শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান

মো. আমিনুল ইসলাম

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজান

আরবি তাকওয়ার অর্থ কষ্টদায়ক বা ক্ষতিকারক বিষয় থেকে নিজেকে হেফাজত করা। সমাজ জীবনে সব ধরনের অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে আল্লাহভীতি অন্তরে ধারণ করে কোরআনের নির্দেশিত বাণী ও রসুল (সা.)-এর আদর্শ মেনে জীবন পরিচালনা করাই হলো তাকওয়া। কীভাবে এ রমজানে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি? আমরা জানি এ মাসে কোরআন নাজিল হয়। আল্লাহ বলেন, ‘রমজান এমন একটি মাস যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, আর এ কোরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য পথের দিশা। সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে সে এতে রোজা রাখবে, যে অসুস্থ বা ভ্রমণে থাকবে সে পরবর্তী কোনো সময়ে গুনে গুনে সে পরিমাণ দিন পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মগুলো সহজ করে দিতে চান। তিনি তোমাদের প্রতি কঠোর করে দিতে চান না। যাতে তোমরা তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর এবং তিনি কোরআনের মাধ্যমে যে হেদায়াত দিয়েছেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা আদায় কর।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫। এ রমজানে আমরা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করব। তাঁর সাহায্য চাইব। রসুল (সা.) বলেন, ‘সিয়াম পালনকারীদের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না অর্থাৎ কবুল হয়ে থাকে।’ (ইবনে মাজাহ) মনে রাখতে হবে তাকওয়া অর্জনকারীরাই মুত্তাকি। তারাই সফলকাম। সঠিক সিয়াম পালনের মধ্য দিয়েই বান্দা অর্জন করে তাকওয়া। কেননা সিয়াম পালনের মাধ্যমে প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে যে শক্তি অর্জিত হয় সেটাই তাকওয়ার ভিত্তি।

তাকওয়া অর্জনের অন্যতম উপায় আল্লাহকে চেনা ও জানা। কোনো মুসলমান যদি কোরআনকে ভালোভাবে বুঝতে পারে তাহলে কোরআন তার অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কোরআনে মানুষকে বোঝানোর জন্য সব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা জুমার, আয়াত ২৭)

আল কোরআনে সিয়ামের বিধিনিষেধ বর্ণনার পর আল্লাহ বলেন ‘এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলো মানুষের জন্য বর্ণনা করেন, আশা করা যায় তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭)

ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করা তাকওয়া অর্জনের অন্যতম উপকরণ। ফরজ বা নফল সব ইবাদতের মাধ্যমেই তাকওয়া অর্জন সম্ভব। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের সবাইকে পয়দা করেছেন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২১)

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করার মধ্য দিয়েও অন্তরে তাকওয়া সৃস্টি হয়। সুরা ইউনুসের ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই দিনরাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহতায়লা যা কিছু আসমান ও জমিনের মধ্যে পয়দা করেছেন তার প্রতিটি জিনিসের মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন জাতির জন্য যারা তাকওয়া অবলম্ব^ন করে।’ সুবহানাল্লাহ।

পরকালের ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমেও অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের জন্য তাদের ওপরে ছায়া দানকারী আগুনের মেঘমালা থাকবে, তাদের নিচের দিকে থাকবে আগুনেরই বিছানা, এ হচ্ছে সেই বীভৎস আজাব, যা দিয়ে আল্লাহতায়লা তাঁর বান্দাদের ভয় দেখান। অতএব হে বান্দারা! তোমরা আমাকে ভয় কর।’ (সুরা জুমার, আয়াত ১৬)

তাকওয়া অর্জনের প্রধান উপায় হলো আত্মসংশোধন, পাপমুক্ত করা, চরিত্র কলুষমুক্ত করা। আত্মসংশোধনের মাধ্যমেই অর্জিত হয় তাকওয়া। এর জন্য প্রয়োজন কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গড়া। তাহলেই আমরা প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া অর্জন করতে পারব। আমাদের ইহজীবন ও পরকাল হবে শান্তির। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ রমজানে তাকওয়া অর্জনের তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

সর্বশেষ খবর