লাজিনা আমানু ওয়া আমিলুস সালিহাত’ অর্থাৎ ‘যারা বিশ্বাস করে এবং সে বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করে’। ‘আল্লাজিনা ইউমিনুনা বিল গায়বি ওয়া ইউকিমুনাস সালাতি’ অর্থাৎ ‘যারা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বিশ্বাসের ফলস্বরূপ গায়েবের প্রভুর নির্দেশ মোতাবেক সালাত কায়েম করে’। এমনিভাবে আল কোরআনের অসংখ্য আয়াতে বিশ্বাস ও কাজের সমন্বয়কেই ইমান বলেছে। এর বিপরীত যারা চলবে তাদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। একদল বিশ্বাস করবে না তারা কাফির। আরেকদল বিশ্বাস করবে কিন্তু সে বিশ্বাস কাজে পরিণত করবে না, তারা মুনাফিক বা কপট। এ দুই শ্রেণিই চিরদিনের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে মুনাফিক অর্থাৎ যারা শুধু বিশ্বাস করবে কাজে পরিণত করবে না তাদের অবস্থান কাফিরের চেয়েও ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন, ‘ইন্নাল মুনাফিকিনি ফিদ দারকিল আসফালি মিনান নার’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয় কপট মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের তলদেশে’। এবার কোরআনের কষ্টিপাথরে মিলিয়ে দেখি আমরা সত্যিই বিশ্বাসী তথা মুমিন হতে পেরেছি কি না। তার আগে বলে রাখি, এত দিন যারা ভেবে এসেছেন তোতা পাখির মতো না বুঝে কিছু কলমা পড়লেই বিশ্বাসী তথা ইমানদার হওয়া যায় তাদের ধারণা কোরআনের আলোকে সম্পূর্ণ ভুল। কোরআন কোথাও বলেনি মুসলমান হওয়ার জন্য ভারত উপমহাদেশের ধর্মব্যবসায়ীদের বানানো ‘পাঁচ কলমা’ বা ‘দশ কলমা’ পড়তে হবে। কোরআন বলেছে আল্লাহ, নবী, পরকালসহ আরও কিছু বিষয় বিশ্বাস করলে এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলেই কেবল একজন মানুষ মুমিনের মর্যাদা লাভ করতে পারবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর