শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া সঠিক রোগ নির্ণয় কঠিন

ডা. এ এম শামীম

সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া সঠিক রোগ নির্ণয় কঠিন

সঠিক চিকিৎসার জন্য নির্ভুল রোগ নির্ণয় জরুরি। সম্ভাব্য রোগ শনাক্ত অথবা দেহে যে রোগ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগ নির্ণয় করা হয়। শুরুতেই যদি সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা যায় তাহলে প্রায় শতভাগ রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে রোগের পরীক্ষা করতে হয়। তবে আমাদের দেশে হামেশাই শোনা যায়- একই পরীক্ষার ফলাফল বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিন্ন হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা বহু মানুষের অনুযোগ শুনি। কেউ কেউ ধারণা করেন শুধু আয়ের জন্য রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো এ কাজ করছে। সম্প্রতি আমার পরিচিত একজন তাঁর বুকের এক্স-রে ফিল্ম দেখিয়ে বললেন, দেখেন আমার হৃৎপিণ্ড বড় দেখা যাচ্ছে। পরে জানলাম যখন এই এক্স-রেটি করা হয়েছিল তখন পদ্ধতিগত কিছুটা ঘাটতি ছিল। একই রোগ নির্ণয়ের ফলাফল কেন্দ্রভেদে ভিন্ন্ন হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তবে এ কথা সত্য, স্বাস্থ্যসেবায় যেসব উদ্যোক্তা মানুষের সেবার জন্য কাজ করছেন তাঁদের প্রতিষ্ঠান অবশ্যই ইচ্ছাকৃত ভুল করে না। কেননা এতে সংশ্লিষ্ট রোগ নির্ণয় কেন্দ্র বা হাসপাতালের ভাবমূর্তি জড়িত। রোগ নির্ণয় হোক বা অন্য স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিটি স্তরে সমন্বিত চেষ্টার প্রয়োজন। এখানে এতটুকু ঘাটতি থাকলে রোগ নির্ণয় ভুল হতে পারে। আবার শতভাগ নির্ভুল সম্ভবও নয়। শতকরা ১ বা ২ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ নিরীক্ষা ভুল হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রেও ফলাফলে ত্রুটি পাওয়া গেলে আবার কয়েক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হয়। এতে সেবা দাতা ও গ্রহীতা দুই পক্ষকেই সহযোগিতার মানসিকতা রাখতে হবে।

এক্স-রে নিরীক্ষার জন্য অবশ্যই রেডিওলজিস্ট ও টেকনোলজিস্টের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। কোনোভাবেই তাড়াহুড়া করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, রোগ নিরীক্ষার ফলাফল শুধু একটি মাত্র নম্বর নয়, এটা মানুষের জীবন। একে কাগজে লেখা একটি মাত্র নম্বর না ভেবে জীবন ভাবতে হবে। যাঁরা পরীক্ষার কাজ করেন সেসব টেকনোলজিস্টকে ধীরস্থিরভাবে কাজ করতে হবে। কিছু স্বাভাবিক ভুল রয়েছে যেগুলোকে আমরা ‘কমন মিসটেক’ বলি; সেগুলো যেন না হয় এর জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আর অবশ্যই রেডিওলজিস্ট যাঁরা থাকবেন তাঁদের পরীক্ষার ক্ষেত্রে সব নিয়ম মানা হয়েছিল কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেসব রোগী রোগ নিরীক্ষার জন্য আসছেন তাঁদের কথাগুলো নিবিড়ভাবে শুনলে অনেক ক্ষেত্রে ভুল ফল হওয়া রোধ করা যায়। কয়েক দশক ধরে একটি অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনছি- নিজের পছন্দের কেন্দ্রে বা হাসপাতালে রোগ নিরীক্ষা করা না হলে সে ফলাফল চিকিৎসক গ্রহণ করতে চান না। এটা আস্থার বিষয়। যে চিকিৎসক নিজের কেন্দ্র বা হাসপাতাল অথবা পছন্দের কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন, তা আস্থার জন্য। চিকিৎসকরা এখনো অচেনা একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের ফলাফলকে আস্থায় নিতে পারছেন না। কেননা দেশে বহু রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে অসৎ লোকের আনাগোনা, যারা মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। সঠিক ফলাফল পাওয়া দূরের কথা সেসব জায়গায় রোগ নিরীক্ষার ভালো যন্ত্রপাতিই নেই। নেই দক্ষ টেকনোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট। এ কারণেই চিকিৎসক নিজের পরিচিত বা নিজ কেন্দ্রে রোগ নিরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেন। আবার কেউ মফস্বলের কোনো একটি কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করলে চিকিৎসক ওই ফলাফলের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। ওই কেন্দ্র সব মান বজায় রেখে পরীক্ষা করেছে কি না তা তো জানা নেই। সে ক্ষেত্রে নিতান্তই বাধ্য হয়ে ওই ফলাফলের ওপর চিকিৎসক আস্থা রাখতে পারেন না। যেসব কেন্দ্র সম্পর্কে চিকিৎসকের জানাশোনা আছে অথবা ভাবমূর্তি ভালো এমন কেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে রোগ নিরীক্ষা করতে বলেন। তবে প্রশ্ন আসতেই পারে, সরকারের নিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল থেকে রোগ নির্ণয় করা হলে সমস্যা থাকার কথা নয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান (কমিউনিটি ক্লিনিক বাদে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি পর্যায়) রয়েছে সাড়ে ছয় শ। এ ছাড়া সরকারের অনুমোদিত বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের (হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক) সংখ্যা ১০ হাজার ৫৮২টি। নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে আরও প্রায় ১০ হাজার এমন তথ্য আমরা গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পারছি। নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত অনেক প্রতিষ্ঠানে আধুনিক রোগ নিরীক্ষা ও চিকিৎসা যন্ত্রাংশ নেই, দক্ষ লোকবল নেই। কোনো কোনো কেন্দ্র আবার নিরপত্তা প্রহরী বা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়েও টেকনোলজিস্টের কাজ করছে বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ পাওয়া যায়। রেডিওলজিস্ট রোগ নিরীক্ষণের প্রতিবেদন না লিখে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের অন্য কর্মীরাই লিখছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস বলছে, দেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের মধ্যে নয়জন কোনো না কোনো কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম। তার মধ্যে ৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ সঠিক চিকিৎসার অভাব অথবা সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাত অসুখের কারণে অক্ষম হচ্ছেন ২৩ শতাংশ মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে অপচিকিৎসার পরিমাণ বাড়ছে বলে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য বলছে- সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বাইরে ওষুধের দোকান, হাতুড়ে চিকিৎসক ও নিজে নিজে চিকিৎসা গ্রহণ করে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ। ফলে সেবাগ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বনের বিকল্প নেই।

ভারতে যেমন ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিবারেশন ল্যাবরেটরিজ (এনএবিএল) রয়েছে। ভারতের হাসপাতাল ও রোগ নিরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর পরীক্ষাগারের মান এনএবিএল নিশ্চিত করে। আমাদেরও বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড (বিএবি) রয়েছে। সরকারের এ সংস্থা আন্তর্জাতিক মান ও গাইডলাইন অনুসারে বিভিন্ন পরীক্ষাগার, সনদ প্রদানকারী সংস্থা, পরিদর্শন সংস্থা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রিডিটেশন সনদ দিয়ে থাকে। বিএবি দেশের রোগ নিরীক্ষা কেন্দ্র ও হাসপাতালের যন্ত্রাংশ যথাযথ মানের কি না তা পরীক্ষা করছে। প্রায় সব রোগ নিরীক্ষা কেন্দ্র ও হাসপাতালকে বিএবি একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে আনবে। তাতে হয়তো আরও পাঁচ-ছয় বছর লেগে যাবে। কিন্তু একসময় মান নিশ্চিত অবশ্যই হবে। সবার জন্য এগুলো করা হলে তা হবে দ্বিতীয় মাপকাঠি। যেমন মফস্বলে ৫ কি ১০ শতাংশ ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকতে পারে। কিন্তু রোগীরা তা কীসের ভিত্তিতে বুঝবেন, মানুষের মুখে মুখে জানা ছাড়া অন্য কোনো উপায় তো নেই। দেশে হয়তো ৮০০ থেকে হাজারখানেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে যাদের রোগ নিরীক্ষার ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আস্থা রাখা যায় না। ফলে চিকিৎসক সব কেন্দ্রের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে পারেন না। আস্থা রাখা যায় এমন কেন্দ্র থেকে পুনরায় পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

একই রোগ নিরীক্ষণের ফলাফল কেন্দ্রভেদে ভিন্ন হওয়ার আরও কারণ রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সময়ের তারতম্যের কারণে কেন্দ্রভেদে একই রোগ নিরীক্ষার ফলাফলে পার্থক্য দেখা যায়। ধরুন যে রোগ নিরীক্ষা খালি পেটে করার কথা তা যদি সকাল ৮টার সময় একটি কেন্দ্রে করা হয়, পরে যদি রোগী সামান্য কিছুও খেয়ে সকাল ১০টায় পাশের কোনো কেন্দ্রে গিয়ে নিরীক্ষা করেন, অথবা দুপুরে অন্য একটি কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করা হয় তাহলে কিন্তু ফলাফল কখনই এক হবে না। কারণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে যে নিয়ম রোগীর মানার কথা তা মানা হয়নি। খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষার জন্য অন্তত আট ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হয়। রক্তে চর্বির মাত্রা পরীক্ষা করাতে ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খালি পেটে থাকার নিয়ম। এই সময়ে কেবল পানি পান করতে পারবেন। প্রসাব পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট টিউব সংগ্রহের পর আপনার কিছু করণীয় রয়েছে। এসব না মানলে পরীক্ষা ফলাফল সঠিক হয় না। তবে কোনো হাসপাতাল বা কেন্দ্রে ফলাফল নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে শুরুতে তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা উচিত। কর্তৃপক্ষ ওই পরীক্ষা আবারও বিনামূল্যে করবেন। এটাই দায়িত্বশীলতা। শতভাগ নির্ভুল কিছুই হয় না। এখানে সহযোগিতা না করলে সুন্দর সমাধান হবে না। রোগী ও কেন্দ্রে কর্মীরা একে অন্যের পরিপূরক। এটা সত্য, ভুল পরীক্ষা রোগীর জন্য বড় আর্থিক ক্ষতি। কেননা তাঁকে অনেক পরীক্ষা করতে হচ্ছে। চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলোর উচিত ভুল ফলে বিনামূল্যে ওই পরীক্ষা করিয়ে দেওয়া।

আল্ট্রাসনোগ্রাফির কথা আমরা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি। এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগ নিরীক্ষা পদ্ধতিতে এক নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে। সহজেই এতে পেটের যে কোনো ধরনের পীড়া নির্ণয় করা যায়। যকৃৎ, বৃক্ক বা কিডনির রোগ, টিউমার, পাথরের প্রদাহ, রক্তনালির কোনো জটিলতা, থাইরয়েডের জটিলতা, প্রসূতির গর্ভে ভ্রƒণ থাকা অবস্থায় বাচ্চার অবস্থান, ত্রুটিসহ অনেক বিষয় এতে উঠে আসে। তবে এ পরীক্ষার জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। একই সঙ্গে যাঁরা পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত তাঁদেরও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হয়। এসব নিয়ম না মানলে পরীক্ষা হয়ে গেলেও তাতে ত্রুটি থেকে যাবে। তাতে ওই পরীক্ষা আবারও করতে হয়। ফল ভুল হলে কেউ অন্য কোনো কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করছেন। তখন দেখা যায় সঠিক নিয়ম মানা হয়েছে, রিপোর্টে ভুল নেই। তখন তাঁরাই বলছেন, অমুক কেন্দ্রে সঠিক পরীক্ষা হয় না। সব রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি এক নয়। এ ছাড়া সিটি স্ক্যান, এন্ডোস্কপি, কলনোস্কপি এসব পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট প্রস্তুতি প্রয়োজন। অবশ্যই এখানে চিকিৎসকের কিছুটা ভুল হতে পারে। যেমন শরীরে কোন স্থানটিতে পরীক্ষা করতে হবে তা ব্যবস্থাপত্রে অনেক সময় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় না। পরীক্ষার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি মান্য করা অত্যন্ত জরুরি। এসব প্রস্তুতি না নিলে পরীক্ষা ত্রুটিমুক্ত হয় না। এতে রোগীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়। রোগীকে সব নির্দেশনা মানতে হবে। যাঁরা রোগ নিরীক্ষায় নিয়োজিত তাঁদেরও ধৈর্যশীল হতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়। এত আয়োজনের উদ্দেশ্য কিন্তু সঠিক সেবা দেওয়া ও সেবা পাওয়া। আমরা কারও ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ফলাফল পেলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও বা আবারও পরীক্ষার পরামর্শ দিই। এতে রোগীর মনে হতে পারে অযথা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। আসলে অস্বাভাবিকভাবে কোনো ফলাফল পাওয়া গেলে তা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত না হয়ে চিকিৎসা দেওয়া যায় না। যেমন একজন ৩০ বছরের যুবকের যে রোগ হওয়ার কথা নয় সে রোগ দেখা দিলে আরও পরীক্ষার বিকল্প নেই। বারবার মিলিয়ে দেখতে হবে কোথাও ভুল হয়েছে কি না। তখন একটি পরীক্ষার ওপর নির্ভর করা যায় না। হাসপাতাল বা কেন্দ্রগুলো কিন্তু সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বলছি না বাংলাদেশে সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নৈতিকতার সঙ্গে চলছে। তবে অবশ্যই সিংহভাগ সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করছে। একটি পরীক্ষায় রোগ নিশ্চিত না হওয়ার চেয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষায় রোগ নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু পরীক্ষার ফলাফল নয়, চিকিৎসকের কথাও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো চিকিৎসকই ইচ্ছাকৃত ভুল পরামর্শ দেন না। চিকিৎসক যেসব বিষয় শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেন না শুধু সেসব বিষয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষায় পাঠান। এ ক্ষেত্রে আমাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর শতভাগ আস্থা রাখা। অনেকেই বিভিন্ন সময় বলেন, চিকিৎসক ভুল চিকিৎসা করেছেন। এটা সঠিক নয়। কেননা ভুল চিকিৎসা একটি আপেক্ষিক বিষয়। চিকিৎসকই ভালো জানেন কখন কোন চিকিৎসা প্রয়োজন। ২০১৭ সালে আমার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। সহকর্মীরা তাঁকে নিকটবর্তী একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। এক দিন পরও অবস্থার উন্নতি না হলে তাঁকে আমাদের বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলি। পরীক্ষায় দেখা যায় তাঁর মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বললেন, এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়, ঝুঁকিপূর্ণ। অস্ত্রোপচারে বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা ১০ শতাংশের মতো। বাধ্য হয়ে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার না করে শুধু ওষুধ প্রয়োগের চিকিৎসার সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ পর তাঁর জ্ঞান আসে। কিছুটা সুস্থ হলে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়। বিনামূল্যে আমাদের হাসপাতালে তাঁকে কয়েক মাস চিকিৎসা দেওয়া হয়। ছয় মাস নিয়মিত চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এখন তাঁর এক হাত প্যারালাইজড হলেও তিনি কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখন কেউ বলছে না যে ওই চিকিৎসা ভুল ছিল। কিন্তু কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে বা তিনি যদি মারা যেতেন তাহলে বলা হতো চিকিৎসা ভুল হয়েছে। চিকিৎসক সম্ভাব্য ঝুঁকি ও উন্নতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এখানে নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একই রোগ নিরীক্ষার ফলাফল সাধারণত কেন্দ্রভেদে ৩ থেকে ৫ শতাংশের বেশি ভিন্ন হবে না যদি সব শর্ত ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। একই সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রের মান ও ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্কতার বিকল্প নেই।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ল্যাবএইড গ্রুপ।

Email : [email protected]

সর্বশেষ খবর