বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত

যুবায়ের আহমাদ

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত

বছরের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর। হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাতের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ আল কোরআনে ‘কদর’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করেছেন। ফলে এ রাত গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকে বছরের অন্যান্য রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। লাইলাতুল কদর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ করুণা। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতকে লাইলাতুল কদর দিয়েছেন। যা আগেকার কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি।’ কানজুল উম্মাল।

আল কোরআনে আল্লাহ নিজেই লাইলাতুল কদরের শ্রেষ্ঠত্ব ও এর কারণ বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ সুরা কদর, আয়াত ৩। লাইলাতুল কদরের বিশেষ মর্যাদার কোরআন বর্ণিত কারণগুলো হলো-

১. এ রাতে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। ২. এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ৩. এ রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) একদল ফেরেশতাসহ জমিনে অবতরণ করেন। তারা ওইসব লোকের জন্য দোয়া করতে থাকেন যারা রাত জেগে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে।

লাইলাতুল কদর কোরআন নাজিলের রাত। কোরআন নাজিলের কারণেই এ রাতের মর্যাদা এত বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ প্রথম আসমানের বায়তুল ইজ্জাহ বা বায়তুল ইজ্জতে (প্রথম আকাশে ফেরেশতাদের ইবাদতের ঘর) পুরো কোরআন মজিদ একসঙ্গে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেন। তারপর সেখান থেকে সময় ও প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে অল্প অল্প করে ২৩ বছরে তা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ করা হয়।’ তাফসিরে ইবনে কাসির।

লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদরের মাধ্যমে কম হায়াত পেয়েও বেশি হায়াত পাওয়া আগেকার উম্মতের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হবে এ উম্মত। মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরাইলের এক আবেদের (ইবাদতকারী) কথা বর্ণনা করলেন। যে সারা রাত ইবাদতে লিপ্ত থাকত। সকাল হলেই আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হতো। এভাবে ১ হাজার মাস ইবাদতে কাটিয়ে দিল। নবীজির এ কথা শুনে উপস্থিত সবাই বিস্মিত হলো। আল্লাহ সুরা কদর নাজিল করে জানিয়ে দিলেন, লাইলাতুল কদরের ইবাদত সওয়াবের দিক থেকে বনি ইসরাইলের ওই ব্যক্তির হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’ তাফসিরে ইবনে কাসির। হাজার মাস হলো ৮৩ বছর চার মাস। সুতরাং যে ব্যক্তি একটি লাইলাতুর কদর পেল এবং এ রাতে ইবাদত করতে পারল সে অন্য উম্মতদের ৮৩ বছরের বেশি সময়ের ইবাদতের চেয়ে বেশি সওয়াব লাভ করল। এ তো একটি লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির সওয়াব। কেউ যদি জীবনে ৫০ বার লাইলাতুল কদর পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে তাহলে সে অন্য উম্মতদের ৪ হাজার ১৬৬ বছর ইবাদতের সমান সওয়াব লাভ কববে।

এ রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) একদল ফেরেশতাসহ জমিনে নেমে আসেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন লাইলাতুল কদর উপস্থিত হয় তখন হজরত জিবরাইল একদল ফেরেশতাসহ পৃথিবীতে নেমে আসেন। তাদের সঙ্গে সবুজ রঙের একটা ঝান্ডা থাকে যা কাবার ওপর উড্ডীন করে দিয়ে ফেরেশতারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েন এবং আল্লাহর বান্দারা যে যেখানে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে, বসে, আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে, দোয়া করে তাদের সালাম করে, তাদের সঙ্গে মুসাফাহা করে এবং তাদের দোয়ায় আমিন আমিন বলতে থাকে।’ (বায়হাকি)। আল্লাহর দরবার থেকে গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার এক অবারিত সুযোগ লাইলাতুল কদর। যে ব্যক্তি এ রাতে ইবাদত করবে আল্লাহ তার অতীতের সব (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদর ইবাদতে কাটায় আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি, মুসলিম)। তওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহও মাফ করিয়ে নেওয়ার অনন্য সুযোগ লাইলাতুল কদর।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর