বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রমজান পেয়েও বঞ্চিত যারা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

রমজান পেয়েও বঞ্চিত যারা

রহমত, মাগফিরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস পবিত্র রমজানুল মুবারক। রমজানে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও মানুষের পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। রমজান আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দাহ করা বা জ্বালানো। রোজা মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার কুপ্রবৃত্তি ও নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম রমজান। সোনা-রুপা আগুনে পোড়ালে খাঁটি হয়, তেমনি রমজানের দহনে সিয়াম সাধক পাপমুক্ত হয়ে জান্নাতি মানুষে পরিণত হয়। তাই রমজানে প্রত্যেক রোজাদার মুসলমানের একান্ত বাসনা হবে আল্লাহর ক্ষমা লাভ, আকাক্সক্ষা হবে তাকওয়া অর্জন এবং অন্যায়, মিথ্যা, অশ্লীলতা ও সব ধরনের দুর্নীতিমুক্ত জীবন গড়ার। চলবে মানবতার পরম আদর্শে জীবন আলোকিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা। এ মাস পেয়েও যারা জীবনের মোড় পাল্টাতে পারেনি, লাভ করতে পারেনি জাহান্নাম থেকে মুক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তারা চরম হতভাগা। তাদের জন্য রয়েছে ফেরেশতাকুল সম্রাট জিবরাইল (আ.)-এর অভিশাপ ও তাদের ধ্বংস হওয়ার বদদোয়া। আর এ ধ্বংসাত্মক দোয়ায় আমিন বলে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন মহানবী (সা.) নিজেই। অথচ রহমতে আলম (সা.) স্বাভাবিকভাবে কাউকে অভিশাপ দেন না। বদদোয়া করেন না তিনি চিরশত্রুর জন্যও। একদিনের ঘটনা। রসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে আরোহণকালে বলেন, আমিন, আমিন, আমিন। মিম্বর থেকে অবতরণের পর এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে বললেন, ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) এসেছিলেন। আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে কিন্তু তার গুনাহগুলো মাফ করাতে পারেনি সে ধ্বংস হোক। আপনি বলুন আমিন। তখন আমি বললাম আমিন। (কবুল করুন)। এরপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখি তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উচ্চারণ করা হয়েছে কিন্তু সে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করেনি সে ধ্বংস হোক। আপনি বলুন আমিন। তখন আমি বললাম আমিন। সবশেষে যখন আমি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতা উভয় জনকে অথবা তাদের কোনো একজনকে জীবিত পেয়েছে অথচ তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না সে ধ্বংস হোক। আপনি বলুন আমিন। তখন আমি বললাম আমিন। (আল কওলুল বাদিউ)। ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) পরপর উল্লিখিত তিনটি বিষয়ে ধ্বংস হওয়ার প্রার্থনা করেছেন। আর মহানবী (সা.) এতে বলেছেন আমিন। হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন।

এ বদদোয়া যে কবুল হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন আমরা এ বদদোয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছি কি না। চিন্তা করা প্রয়োজন আমাদের মধ্যে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো অবহেলা স্থান পেয়েছে কি না? প্রয়োজন সবাই যথাসময়ে সচেতন হওয়া। বিশেষ করে রসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ার ক্ষেত্রে কোনো মুসলমান অবহেলা করতে পারে না। তাঁর ওপর দরুদ পড়া তাঁর প্রতি ভালোবাসার পরিচায়ক। তা ছাড়া যে ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে মহান আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত বর্ষণ করবেন। (মুসলিম)। অন্য একটি বিষয় হলো মাতা-পিতার প্রতি যত্নবান হওয়া। মাতা-পিতা সন্তানের কল্যাণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। সর্বশক্তি বিসর্জন দেন। মাতা-পিতার প্রতি অনুগ্রহ করা মহান প্রভু তাঁর ইবাদতের পর স্থান দিয়েছেন। অতএব যারা মাতা-পিতার প্রতি অবহেলা করবে তাদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। উল্লিখিত হাদিসে মূল আলোচ্য বিষয় হলো যারা রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির মাস রমজানের সুবর্ণ সুযোগ অবহেলায় হারাবে তারা আল্লাহর যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। ইহকালে ও পরকালে তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। তাই সবাই এ মাসে বেশি বেশি রহমত, বরকত প্রত্যাশা করি। ইবাদত-বন্দেগিতে যথাসাধ্য মনোযোগী হই। কোরআন অবতরণের এই মাসে অবসর সময়ে কোরআন তিলাওয়াতে মগ্ন থাকি। আর সব ধরনের পাপাচার বর্জনের জন্য সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর