বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শৈশবে প্রতিটি মুসলিম ছেলের খতনা করা সুন্নত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

শৈশবে প্রতিটি মুসলিম ছেলের খতনা করা সুন্নত

প্রতিটি মুসলিম শিশু পুত্রের জন্য পিতা-মাতার প্রতি বিশেষ একটি কর্তব্য হলো উপযুক্ত বয়সে তার খতনা করা। পুরুষাঙ্গের সম্মুখ উপরিঅংশের অতিরিক্ত চামড়া কেটে ফেলাকে খতনা বলে। খতনা করা সুন্নত। এটি ইসলামের একটি বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপক আমলও বটে। মূলত খতনা সুন্নতে ইবরাহিমি ও ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ফিতরাত তথা স্বভাবজাত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে একটি হলো খতনা করা।’ (বুখারি) তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘১০টি আমল নবী-রসুলদের সুন্নত- ১. খতনা করা ২. আতর ব্যবহার করা ৩. মিসওয়াক করা ৪. বিয়ে করা ইত্যাদি।’ (তিরমিজি) ‘হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স যখন ৯৯ বছর, মতান্তরে আশি বছর, মতান্তরে ১২০ বছর এবং তাঁর ছেলে ইসমাইল (আ.)-এর বয়স ১৩ বছর, তখন আল্লাহর আদেশ হলো খতনা কর। এ আদেশ পালনে হজরত ইবরাহিম (আ.) নিজে নিজেই খতনা করলেন, এরপর হজরত ইসমাইল (আ.) এবং পরিবারের সব পুরুষ ও গোলামদের খতনা করালেন। তারপর যখন হজরত ইসহাক (আ.) আট দিনের বয়সে পৌঁছলেন, মতান্তরে সাত বছর, তখন আল্লাহর নির্দেশে  হজরত ইবরাহিম (আ.) শিশুপুত্রের খতনা করিয়ে দিলেন।’ (তওরাত) ১৪ জন নবী-রসুল খতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন, তার মধ্যে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)ও খতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন। এ খতনা ইবরাহিমি ধর্মের প্রতীক এবং সুন্নতে ইবরাহিমি নামে অভিহিত। সুন্নতে খতনা প্রাচীনকাল থেকেই একটি অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় বিধানরূপে প্রচলিত। খতনার মধ্যে বহু উপকারিতা নিহিত রয়েছে। খতনা না করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। ত্বকের ভিতর জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার না করা হলে তা বিষাক্ত হয়ে অনেক সময় ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে এবং অতিরিক্ত চামড়ায় পচন ধরে যায়, স্ত্রীসহবাসে অসুবিধা হয়। এর ময়লার সঙ্গে জমে থাকা বিভিন্ন রোগজীবাণু স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশের ফলে নানা রোগবালাই দেখা দিতে পারে। পুরুষাঙ্গের মাথায় মাংস জমে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিধায় এ অবস্থায় ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধিও হতে পারে। পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া নিচে এক প্রকার সাদা পদার্থ জমা হয়, যা ক্যান্সারের মূল উপাদান। খতনা না করালে চামড়ার ভাঁজে প্রস্রাব ও বীর্য আটকে থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে খতনা-বিহীন পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার বেশি হয় এবং তাদের স্ত্রীদের মধ্যেও ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। ইসলামের খতনা বিধান বিজ্ঞানসম্মত ও জীবনভিত্তিক। তা ছাড়া খতনাকৃত পুরুষ তার যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে পারে অতি সহজেই, কেননা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।

শিশুর খতনার সময় : জন্মের সপ্তম দিনে হজরত হাসান (রা.)কে খতনা করা হয়েছে। কেননা এ সময় লজ্জা ও ব্যথার অনুভূতি থাকে না। সাহাবায়ে কিরামরা ইসলাম গ্রহণ করার পরই খতনা করাতেন এবং তাদের সন্তানদের শিশুকালেই খতনা করাতেন। অধিকাংশ মুসলিম মনীষীর মতে শৈশবেই খতনা করা সুন্নত, অনূর্ধ্ব সাত থেকে ১০ বছর। কেননা কিছুকাল পরই তাকে শরিয়তের বিধিনিষেধ পালন করতে হবে, আর সাবালকত্বে পৌঁছার পর সে যেন খতনাকৃত অবস্থায় থাকে, অবশ্যই কোনো অনিবার্য কারণবশত বয়ঃপ্রাপ্তির পর করানো প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলেও খতনা করে নিতে হবে। খতনা যেহেতু ইসলামের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও তার পরিচয় জ্ঞাপক আমল, তাই খতনাকে কোনো অবস্থাতেই এড়িয়ে চলার অবকাশ নেই। অবশ্য বয়ঃপ্রাপ্তির পর পরপুরুষের সামনে গুপ্তাঙ্গ অনাবৃত করার অনুমতি শুধু প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রদান করা হয়েছে। তাই খতনাকারীর জন্যও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সতর দেখা বৈধ হবে না। এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে সে যেন অবশ্যই খতনা করিয়ে নেয়, যদিও সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।’ খতনাকৃত অংশ ও মানবদেহের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া যে কোনো অংশ যথা চুল নখ দাঁত মাটিতে পুঁতে ফেলা উচিত। কেননা তা সম্মানিত।

খতনার কুসংস্কার : খতনা একটি শরিয়ত ও স্বাস্থ্যসম্মত বিধান, যেহেতু খতনার সঙ্গে লজ্জা এবং সংকোচের বিষয়টিও জড়িত তাই কম বয়সে খতনা করা উত্তম। খতনা অনুষ্ঠানের সব ধরনের আড়ম্বর ও লৌকিকতা বর্জন করাই উত্তম। হজরত হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে কোনো ব্যক্তি হজরত ওসমান ইবনে আবিল আ’স (রা.)-কে খতনার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তথায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন আমরা রসুলুল্লাহর জীবৎকালেও এ ধরনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতাম।’ এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় খতনার অনুষ্ঠান করা, প্রচার, গিফট দেওয়া ও নেওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে অনাবশ্যক। আতশবাজি, আলোকসজ্জা, নাচ, গান, বেপর্দা ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে অনুষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও গুনাহের কাজ।

লেখক : ইমাম ও খতিব কাওলারবাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর