বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

অনির্বাণ মাধপুর

মাকিদ হায়দার

অনির্বাণ মাধপুর

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন মুর্শিদাবাদে স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা তাঁর নিকটাত্মীয় ঘষেটি বেগম, মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে বাংলা বিহার ওড়িশার সিংহাসন থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। প্রধান সেনাপতি মীরজাফর, জগৎশেঠ উমিচাঁদরা চতুর ও ধূর্ত ক্লাইভের প্ররোচনায় আত্মঘাতী পথে পা বাড়ান। পলাশীর যুদ্ধে নিহত হন সিরাজ। সেদিন ভারতবর্ষে নেমে এসেছিল অন্ধকার। ডুবে গিয়েছিল বাংলা বিহার ওড়িশার স্বাধীনতা ১৯০ বছরের জন্য। ইতিহাসে জেনেছি সেই দুর্বিষহ কালের কথা। ব্রিটিশের শাসন-শোষণ ও বঙ্গের মানুষের ওপর নির্যাতনের করুণ কাহিনি।

মাঝখানে ব্রিটিশ শাসনের ৫৬ বছর পরে ব্রিটিশদের মনে হয়েছিল বেঙ্গল প্রভিন্সে শিক্ষাব্যবস্থা চালুর কথা। সেটি হয়েছিল একটি চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে ১৮১৩ সালে, সেটি ছিল প্রথম ধাপ এবং ব্রিটিশরা ১ লাখ টাকা দিয়ে সরকারি অনুমতি সাপেক্ষে মিশনারিদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিল এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারও ছিল মিশনারিদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য।

১৮১৩ সালের পর ব্রিটিশরা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল তাদের রাজত্ব চালাতে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রথমে মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা চালু করেছিল, কিন্তু মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষায় অনেকেই অনাগ্রহ প্রকাশ করায় প্রশাসনিক স্বার্থে ইংরেজি বাংলা শিক্ষার প্রচলন করেছিল বেশ কয়েক বছর পরে। ইংরেজরা বুঝতে পেরেছিল ভারতবর্ষে তাদের শাসন- শোষণ চালাতে গেলে নেটিভদের প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে অষ্টাদশ শতকেই শুরু করেছিল মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষা। অষ্টাদশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় স্কুলসহ কলেজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল লেখাপড়ার সুযোগ। সম্ভবত ওই শতকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ। হয়তো বা পরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় জমিদারদের কল্যাণে সংস্কৃত শেখার জন্য ‘টোল’সহ দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার জন্য ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার প্রয়াসে ১৮৯০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত বঙ্গের প্রতিটি জেলায় জিলা স্কুল স্থাপন করেছিল ইংরেজ সরকার। যেমন সরকারি অর্থায়নে পাবনা জিলা স্কুল স্থাপিত হয়েছিল শহরের দক্ষিণ প্রান্তে। পরবর্তী সময়ে পাবনা শহরের দক্ষিণে ইছামতী নদীর কাছাকাছি কাচারীপাড়ায় স্থাপিত হয়েছিল পাবনা গোপালচন্দ্র ইনস্টিটিউশন।

গোপাল বাবুর অর্থায়নে পাবনা গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৯০-১৯০০ সালের মধ্যে এবং ওই একই সময়ের কিছুকাল পর রাধানগরে স্থাপিত হয়েছিল ‘রাধানগর মজুমদার একাডেমি’। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ স্থাপনে বৃহত্তর পাবনার জমিদাররা এগিয়ে আসেন। গোপালচন্দ্র শিক্ষার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে অর্থ সাহায্য করার পর ইংরেজরাও এগিয়ে এসেছিলেন শিক্ষা বিস্তারে। যেমন রংপুরের কারমাইকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায়। তখন জর্জ এডওয়ার্ড ছিলেন ভারত শাসক। তাঁরই নামানুসারে কলেজটি স্থাপিত হয়েছিল। অনুরূপভাবে মি. কারমাইকেলের শাসনামলেই স্থাপিত হয়েছিল রংপুরে কারমাইকেল কলেজ বিভিন্ন দাতা ও সরকারের অর্থায়নে। বেঙ্গল প্রভিন্সে উনিশ শতকেই প্রাইমারি স্কুলের অগ্রযাত্রা হয়েছিল গ্রামগঞ্জে। তখনকার দিনে পূর্ববাংলার গ্রামগঞ্জ অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল, আলো বাতাস থাকলেও ছিল না প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য কোনো প্রাইমারি স্কুল। গ্রামের দু-চার জন বিত্তবানের ছেলেমেয়েরা কলকাতায় পড়াশোনা করত। তবে এসব শিক্ষার্থী সচরাচর গ্রামে এলেও কোনো দিন স্থায়ী হয়নি যথারীতি ফিরে যেত ঈদ-পূজা-পার্বণ শেষে।

তবে দু-এক জন যে ব্যতিক্রম ছিল না তা নয়। পাবনা শহরের ৮-১০ মাইল পশ্চিমে দাপুনিয়া হাট থেকে আওতাপাড়া যাওয়ার পথে মাঝখানের বর্ধিষ্ণু গ্রামের নাম মাধপুর। সেই মাধপুর গ্রামেই জন্মেছিলেন ডা. ইসমাইল হোসেন (এলএমএফ কলকাতা : ১৮৬৪-১৯৫৫)। তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। সঙ্গে তাঁর অনুজ আজিম উদ্দিন। দুই ভাই পড়ালেখায় অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। ইসমাইল হোসেন ‘এন্ট্রান্স’ (মাধ্যমিক) পাস করার পর কলকাতা থেকে এলএমএফ পাস করে ফিরে এসেছিলেন মাধপুর গ্রামে। গ্রামের মানুষের সেবাদানই ছিল তাঁর লক্ষ্য। অনুজ আজিম উদ্দিন কলকাতার একটি হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এন্ট্রান্স পাস করেই পেয়েছিলেন ইংরেজদের অধীনে মুসলিম কোটায় পুলিশের চাকরি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগেই আজিম উদ্দিন সাহেবকে দারোগা পদে পদোন্নতি দিয়ে পাঠানো হয়েছিল জলপাইগুড়ি। ইংরেজদের বাগানের শ্রমিকরা যেন কোনো প্রকার হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে না পারে। চা-বাগানের শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন চা-বাগানের মালিকরা। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের শিক্ষক, শিক্ষিকা ছিলেন ইংরেজ মহিলা-পুরুষ মিশনারিরা। বাঙালিও ছিলেন কয়েকজন। অন্যদিকে জলপাইগুড়ির অনেক চা-চাগানেও চালু হয়েছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুল চা-বাগানের ভিতরের বাইরের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন আজিম উদ্দিন। ডা. হোসেনদের পূর্বপুরুষ ছিলেন ‘সরদার’ উপাধিভুক্ত। কেননা সেকালের সমাজব্যবস্থায় ডা. ইসমাইল হোসেন-আজিম উদ্দিনের পিতা ধনশালী এবং প্রতিপত্তিশীল ও শিক্ষিত হওয়ার সুবাদে গ্রাম্য মোড়লরা ওই পরিবারটিকে ‘সরদার’ উপাধি দিয়ে দাপুনিয়া ইউনিয়ন থেকে শুরু করে আওতাপাড়া চরগড়গড়ি, তিলকপুর, বাঁশেরবাদা, মাধপুর গ্রামে ঢোল পিটিয়ে জানিয়েছিল সরদার সাহেবের নাম এবং একই সঙ্গে বাড়িটির নামকরণ হয়েছিল ‘সরদারবাড়ি’।

সেই সরদারবাড়ির বড় ছেলে ছিলেন ডা. ইসমাইল হোসেন এবং দ্বিতীয় জলপাইগুড়ির দারোগা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে দারোগা সাহেব বিয়ে করেছিলেন মাধপুর গ্রামের পশ্চিমের তিলকপুর গ্রামে। স্ত্রীর বয়স ছিল ১৩-১৪ বছর। নাম বেগম পুকুরেননেসা, ছিলেন স্বল্পশিক্ষিত, যেহেতু তিলকপুর গ্রামে কোনো প্রাইমারি স্কুল না থাকায় পিতা-মাতার উৎসাহেই তিনি শিক্ষা লাভ করেছিলেন। সেকালের সমাজব্যবস্থায় তাঁর বিয়ে হয়েছিল ওই বয়সে সরদারবাড়ির ছেলে আজিম উদ্দিন দারোগার সঙ্গে। আজিম উদ্দিন সাহেবকে তাঁর অগ্রজ ডা. ইসমাইল হোসেন উৎসাহিত করেছিলেন যেন বেগম পুকুরেননেসাকে জলপাইগুড়ির চা-বাগানে বসবাসরত যে কোনো ইংরেজি মিশনারি অথবা ইংরেজ মহিলাদের অনুরোধ করে ইংরেজি শেখান। অগ্রজের কথা রেখেছেন অনুজ আজিম উদ্দিন। পুকুরেননেসা ছাত্রী হিসেবে ভালো থাকায় মিশনারি ও ইংরেজ মহিলাদের সুদৃষ্টিতে ছিলেন তিনি। বেশ কয়েক বছর পড়ালেখার মাঝখানে তিনি ছবি আঁকা এবং কাপড়ের সুতাশিল্পে সুনাম অর্জন করেন। তাঁর এসব গুণ দেখে চা-বাগানের মালিক, মিশনারি ইংরেজ মহিলাদের উৎসাহে দারোগা আজিম উদ্দিন বেগম পুকুরেননেসাকে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন হাইস্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে আজিম উদ্দিন ও পুকুরেননেসার বিয়ের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সন্তান-সন্ততি না থাকায় স্বামীকে অনুমতি দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিয়ের জন্য এবং জলপাইগুড়ি থেকে চিঠি লিখে ভাসুর ডা. ইসমাইলকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর স্বামীকে পুনরায় যেন বিয়ে দেওয়া হয়। পুকুরেননেসার অনুরোধে অনুজকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। আজিম উদ্দিন অগ্রজের কথা রেখেছিলেন।

পুকুরননেসা লেডি ব্রেবোর্ন স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গেই পাস করে সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন এবং তিনি নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার অনুসারী থাকার সুবাদে তখনই মনে করেছিলেন যদি কোনো দিন সুযোগ পান অজপাড়াগাঁ মাধপুরে একটি প্রাইমারি স্কুল খুলবেন এবং বিনা বেতনে ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষা দেবেন। তবে প্রাইমারি স্কুল বানানোর ইচ্ছা পুকুরেননেসা জানিয়েছিলেন ভাশুর ডা. ইসমাইলকে। এদিকে আজিম উদ্দিন দ্বিতীয় বিয়ের পর একটি ছেলে ও একটি মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন।

সুখে শান্তিতে দিন কাটলেও আজিম উদ্দিন প্লেগ রোগে হঠাৎ মারা গেলে অনুজের দুই স্ত্রীকে জলপাইগুড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন অগ্রজ মাধপুর গ্রামে। সেই মাধপুর গ্রামে ডা. ইসমাইল ১৯৩১ সালে প্রথম প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করেছিলেন, নিজ বাড়ির পুকুরের পশ্চিম দিকে। বিশাল দুই চালা করে টিন দিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘ডা. ইসমাইল হোসেন প্রাইমারি স্কুল’। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আজিম উদ্দিনের প্রথম স্ত্রীকে। সহযোগী শিক্ষিকা ছিলেন আজিম উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী। ডা. হোসেনের চার ছেলে, চার মেয়ে এবং আজিম উদ্দিনের এক ছেলে, এক মেয়েসহ নিকটাত্মীয় পাড়াপড়শি পেয়েছিল শিক্ষার আলো। ডা. হোসেনের চার ছেলেই ছিলেন মেধাবী। খোরশেদ, মোয়াজ্জেম, মারুফ, শামসুজ্জোহা। অনুরূপভাবে মেয়েগুলো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন। মাধপুরের প্রাইমারি স্কুলেই শুরু হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা। আজিম উদ্দিন দারোগার এক ছেলে আবুল মুনসুর (মন্টু), মেয়ে টুনু। আবুল মুনসুর শিক্ষাজীবন শেষ করে হয়েছিলেন স্থপতি। পরবর্তীতে মাধপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যারা লেখাপড়া শিখেছিলেন তারাও শিক্ষা শেষে পেয়েছিলেন সরকারি চাকরি। খোরশেদ হোসেনের বড় ছেলে শামসুল আলম (তোতা) দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হয়েছিলেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর দুই ভাই প্রকৌশলী, দুই বোন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। সরদার পরিবারে আবুল মুনসুরের বড় মেয়ে মাহবুবা আকতার, তিনি ছিলেন ঢাকার রামপুরার একরামুন নেসা কলেজের অধ্যক্ষ। মেজ মেয়ে মারুফা আকতার নীরা ছিলেন ধানমন্ডির একটি ইংলিশ স্কুলের শিক্ষিকা। আবুল মুনসুরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে রেজাউল আজিম রেজা হয়েছেন ব্যবসায়ী, ছোট ছেলে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা জগলুল আজিম রানা। ওই সরদার পরিবারের বর্তিকা জ্বালিয়েছিলেন ডা. হোসেন ১৯৩১ সালে। তার পর থেকেই পরিবারের সবাই দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা পেয়েছেন। ওই পরিবারের ডা. হোসেনের চতুর্থ ছেলে শামসুজ্জোহা ছিলেন রেলওয়ের প্রকৌশলী। জোহা সাহেবের বড় ছেলে এখন শিক্ষকতা করছেন সস্ত্রীক। ওই ডা. ইসমাইল হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের ফাহাদ জোহা ও মাধপুর বাণিজ্য উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন লেখক এবং রাজনীতিবিদ সাজেদুল হক নীলু। যিনি পরপর দুবার দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরিবারের আরেক সদস্য সহিদুজ্জামান ছানা প্রকৌশলী। এখন অবসরে। পিতামহ ডা. ইসমাইল হোসেনের নামে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সাধারণ বীমার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৪ বিঘা জমি এবং প্রচুর অর্থ দিয়ে প্রাথমিকভাবে স্কুল শুরু করায় বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুদানে দৃষ্টিনন্দন একটি চার তলা ভবন তৈরি হয়েছে। সেই চার তলাতে আছে শেখ রাসেলের নামে একটি গবেষণাগার। কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই স্কুলটি উদ্বোধন করেন। দৃষ্টিনন্দন স্কুলটির চার তলায় স্থাপিত হয়েছে বিশাল একটি লাইব্রেরি। বেগম পুকুরেননেসার নামে। স্কুলটির বয়স ৯০ বছর।

লাইব্রেরি উদ্বোধন উপলক্ষে ২১ মার্চ পাবনা শহরের পশ্চিমের সেই অনির্বাণ মাধপুরে গিয়েছিলাম। স্কুলের শিক্ষকমন্ডলী ও ঢাকা থেকে আগত মুনসুর পরিবারের ছেলেমেয়ে উপস্থিত ছিলেন। লাইব্রেরির উদ্বোধক ছিলাম আমি। উদ্বোধনের আগেই পরিচিত হলাম সরদার পরিবারের আরেক কৃতী সন্তান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষিত রবি সরদারের সঙ্গে। রবি একটি দৈনিক পত্রিকা বের করেন ঈশ্বরদী থেকে। পত্রিকারটির নাম দৈনিক ‘উত্তর জনতা’। রবি জানালেন, তাঁদের বংশের কোনো ছেলেই এখন আর পূর্বপুরুষের পাওয়া উপাধি ‘সরদার’ শব্দটি পারতপক্ষে ব্যবহার করেন না একমাত্র আমি ছাড়া। শুনে ভালো লাগল, ইতোমধ্যে বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা নাচ-গান, কবিতা, জাতীয় সংগীত গেয়ে ২১ মার্চের দিনটি উৎফুল্ল করে তুলেছিল। অনুষ্ঠানের আগে আমাকে পুকুরেননেসার নামে প্রতিষ্ঠিত পুকুরেননেসা লাইব্রেরি উদ্বোধন করতে হয়েছিল। দর্শক ছিল প্রচুর। আমার মনে হয় অনির্বাণ মাধপুরের প্রাইমারি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অথবা প্রথম প্রধান শিক্ষিকাকে একুশে পদক (মরণোত্তর) সরকার দিতে পারে। যেহেতু ডা. হোসেন এবং পুকুরেননেসার অবদান মাধপুরবাসীর কাছে অসামান্য এবং একই সঙ্গে মনে হয় গ্রামটির নাম ‘অনির্বাণ মাধপুর’ হয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।

রবীন্দ্রনাথের ‘শিক্ষা’ গ্রন্থে মোট ২৩টি প্রবন্ধ আছে। শিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ডাকঘর’ নাটকের অমল যেমন পন্ডিত হতে চাননি, তেমনি রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘মূর্খ’ কবিতায় বলেছেন ‘আমি তো চাইনি হতে পন্ডিতমশাই’। জাতীয় বিদ্যালয় প্রবন্ধে জানিয়েছেন ‘ভুল করিবার যাহার অধিকার নাই সত্যকে আবিষ্কার করিবার অধিকারও সে পায় নাই।’

                লেখক : কবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর