সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সেই অন্নই ভোজনীয় যা জীর্ণ হয়

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

সেই অন্নই ভোজনীয় যা জীর্ণ হয়

স্বাধীনতার ৫১ বছরের মাথায় এসে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট না ঘটলে এবং দেশ যদি দীর্ঘ সামরিক শাসনের কবলে না পড়ত তাহলে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া থেকেও বাংলাদেশের অগ্রবর্তী অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা ছিল। ৫১ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গায় এসেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর এই অর্জন ১৭ কোটি মানুষের অদম্য পরিশ্রমের ফল, এ কথাটি যেমন সত্য, তেমনি মানুষের সহজাত অসীম সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মৌলিক উৎসের জায়গা তার রাষ্ট্র ও রাজনীতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি এবং আদর্শের মধ্য দিয়ে। তবে কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই, এরকম হলে সেটা আবার ভিন্ন কথা। তাই শুধু শাসক ও শাসনের ভালোমন্দের কারণেই অনেক উন্নত দেশ রসাতলে গেছে, আবার দরিদ্র অনুন্নত দেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। শাসক ও শাসন পদ্ধতিই মুখ্য, বাকি সব গৌণ। বহমান রাজনীতি দেশের মানুষকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিখায়। আর রাজনীতি বহমান থাকলে সেটা আধুনিক হয়, বিশ্বের সব রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং ধর্ম-বর্ণের সঙ্গে সহযাত্রী হয়ে চলতে পারে। পশ্চাৎপদতা, অন্ধবিশ্বাস, মধ্যযুগীয় অনমনীয় এবং অপরিবর্তনীয় চিন্তা, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে অন্ধগলির মধ্যে নিয়ে যায়। তখন মানুষ পথ হারিয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোকের শিকার হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়, বিশ্ব অঙ্গনে রাষ্ট্র মর্যাদা হারায়। এক সময়ে বাংলাদেশের এমন অবস্থাই হয়েছিল, যখন বিশ্ব মিডিয়া ও বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হচ্ছিল, পরবর্তী আফগানিস্তান হবে বাংলাদেশ। সেটা বেশি দূরের কথা নয়, ২০০১-২০০৬ মেয়াদের ঘটনা। কিন্তু বাংলাদেশ আজ সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে, যে কথা দিয়ে লেখাটি শুরু করেছি। এর মৌলিক কারণ বাংলাদেশ আজ আধুনিক পথে চলার চেষ্টা করছে। আধুনিকতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য বহুত্ববাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি-উপজাতি, নারী-পুরুষ বিবেচনায় রাষ্ট্র ও রাজনীতি কোনো বিভাজন করবে না। বৈদেশিক নীতি ও আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কারণ, ধর্ম বিবেচনায় আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক হয় না। একটা রাষ্ট্র কখনো একটি ধর্মের মানুষের জন্য হতে পারে না। আর সেটা হতে পারে না বলেই রাষ্ট্রের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকতে পারে না। ধর্ম মানুষের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। তাই প্রত্যেক মানুষের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকা আবশ্যক। অন্য ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া শুধু আধুনিকতার বিবর্জিতই নয়, এটা রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতার সমান এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্তরায়। যা হোক যে কথা বলছিলাম, বাংলাদেশ গত ১২-১৩ বছর ধরে আধুনিক পথে চলার চেষ্টা করছে। এই চলার পথ ছিল অত্যন্ত কণ্টকাপন্ন এবং অন্য কথায় বলা যায় হোঁচট খেয়ে খেয়ে চলার মতো, সহজ ও বাধাহীন কখনো হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, রাজনৈতিক সাহস, দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার কারণে আধুনিকতার যাত্রাপথ থমকে যায়নি, চলমান আছে। কিন্তু এই পথটি নিরাপদ হয়ে গেছে, এই কথা একদম বলা যাচ্ছে না। তাই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ ও হুমকি সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রথমত, বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দারিদ্র্যই রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। তবে গত ১২ বছরে শতকরা ২০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এটাকে দারিদ্র্য মোচনের উদাহরণ হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু আরও শতকরা ২০ ভাগ, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত, যার অর্ধেক আবার অতিদরিদ্র, যাদের অবস্থা আরও খারাপ। মনে রাখতে হবে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ, বিশাল সংখ্যা। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দেশের মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৩ কোটির কম। দারিদ্র্য বিমোচনের গড় গতিমাত্রা বিগত ১২ বছরের মতো বহাল থাকলে আশা করা যায় আগামী ১০-১২ বছরে এ ক্ষেত্রে আমরা বৈশ্বিক মান অর্জনে সক্ষম হব। তবে এই পথের বড় হুমকি দুর্নীতি। সমাজ ও রাষ্ট্রের সব জায়গায় দুর্নীতির লাগামহীন বিস্তার ঘটেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে চাঁদাবাজি, যার কবল থেকে সামান্য ফুটপাথের একজন দোকানদারও রক্ষা পাচ্ছেন না। এটা যেন দেখার কেউ নেই। কিছুদিন আগে নিউমার্কেট এলাকায় দোকানদার ও ছাত্রদের মধ্যে অনভিপ্রেত সংঘর্ষের সূত্রে জনপ্রিয় এক নিউজ চ্যানেল একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখলাম শুধু নিউমার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায় ফুটপাথের দোকানদারদের কাছ থেকে দৈনিক ৭ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। সারা বছরে পুরো ঢাকা শহরে চাঁদা তোলা হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। তারপর জনসেবার খাতগুলোতে তো শুধুই ঘুষের রাজত্ব। ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতির কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতও কম যায় না। জীবনের অত্যাবশ্যকীয় এই তিনটি খাতের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভারতের দিল্লিতে আম আদমি পার্টির কেজরিওয়াল সরকার ধাপে ধাপে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কমিয়ে আনছে, আর ঢাকায় ঘটেছে ঠিক তার উল্টোটি। মানুষ মনে করে দুর্নীতির কারণে এই খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আর ভর্তুকি কমানোর জন্য প্রতি বছর এসবের মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। শাস্তি পাচ্ছে সাধারণ মানুষ, আর পরোক্ষভাবে দুর্নীতিবাজরা প্রশ্রয় পাচ্ছে। লাগামহীন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি প্রান্তিক এবং সাধারণ মানুষকে দারুণভাবে স্পর্শ করে, যার একটি রাজনৈতিক ব্যাকলাশ থাকে। একজন মানুষ যখন নিজে অন্যায়ের শিকার হয় তখন তার কাছে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থ গৌণ হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোটের মেরুকরণ গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ হতাশ হয়ে যেমন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তেমনি ক্ষুব্ধ মানুষ বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী মানুষের মুখেই শোনা যায় বর্তমান সরকারের অসাধারণ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি দুর্নীতির নিচে ঢাকা পড়ে যেতে পারে। তাতে শুধু সরকারি দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, রাষ্ট্র চলে যাবে পাকিস্তানপন্থি উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হাতে, যার ভয়াবহ পরিণতি শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে। ১৭ কোটি মানুষের সব সম্ভাবনার দ্বার আবার বন্ধ হয়ে যাবে। দুর্নীতির পর বাংলাদেশের জন্য এখন দ্বিতীয় হুমকি সাম্প্রদায়িকতা। বাংলাদেশের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাহাত্তর সালে সংবিধান প্রণয়নের প্রাক্কালে বলেছিলেন, অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে বাংলাদেশকে রক্ষা করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর এই সতর্কবাণী আজ বাংলাদেশকে প্রচন্ডভাবে তাড়া করছে। সাম্প্রদায়িকতার লাগাম টানতে না পারলে সব অর্জন বিসর্জনে পরিণত হতে পারে। ইতিহাস কিন্তু সেই শিক্ষাই দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার জন্মদাতা, ধারক ও বাহক বিএনপি, যার সঙ্গে সরাসরি রয়েছে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত এবং অন্যান্য ধর্মান্ধ উগ্রবাদী দল। বিএনপি-জামায়াত মিলে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বাংলাদেশকে আধুনিকতা বিবর্জিত মধ্যযুগীয় পথে নেওয়ার চেষ্টা করেছে বলেই তখন বিশ্ব অঙ্গন থেকে বলা হয়েছে পরবর্তী আফগানিস্তান হবে বাংলাদেশ। এটি এখন অন রেকর্ড হয়ে আছে। এই পথে সে সময়ে তারা সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। যার উদাহরণ ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ধরা পড়া দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা এবং প্রগতিশীল রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনা। একই সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করার জন্য চালানো হয়েছে সুপরিকল্পিত অভিযান। দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা ২০০৩ সালের ২৩ নভেম্বর সংখ্যায় শিরোনাম করেছিল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য দেশত্যাগই একমাত্র বাঁচার কথা। এসব ঘটনা ঘটেছে তখনকার সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায়, যার অনেকগুলো আজ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। সংগত কারণেই বিএনপি সেসব হজম করতে পারেনি। অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল সীমাহীন ব্যর্থতা। সুতরাং ফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। আজ বিএনপি একটি দিশাহীন ও নেতৃত্বহীন রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে গেছে। এখনো বিএনপির শীর্ষনেতা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দুর্নীতির মামলায় দীর্ঘমেয়াদি সাজা খাটছেন। সরকারের মার্সিতে জেলের বাইরে নিজ বাসায় থাকতে পারছেন। তাঁর বয়স হয়েছে এবং তিনি অসুস্থ। যদিও তিনি সরাসরি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারছেন না, কিন্তু বিএনপি কি বেগম খালেদা জিয়ার মতের বিরুদ্ধে বড় কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতি মুহূর্তে ভাবতে হচ্ছে তিনি সরকারের দয়ায় বাসায় থাকতে পারছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া দুর্নীতিসহ অন্যান্য মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে ফেরারি হিসেবে লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছেন। তিনি লন্ডনে বসে মায়ের বিরুদ্ধে যায় এমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দিলে তা কি বিএনপি বাস্তবায়ন করতে পারবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শতকরা জিরো পয়েন্ট পাঁচ ভাগও ভোট নেই এমন কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল ও নেতার নেতৃত্বে নির্বাচনী জোট গঠন করে। আমরা তখনই বলেছিলাম এটা বিএনপির জন্য আরেকটি বড় রাজনৈতিক ভুল হচ্ছে। আমাদের সেই কথারই প্রতিধ্বনি এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন তারা কখনো করতে পারেনি। তাই তাদের আন্দোলন কখনো সফল হয়নি। ২০১৪-২০১৫ সালের আন্দোলনের ব্যাকলাশ বিএনপি এখনো হজম করতে পারেনি। একটি মর্মান্তিক ঘটনার উল্লেখ করি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরের দিন জামায়াত-বিএনপির ক্যাডার বাহিনী যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়ার পুরো গ্রামটি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। মানুষের খাবারের চাল পর্যন্ত পুড়ে অঙ্গার হয়। ঘটনার পরের দিন একটি প্রধান দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় তার সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাতে দেখা যায় নিজ বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে একজন মধ্যবয়সী হিন্দু নারী তিন বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে অঝোরে শুধু কাঁদছেন। শিশুটিও কাঁদছে। মা, শিশু দুই দিন ধরে কোনো খাবার পাননি। সারা বিশ্বের মানুষ সেই দৃশ্যটি দেখেছে। এই নিদারুণ দৃশ্যের লৌহসম কঠিন শক্ত অভিশাপ তারা কী করে হজম করবে। ২০১৫ সালে অবরোধের নামে নিরীহ প্রান্তিক মানুষের রাস্তার আশপাশের দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করেছে। রাতে ঘুমন্ত মানুষভর্তি বাসে আগুন দেওয়াতে গর্ভবতী নারী-শিশুসহ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। তাতে বিএনপির লাভ কিছু হয়নি। বরং শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির রাজনীতি ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আগামী দিনে তাদের অবস্থা হবে ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান। ২০১৩-২০১৪ সালের জায়গায় তারা ফিরে যেতে চাইছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এবং আন্দোলন করেই নাকি সেটা তারা আদায় করে নেবে। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন করার অধিকার সবার রয়েছে এবং সেটা অবশ্যই থাকতে হবে। আজ বিশ্বের সবকিছু সুপারসনিক গতিতে চলছে এবং পরিবর্তন হচ্ছে। আর বিএনপি চাইছে ১০ বছর পেছনে ফিরে যেতে। যে কোনো কাজে নতুনত্ব এবং সময়োপযোগী উপায় উদ্ভাবন করতে না পারলে তা কখনই সাফল্য পায় না। কিন্তু নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে ইতিপূর্বে যেসব কর্মকান্ড এখনো বিএনপি হজম করতে পারেনি সেই পথেই আবার তারা হাঁটছে। রামায়ণে উল্লেখ আছে, দন্ডকারণে সীতাকে হরণ করার পর রাক্ষসরাজ রাবন যখন রথে করে লঙ্কার দিকে উড়ে যাচ্ছিল তখন পক্ষীরাজ দেবতা জটায়ু রাবনের উদ্দেশে বলেছিলেন, ভ্রাতা দশানন তোমার এই নিন্দিত কার্য করা উচিত নয়। সেই ভারই বহনীয় যা অবসন্ন করে না, সেই অন্নই ভোজনীয় যা জীর্ণ হয়।

        

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর