রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শ্রীলঙ্কা নিয়ে সতর্কতা, দিল্লি কেন অনেক দূর

নঈম নিজাম

শ্রীলঙ্কা নিয়ে সতর্কতা, দিল্লি কেন অনেক দূর

‘ইয়ে না থি হামারি কিসমাত কি বিসাল-এ ইয়ার হোতা

আগার আওর জিতে রেহতে ইয়েহি ইনতেজার হোতা’,

‘প্রিয়ের সঙ্গে মিলন হবে; আসলে এ আমার ভাগ্যেই ছিল না। যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতাম, শুধু অপেক্ষাটাই দীর্ঘতর হতো।’ মির্জা গালিবের এ কবিতার লাইনগুলো ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলাম পুরান দিল্লিতে। আগের দিন সন্ধ্যায় লোদির সমাধি ঘুরে দেখেছি। পুরান দিল্লি অনেকবার গেছি। করিমের খাবার একটা সময়ে টানত। এবার আমার সঙ্গে ছিলেন শাবান মাহমুদ। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার। এর আগে শাবান এ এলাকায় যাননি। ছুটির দিন চাঁদনিচক জমজমাট থাকে। পুরনো দিনের খাবার-দাবারে ভিড় জমায় সবাই। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখন চাঁদনিচকে গাড়ি চলাচল বন্ধ। রিকশায় চড়ে পর্যটকরা এলাকাটা ঘুরে দেখেন। আমরাও তাই করলাম। আবার অনেকে হেঁটে দেখেন সবকিছু। চাঁদনিচক থেকে কেউ কেউ যান জামে মসজিদ এলাকায় করিমের রেস্টুরেন্টে। মুঘল আমলের খাবারের ঐতিহ্য পুরান দিল্লিতে এখনো পাওয়া যায়। সাদা চামড়ার মানুষও ভিড় করেন। পুরান দিল্লি ঐতিহ্যের নিদর্শনের পাশাপাশি অনেক নিষ্ঠুরতার ইতিহাসের সাক্ষ্যও বহন করে। সম্রাট বাহাদুর শাহকে নিষ্ঠুরভাবে নির্বাসনে রেঙ্গুন (ইয়াঙ্গুন) পাঠানোর সময় তাঁর পুত্রদের প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে ইংরেজ বণিকদের ভাড়াটিয়ারা হত্যা করে পুরান দিল্লিতে। বাহাদুর শাহ একজন কবি ছিলেন। রেঙ্গুনে তাঁর কবর জিয়ারত করেছিলাম। এবার বাহাদুর শাহের কবিতার বই কিনেছি মির্জা গালিব রিসার্চ সেন্টার থেকে। বড় বেদনায় শেষ জীবনটা কেটেছিল বাহাদুর শাহের।

দিল্লিতে মুসলমান শাসকদের ঐতিহ্যগুলো এখন পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বাদশাহ হুমায়ুনের সমাধিতেও পর্যটকের ভিড়। দিল্লির পাশাপাশি অনেকে যান আগ্রা, আজমির। শুধু ঐতিহ্যর নিদর্শন পরিদর্শন নয়, অনেকে ভিড় করেন মুসলমান পীর-ফকিরদের মাজারে। দিল্লির মাজারগুলোর মধ্যে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজারে ২৪ ঘণ্টাই ভক্তের ভিড় থাকে। হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া সম্পর্কে অনেক ধরনের মিথ আছে। প্রথম জীবনে তিনি বিত্তশালীদের সম্পদ জোর করে নিয়ে গরিব মানুষকে দান করতেন। পরের জীবন তিনি শুধু আল্লাহর ইবাদত আর মানবসেবায় কাটান। তাঁর কাছে গেলে কোনো মানুষই খালি হাতে ফিরত না। তিনি সবাইকে দুই হাত ভরে দিতেন। মিথ আছে, তাঁর ঘরে পর দিনের চলার খাবার নেই। কিন্তু দান করার জন্য কোনো দিন অভাব হতো না। বিশাল ভক্তকুলের জন্যও খাবারের কোনো টান পড়ত না। একবার সাধারণ মানুষ এসে নিজামুদ্দিনকে দিল্লির পানি সংকটের কথা বলল। অনুরোধ করল সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নিতে। দিল্লির ক্ষমতায় তখন সুলতান গিয়াস উদ্দিন তুঘলক। ক্ষমতাবান এই মানুষটির ন্যায়পরায়ণতার কথা প্রচরিত থাকলেও যখন যা মনে আসত তা-ই করতেন। তুঘলকি কাণ্ড শব্দটির উৎপত্তি তখনই। তিনি হেঁটে যাওয়ার সময় কাউকে দুই হাতে দান করতেন। আবার কারও কল্লা কেটে নিতেন। তুঘলকাবাদ ছিল তাঁর রাজধানী। তাঁর শাসনকালে দিল্লি শহরে রটে যায় সুলতান গিয়াস উদ্দিন তুঘলক মারা গেছেন। পরে দেখা গেল গুজব। সুলতানের কাছে খবর গেলে তিনি হুকুম দেন গুজব রটনাকারীকে হত্যা করতে। কোতোয়াল দেখলেন মানুষের মুখে মুখে এ গুজব। ঘরে ঘরে, হাটে বাজারে সবাই আলোচনা করছে বাদশাহর মৃত্যু নিয়ে। কোতোয়াল বিষয়টি জানালেন তুঘলককে। কী করবেন জানতেও চাইলেন। তুঘলক বললেন, গুজব রটনাকারী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও। কোতোয়াল তাই হত্যা করল কয়েক হাজার মানুষকে!

তুঘলকি কাণ্ডে ব্যথিত ছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়া। তিনি সে সময় ধর্ম প্রচার ও আর্তমানবতার সেবায় ছিলেন দিল্লিতে। তাঁর ছিল বিশাল ভক্তকুল। দিল্লির পানি সংকট নিরসনে তিনি সবাইকে নিয়ে জলাশয় খননের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু শ্রমিক নিয়ে সমস্যা তৈরি হলো। শহরে দুর্গ তৈরির জন্য দিল্লির মজুরদের জোর করে কাজে লাগানোর নির্দেশ দেন তুঘলক। নিরাপত্তা দেয়াল ও প্রাসাদ নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ বাদশাহর। তুঘলক নিজেও তখন ব্যস্ত ছিলেন কয়েকটি বিদ্রোহ দমনের প্রস্তুতি নিয়ে। এ বিদ্রোহের তালিকায় বাংলা মুলুকও ছিল। বিদায়ের আগে দিল্লি দেখভালের দায়িত্ব ছাড়েন পুত্র মুহাম্মদের হাতে। আরেক পুত্রকে নিয়ে যাওয়ার আগে তিনি বললেন, ফিরে আসার আগেই যেন নির্মাণ কাজগুলো শেষ হয়। এদিকে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার ডাক শুনে দিল্লির সব শ্রমিক চলে এলেন জলাশয় খননের কাজে। বিনা পারিশ্রমিকে তারা আধ্যাত্মিক সাধকের ডাকে কাজ করবেন মানুষের কল্যাণের জন্য। অর্থ নিয়ে রাজার কাজ করতে রাজি নন তারা। দীর্ঘ সময় পর জলাশয় নির্মাণের কাজ শেষ হলো। খবর এলো তুঘলক যুদ্ধ জয় করে রাজধানীতে ফিরছেন। ভক্তরা নিজামুদ্দিনকে পরামর্শ দিলেন আপনি দিল্লি ছাড়ুন। বিদ্রোহ দমনে যাওয়ার আগেই তিনি আপনার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এবার ফিরলে আপনাকে জানে বাঁচতে দেবেন না। নিষ্ঠুর মানুষটির সামনে না থাকাই ভালো। নিজামুদ্দিন ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের বললেন, ‘দিল্লি দূর অস্ত’- দিল্লি অনেক দূর। ভক্তরা বাড়ি ফিরলেও তাদের মনে শান্তি নেই। সবাই বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কা করছিলেন। খবর এলো দিল্লির কাছাকাছি চলে এসেছেন তুঘলক। ভক্তরা আবার এলেন নিজামুদ্দিনের কাছে। বললেন, এবার আপনি নিরাপদে চলে যান। তুঘলকি কাণ্ডের আশঙ্কা করছি আমরা। হাসলেন নিজামুদ্দিন। আল্লাহর দরবারে সবাইকে নিয়ে প্রার্থনা করলেন। তারপর আবার বললেন, ‘দিল্লি দূর অস্ত’- দিল্লি অনেক দূর। ভক্তরা ভয় নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। সময় ঘনিয়ে এলো। দিল্লির উপকণ্ঠে বিজয়ী তুঘলকের সংবর্ধনার বিশাল আয়োজন করলেন তাঁর পুত্র। কোনো কিছুতেই কমতি নেই। হাতি-ঘোড়া নিয়ে সেনাদের বিশাল গার্ড অব অনার শেষে নাগরিক সংবর্ধনা। নগরবাসী অভিনন্দন জানাবেন বাদশাহকে। ভক্তরা আর থাকতে পারলেন না। তুঘলকপুত্র মুহাম্মদ ছিলেন নিজামুদ্দিনের ভক্ত। এবার ভক্তদের মাধ্যমে তিনি খবর পাঠালেন- আপাতত দিল্লি ছাড়লে ভালো হয়। ভক্তরা নিজামুদ্দিনের সামনে গিয়ে সব কথা জানালেন। তারপর বিনীত অনুরোধ জানালেন দিল্লি ছাড়তে। হাসলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়া। তারপর ওপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দিল্লি হনুজ দূর অস্ত- দিল্লি এখনো অনেক দূর। তোমরা চিন্তা কোরো না। বাড়ি যাও। আগে দেখ তিনি দিল্লি আসতে পারেন কি না।’ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্রোহ দমন ও বাংলা দখল করে দিল্লি ফিরলেন গিয়াস উদ্দিন তুঘলক। পুত্র মুহাম্মদ ব্যাপক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। আফগানপুর এলাকাকে সাজানো হয় বিশেষভাবে। কোনো কিছুর কমতি নেই। যুদ্ধজয়ী বাদশাহর জন্য যত আয়োজন দরকার তা করা হয়েছে। বীরের বেশে দিল্লি প্রবেশ করলেন তুঘলক। সভাসদদের নিয়ে মুহাম্মদ স্বাগত জানালেন পিতাকে। তারপর নিয়ে গেলেন সংবর্ধনাস্থলে। মঞ্চে বসালেন পিতাকে। উট-হাতি-ঘোড়ার বহর নিয়ে সেনারা প্রস্তুত গার্ড অব অনারের জন্য। সেনাপ্রধান এগিয়ে এলেন। অনুমতি চাইলেন কার্যক্রম শুরুর জন্য। অনুমতি দিলেন বাদশাহ। সংবর্ধনা প্যারেডের অশ্বারোহী বাহিনী পার হলো। উটবাহিনী পার হলো। বিপত্তি বাধল হাতি পার হওয়ার সময়। সারিবদ্ধ সুশৃঙ্খল হাতির দল পার হওয়ার সময় একটি হাতি নিজের পিঠে থাকা মাহুতকে ছুড়ে ফেলে দিল। তারপর শুঁড় দিয়ে মঞ্চের মোটা গাছের থাম ভেঙে ফেলল। মঞ্চ ভেঙে পড়ে হুড়মুড় করে। হঠাৎ কোথা থেকে কী হয়ে গেল কেউ বুঝতে পারল না। কয়েকটি হাতি বেপরোয়া হয়ে ছোটাছুটি শুরু করল। বড় বড় গাছ দিয়ে নির্মাণ করা মঞ্চ ভেঙে পড়ল। ধীরে ধীরে পুরো সংবর্ধনাস্থল তাসের ঘরের মতো তছনছ হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সব। সেনারা শুরু করল উদ্ধার অভিযান। সারা দিনের ধ্বংসস্তূপ সরাতে রাত পার হয়ে গেল। রাতের অন্ধকার দূর করতে পর্যাপ্ত আলোরও অভাব ছিল। পরদিন সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান জোরদার করা হয়। ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হয় তুঘলকের লাশ। সঙ্গে থাকা পুত্র আহমদ বিন তুঘলককে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন গিয়াস উদ্দিন তুঘলক। দিল্লিতে আর তাঁর আসা হলো না। ‘অনেক দূর’ হয়ে গেল দিল্লি তুঘলকের জন্য। এ ঘটনার পর ক্ষমতায় এলেন মুহাম্মদ বিন তুঘলক। তিনি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার ভক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর মুরিদ বনে গেলেন।

দিল্লি থেকে ফেরার পর এবার শ্রীলঙ্কা সংকট দেখছি। দুটি দেশের বাস্তবতার ন্যূনতম মিল না থাকলেও অনেকে বাংলাদেশকে সতর্ক হতে বলছেন। জীবনে একবারই গিয়েছিলাম দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায়। চমৎকার শহর কলম্বো। কাছে দূরে দৃষ্টিনন্দন অনেক কিছু আছে দেখার মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভূমি। পর্যটকের ভিড় থাকত বারো মাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় সবার চেয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। জিডিপি, শিক্ষায় সবার ওপরে। উন্নয়নের গতিও ছিল ব্যাপক। সবাই ভেবেছিল শ্রীলঙ্কাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। কিন্তু কভিড-১৯-এর পর তছনছ হয়ে গেল ঋণে জর্জরিত দেশটি। পর্যটক আসা বন্ধ হলো। ৫০ বছরে যা হয়নি তা হচ্ছে এখন। অর্থনৈতিক সংকট কোনোভাবেই দেশটি মোকাবিলা করতে পারছে না। খাদ্য সংকট, বেকারত্ব, বৈদেশিক মুদ্রার আছে সংকট। ৫০০ টাকায় মেলে ১ কেজি চাল। জ্বালানির তীব্র সংকট চলছে। খাদ্য উৎপাদন কমেছে ভুল নীতিমালার কারণে। সরকার সড়কবাতি বন্ধ করে দিয়েছে কৃচ্ছ্র করতে। ওষুধ মেলে না সহজে। দেনার দায়ে চীনকে ছেড়ে দিতে হয়েছে সমুদ্রবন্দর। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট বাড়ছে। ঋণ দিতে রাজি নয় বিদেশিরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে হাত ছোঁয়াতে পারছে না সাধারণ মানুষ। ৯৩ শতাংশ শিক্ষিত মানুষের দেশটিতে কেন এমন হলো? রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ ছোটখাটো অনেক মন্ত্রী, এমপি সব এক পরিবারের। তাহলে কি পারিবারিক রাজনীতি শ্রীলঙ্কার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে? সাধারণ মানুষ রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। এমপিদের অনেকে দল ছেড়েছেন। রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ করছে মানুষ। তারা ক্ষমতাসীনদের বিদায় চায়।

রাষ্ট্রে সংকট তৈরি হলে সমাধানও থাকে। পারিবারিক জালে আচ্ছন্ন শ্রীলঙ্কা এখন পথ খুঁজে পাচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ পাকিস্তানের রাজনীতিও উথালপাথাল। আদালত আর সংসদের জালে আটকে গেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। অবশ্য পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট পুরো সময় পার করতে পারেন না। মাঝপথে তাঁদের বিদায় করে দেয় সামরিক বাহিনী। জন্মের পর থেকে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে এগোতে হচ্ছে দেশটিকে। এখনো এর বাইরে নয়। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হিসাব মেলালে চলবে না। বাংলাদেশ আপন মহিমায় বেড়ে ওঠা একটি দেশ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে গড়ে ওঠা দেশটি ঝড়-বন্যা, সিডর-আইলা মোকাবিলা করেই নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে। এখন পর্যন্ত যে বৈদেশিক ঋণ আছে তা শোধের সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল আমাদের প্রবাসীরা। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের রপ্তানিও টিকে আছে শক্তভাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এগিয়ে যাবে। তার পরও একটু সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে নিজেদের সুন্দর আগামীর জন্য।

একটি দেশ, একটি টিমকে এগিয়ে নিতে দরকার হয় একজন সঠিক নেতৃত্বের। একজন নায়কই পারেন অনেক কিছু বদলে দিতে। দুর্বল অবস্থানে থেকেও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে। ১৯৮৩ সালে ভারত ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ভারতীয় ক্রিকেট তখন আজকের অবস্থানে ছিল না। খেলার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট ছিল না। কোনোভাবে ইংল্যান্ডে গিয়ে অংশগ্রহণ করাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাবনা ছিল না ক্রিকেট কর্তাদের। ক্রিকেটাররাও তেমন ভাবনায় ছিলেন না। কিন্তু টিম লিডারের দায়িত্ব নিয়ে কপিল দেবের মধ্যে একটা স্বপ্ন তৈরি হয়। সে স্বপ্ন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। ভারতীয় ক্রিকেটের উত্থানের নায়ক ছিলেন কপিল দেব। ১৯৮৩ সালে লর্ডসে তাঁর নেতৃত্বে ভারত প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলা করেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার একক দাপটের সময় অন্য দেশ মাঝখান থেকে বেরিয়ে আসবে কেউ ভাবতেও পারেনি। ভারত সেরা চারে যাবে এমন মন্তব্যও কোনো মিডিয়া করেনি। ক্রিকেটের কমেন্টরা প্রথম থেকে অবহেলা করেই ভারতীয় ক্রিকেটের নাম নিতেন। একজন কপিল সবকিছু চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। ইংল্যান্ডে নেমে দেখলেন মিডিয়ার চোখ সেরা দলগুলোর দিকে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে কপিল যখন বললেন ‘আমরা ফাইনালে খেলতে এসেছি’, হাস্যরস উঠল সেখানেই। কপিলের অন্য সহকর্মীরাও চমকে উঠলেন। টিম লিডার কী বলছেন! একটা স্বপ্ন নিয়েই কপিল ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তিনি সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। একাধিক ম্যাচ একাই টেনে নেন। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে নিজেই রান করেন ১৭০; যা ছিল তখনকার সময় রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে কপিল হঠাৎ খেয়াল করলেন তাঁর রান শেষ হতেই পুরো মাঠ করতালি-মুখরিত। কপিল আম্পায়ারকে প্রশ্ন করলেন এত করতালি কেন? জবাবে আম্পায়ার বললেন, ‘তুমি রেকর্ড গড়েছ আজ রানের বন্যায়’। এভাবে ইতিহাস কেউ না কেউ তৈরি করে। পথ দেখায় নিজস্ব ক্যারিশমায়। সবাই তা করতে পারে না। শ্রীলঙ্কাকে দেখে বাংলাদেশের সতর্ক হওয়ার বিষয় আছে। এ সতর্কতা প্রতিনিয়তই দরকার মানুষের জীবনে। শ্রীলঙ্কা জানান দিল বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকে- আজকের এ সোনালি সময় আগামী দিন না-ও থাকতে পারে।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর