শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

যদি হিম্মত করে কোনো আলেম ও ওয়ায়েজ এর প্রতিবাদে কথা বলেন, সংশোধনের প্রচেষ্টা চালান, আজান-ইকামত ও নামাজ দুরস্ত করতে বলেন, গুনাহ ও পাপাচারিতা বর্জনের আহ্বান জানান তাহলে তাকে বলা হয় মধ্যযুগীয়, প্রগতিবিরোধী ও উন্নতির জন্য বাধা। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন. ‘যারা কোরআন তিলাওয়াত করে, গবেষণা করে, কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায় আমার উম্মতের মধ্যে তারাই হচ্ছে সর্বোত্তম।’ জাগ্রত আবেদকে শয়তান ভয় করে না; কিন্তু ঘুমন্ত আলেমকেও সে ভয় করে। কিন্তু একশ্রেণির স্বার্থবাদী মানুষ রসুল (সা.)-এর ঘোষণার বিপরীত অবস্থান নিয়ে আলেম-ওলামা এবং মসজিদ-মাদরাসা ও দীনি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। বিদাত, মুনকারাত, মদ-জুয়া ও অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে তাদের মুখে কোনো আওয়াজ নেই, আওয়াজ কেবল মাদরাসা ও আলেমদের বিরুদ্ধে। এ দুনিয়ায় বেশি দিন থাকা যাবে না। এ স্বাদের দুনিয়া মরীচিকা ও ধূলিকণার মতো উড়ে যাবে। মৃত্যুর ছোবলে আক্রান্ত হয়ে একদিন অবশ্যই ঢলে পড়তে হবে। সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে, অন্ধকার কবরে একাই যেতে হবে। প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ও স্বামী সঙ্গে যাবে না, স্নেহের সন্তান-সন্ততিও সঙ্গী হবে না, কোনো বন্ধু-বান্ধবও সহচর হবে না। কোনো কিছুই কাজে আসবে না, কাজে আসবে শুধু নিজের নেক আমল তথা নামাজ-রোজা ইত্যাদি ইবাদত। আপনি যদি নেক আমল করেন আর আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়ে থাকে তাহলে তা উপকারে আসবে। আর পাপাচারিতায় আমলনামা ভর্তি থাকলে তার প্রায়শ্চিত্ত ভুগতে হবে, বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। কবর অত্যন্ত ভয়াবহ ও কঠিন ঘাঁটি। কবরের প্রশ্নোত্তর বড়ই আশঙ্কাজনক। আমলের ভিত্তিতেই তখন ইল্লিন বা সিজ্জিনের সিদ্ধান্ত হবে।

রসুল (সা.)-কে এক সাহাবি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! কিয়ামত কবে হবে? তিনি বললেন, কিয়ামত কবে হবে তা দিয়ে তুমি কী করবে? যখন হওয়ার তখন হবেই। তোমার জন্য কিয়ামত হচ্ছে মৃত্যু। তুমি সেই মৃত্যুর জন্য কীরূপ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? সাহাবি আরজ করলেন, আমার তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে সর্বাধিক ভালোবাসি, মহব্বত করি। জবাব শুনে রসুলুল্লাহ বললেন, তাহলে তোমার কোনো ভয় নেই। কারণ যাকে তুমি ভালোবাস কবরে-হাশরে তার সঙ্গেই তোমার থাকা হবে।’

কবরে প্রথম প্রশ্ন হবে তোমার রব কে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হবে তোমার মত ও পথ কী ছিল? তোমার ধর্ম কী ছিল? তৃতীয় প্রশ্ন হবে তুমি কার অনুসরণ করতে? বিশ্বনবীর অনুসরণ করতে নাকি মনগড়া ইজমের? যাদের উত্তর সঠিক হবে, তারা হবে ইল্লিনের অধিকারী। তাদের জীবন হবে অত্যন্ত শান্তিময় ও মধুর। যাদের উত্তর গলদ হবে অথবা যারা উত্তর দিতে অক্ষম হবে তাদের ঠিকানা হবে সিজ্জিনে। সে জীবন হবে বিষাক্ত; কঠোর আজাবের। কবরের আজাব থেকে মুক্তি ও দুনিয়ার সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই পৃথিবীতে রসুলের আগমন হয়েছিল। তাঁর প্রতি কোরআন নাজিল হয়েছে। তিনি কোরআনের হুকুম-আহকামের কথা উম্মতের কাছে পৌঁছিয়েছেন। তাঁর কথা, কাজ ও দিকনির্দেশনাকেই হাদিস বা সুন্নত বলা হয়। সে মোতাবেক আমল করে সাহাবায়ে কিরাম এবং পরবর্তী যুগের মুসলিম উম্মাহ অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হয়েছেন। আমাদেরও শান্তি-নিরাপত্তার একমাত্র পথ এটাই।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর