মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ইফতারের গুরুত্ব অপরিসীম

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

ইফতারের গুরুত্ব অপরিসীম

মহান রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সাধনা-পিয়াসী মুমিনদের জন্য বিশেষ উপঢৌকন হলো ইফতার; যা ইসলামের নিদর্শন। প্রিয়নবী (সা.)-এর সুন্নত ও দয়াময় স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সিয়াম সাধনায় ইফতারের গুরুত্ব অপরিসীম। ইফতারে রয়েছে সংযম, প্রবৃত্তি দমন ও খোদাভীতি। সারা দিন সিয়াম সাধনায় রত থেকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা কি যে আনন্দের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি বিশেষ আনন্দের সময় রয়েছে- এক. ইফতারের সময়। দুই. মহান প্রভুর দিদার লাভের সময়।’ (বুখারি)

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায়ের আগে কয়েকটি ভেজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি ভেজা খেজুর না থাকত তবে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তা-ও না থাকত তবে কয়েক ঢোক পানিই হতো তাঁর ইফতার।’ (তিরমিজি)। হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, আমার তৃষ্ণা নিবৃত্ত হয়েছে, আমার শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমার পুরস্কারও নির্ধারিত হয়েছে।’ (আবু দাউদ)। ইফতারের সময় হওয়া মাত্র দ্রুত ইফতার গ্রহণ করা সুন্নত। প্রিয়নবী (সা.) অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে ইফতার গ্রহণ করতেন এবং ইফতারের সময় হলে দ্রুত ইফতার করতেন। নবী আদর্শের প্রতিচ্ছবি সাহাবায়ে কিরামও সর্বদা তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং দেরিতে সাহরি করতেন। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালোবাসি যে ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করে নেয়।’ (তিরমিজি)। তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যত দিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (বুখারি)। সারা দিন অভুক্ত থেকে ইফতার সামনে নিয়ে চোখের দুই ফোঁটা পানি ছেড়ে দিয়ে বান্দা যখন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে, মহান আল্লাহ তখন তাঁর প্রিয় বান্দাকে রহমতের চাদরে আবৃত করে নেন, অপরাধগুলো মার্জনা করেন এবং তার সব ফরিয়াদ কবুল করে নেন। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো প্রত্যাখ্যান করা হয় না। ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর দোয়া ২. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ৩. মজলুমের দোয়া।’ (তিরমিজি) মাহে রমজানে রোজাদারকে ইফতার করানো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও সওয়াবের কাজ। প্রিয়নবী (সা.) রোজাদারকে ইফতার করানোর ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামকে উৎসাহিত করেছেন এবং একে ফজিলতময় ও সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে বায়হাকি ও মিশকাতে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেউ যদি মাহে রমজানে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ওই ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে অথচ রোজাদারের সওয়াব বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না। সাহাবিরা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুুল! আমাদের সবার তো আর রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। প্রিয়নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ তাকেও এ সওয়াব দান করবেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ অথবা একটি খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দ্বারাও ইফতার করাবে।’

লেখক : খতিব, মসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ,  কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর