শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর

আবদুর রশিদ

রমজানকে বলা হয় সেরা মাস। এটা কোরআন নাজিলের মাস। এ মাস ধারণ করছে এমন এক রাত যে রাতের মর্যাদা অপরিসীম। সেই রাতের নাম লাইলাতুল কদর। তুলনাহীন গৌরব ও মর্যাদার অধিকারী এই পবিত্র রাত। আরবি লাইল শব্দের অর্থ রাত বা রজনী। কদর শব্দের আভিধানিক অর্থ সম্মান, মর্যাদাবান, ভাগ্য গণনা-নির্ধারণ ইত্যাদি। লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের অবহিত করার জন্য আল কোরআনে সুরা কদর নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা অবতীর্ণ করেছেন; যা এ রাতের সম্মান ও ফজিলতের জন্য যথেষ্ট। মহানবী (সা.) মহিমান্বিত রজনী বা লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্য সম্ভাব্য যে পাঁচটি বিজোড় রাতের উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে আজকের সাতাশের রাতটি অন্যতম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে ইবাদতে কাটিয়ে দেয়, তার পূর্ববর্তী জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’

লাইলাতুল কদর এমন একটি রজনী যা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম এবং প্রত্যেক কদরপ্রাপ্ত ব্যক্তি সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপরূপে পরিগণিত হয়। এ প্রসঙ্গে সুরা কদরে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি এটি (আল কোরআন) নাজিল করেছি এক মর্যাদাপূর্ণ রাতে। তুমি কি জানো সেই মর্যাদাপূর্ণ রাত কী? এ মহিমান্বিত রজনীটি হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অর্থাৎ জিবরাইল তাদের মালিকের সব ধরনের আদেশ নিয়ে (জমিনে) অবতরণ করে। আর (তারা) শান্তি (বর্ষণ করতে থাকে) যা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ কদরের রাত এতটাই মর্যাদাপূর্ণ যে এ রাতে আল কোরআন নাজিল হয়েছে। জয়নাব বিনতে উম্মে সালমা (রা.) বলেন, ‘রমজানের যখন ১০ দিন বাকি থাকত তখন রসুলুল্লাহর পরিবারের যারা সালাতে দাঁড়াতে সক্ষম তাদের তিনি সালাতে না দাঁড় করিয়ে ছাড়তেন না।’ তিরমিজি, ফতহুল বারি। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রজনীতে জাগ্রত থেকে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে ও আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।’ রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে সারা বছরের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত করতেন এবং প্রায় রাতভর নিজে ইবাদতের মধ্যে কাটাতেন ও পরিবারবর্গকেও নামাজে দাঁড় করাতেন। বায়হাকির বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, দাঁড়িয়ে ও বসে জিকিররত মুমিন বান্দাকে এ রাতে জিবরাইল (আ.) সালাম দেন এবং ফেরেশতারা মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি জানতে পারি যে কোন রাতটা কদরের, তাহলে ওই রাতে আমি কী বলব? তিনি বললেন, এ দোয়া বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাময়। তুমি ক্ষমা কর, ভালোবাসো। অতএব আমাকে ক্ষমা কর।’ আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত, নাসায়ি, বায়হাকি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবেকদরে আল্লাহর কৃপা অর্জনের তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর