মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনার পর সপরিবারে মা-বাবার কবরে

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

করোনার পর সপরিবারে মা-বাবার কবরে

করোনার প্রাদুর্ভাবে সুদীর্ঘ তিন বছর পর পুরো পরিবার টাঙ্গাইলে এসেছি। দীর্ঘদিন মসজিদে যাইনি, দুই বছর ঈদের মাঠে তো নয়ই। ঘরেই নামাজ আদায় করেছি। করোনা-পরবর্তী শরীরটা তেমন ভালো না। চলাফেরা করতেও কিছুটা খারাপ লাগে। তাই টাঙ্গাইল ঈদগাহ ময়দানে হেঁটে যেতে পারব কি না ভাবছিলাম। গাড়িচালক যীশুকে বলা ছিল গাড়ি করে নিয়ে যেতে। টাঙ্গাইল ঈদগাহে জামাতের সময় ছিল সকাল সাড়ে ৮টায়। সেহেতু ৮টায় মাঠে যাওয়ার জন্য নেমেছিলাম। তখনই ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে প্রকৃতি মুখ ভার করে ছিল। বৃষ্টির বিরাম ছিল না। একটু পরে কোর্ট মসজিদের মাইকে ঘোষণা এলো, সকাল ৯টায় ঈদের জামাত হবে। বসে রইলাম সেখানেই। ৮টা ৪০-৫০-এর দিকে বৃষ্টি কিছুটা হালকা হলেও তখনো গুঁড়িগুঁড়ি পড়ছিল। গেলাম মসজিদে। তেমন লোক ছিল না। ৭০-৮০ জনের বেশি হবে না। ৯টার স্থলে ৯টা ১০ মিনিটে নামাজ পড়ানো হলো। ততক্ষণে মসজিদ ভরে গিয়েছিল। নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরলাম। এক মাস রোজা শেষে সকালে খাওয়ার কথা মনেই পড়েনি। সামান্য কিছু মুখে দিয়ে দীপ-কুঁড়ি-কুশি এবং দীপের মাকে নিয়ে ছুটেছিলাম গ্রামের বাড়ি ছাতিহাটিতে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী ৪ এপ্রিল, বাবার ১৩ মে। বহু বছর পর এবারই গলব্লাডার অপারেশনের কারণে মার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর কবরে যেতে পারিনি। দীপ ও ছোটবোন শুশু গিয়েছিল। মাহে রমজানের দিন তাই ইফতারের ব্যবস্থা করেছিল। নিজে যেতে না পারায় মনটা দারুণ ছটফট করছিল। তাই ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষেই ছুটেছিলাম বাবা-মার কবরে। তখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীকে নিয়ে বাবা-মার কবরে ফাতিহা পাঠ করে ১২টার মধ্যেই টাঙ্গাইল ফিরেছিলাম। বেশ কিছু বাইরের লোক এসেছিল। তা ছাড়া ছোট ছোট বাচ্চা, আত্মীয়স্বজন এসেছিল অনেক। দুপুরে কারও সঙ্গে তেমন কথা বলিনি। বিকালে অনেকের সঙ্গেই দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা হয়। আসর-মাগরিব পর্যন্ত ছাদেই ছিলাম। ছাদে কিছু গাছগাছড়া আছে। সেখানে আম-জাম-জামরুল-বরই-মাল্টা-পেয়ারা-খেজুর-ত্বিন-ড্রাগন-নারকেল আরও অনেক গাছ। লাউ-কুমড়া-ডাঁটা-পুঁইশাক-বেগুন-মরিচের গাছগাছালিও আছে। তাই বিকালে ছাদে বসলে বেশ ভালোই লাগে। অনেক পাখপাখালিও থাকে সারাক্ষণ। শহরের বদ্ধজীবনে খোলা ছাদে আকাশের নিচে সময়টা বেশ ভালোই কাটে। মাঝেমধ্যে লেখাপড়াও করি সেখানে। এভাবেই চলে যায় দিনরাত।

এবার ঈদে রাস্তায় মানুষকে তেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। কিন্তু ২৯ এপ্রিল সাহরি সেরে ভোর ৫টায় রওনা হয়ে টাঙ্গাইল পৌঁছেছিলাম সকাল ৯টায়। কল্যাণপুর থেকে মিরপুর সেতু পার হতেই দেড় ঘণ্টা লেগেছিল। সেখান থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত তেমন কোনো গাড়ি-ঘোড়া ছিল না। কিন্তু চন্দ্রায় ছিল প্রচন্ড ভিড়। বাড়ইপাড়া মসজিদের পশ্চিমের একটা গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে কালিয়াকৈর বাইপাসে উঠেছিলাম। তারপর আর গাড়ি-ঘোড়ার কোনো চাপ ছিল না। টাঙ্গাইল এসে গোসল করে বারান্দায় বসে জুমার নামাজ আদায় করেছিলাম। বহুদিন পর পুরো পরিবার টাঙ্গাইলের বাড়িতে। বাড়িটা বেশ ভরা ভরা লাগছিল, বেশ ভালো লাগছিল। আর কেন জানি কুশি কাছে থাকলে আমার আর কোনো শূন্যতা থাকে না। একটি বাচ্চা একজন মানুষের কতটা হৃদয় জুড়ে থাকতে পারে তা অপূর্বসুন্দর দুটি সন্তান থাকার পরও পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম করতে পারিনি। যতটা কুশি আসার পর পেরেছি। বাচ্চাটার জন্য সব সময় হৃদয় ব্যাকুল হয়ে থাকে। রমজানের শেষ শুক্রবার ছেলেমেয়েরা টাঙ্গাইল এসে পরের শুক্রবারে ঢাকা ফিরেছে। কুশির ১৬ তারিখ থেকে ফাইনাল পরীক্ষা। তাই আমিও ‘না’ করিনি। কোনো দিনই বাচ্চাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তেমন কোনো কথা বলি না। ১৩ মে বাবার ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ওই দিন বাবার কবরে ফাতিহা পাঠ করে তবেই ঢাকা ফিরব। এবার ঈদুল ফিতরে এক লম্বা ছুটি। ২৯ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি। মাঝে ৫ মে বৃহস্পতিবার। অফিস খোলা থাকলেও কোনো লোকজন অফিস করেনি। শতকরা পাঁচ-ছয় জনের বেশি কোনো অফিসেই হাজির ছিল না। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ডিসি ও এসপি অফিসে গিয়েছিলাম। কোনো লোকজন ছিল না। আমি টাঙ্গাইল জেলা সদর এর আগে এমন পরিত্যক্ত দেখিনি। সব সময় লোকজন গিজগিজ করে। সেদিন ছিল সুনসান, একেবারে ফাঁকা। পরের রবিবারের আগে দেশে কর্মচাঞ্চল্য আসেনি। এটাই স্বাভাবিক। সরকার ইচ্ছা করলেই বৃহস্পতিবার ৫ মে ছুটি দিতে পারত। সেটাই ভালো হতো। তাহলে একটানা নয় দিন ছুটি হতো। সেটা দেশে একটা ছুটির রেকর্ড হতো, তা হয়নি। চাকরিজীবীরা নিজেরাই ছুটি নিয়েছেন। বেসরকারি অনেক সংস্থা যথারীতি ৫ মে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আবার শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ, শুরু হয়েছে যানজট। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা শুনে বুক কেঁপে ওঠে। ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ শতাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। তার মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী ৯৭ জন। কোনোভাবে যদি সড়কে শৃঙ্খলা আনা যেত আমরা বেঁচে যেতাম। করোনায়ও এমন প্রাণহানি ঘটেনি যেমনটা সড়কে নিরন্তর ঘটছে। সড়ক যোগাযোগ কেন যেন মনে হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মৃৃত্যুফাঁদ। আমাদের এ ব্যাপারে সামাজিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। রাস্তাঘাট গাড়ি-ঘোড়া যেভাবে বাড়ছে, চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া না গেলে দেশটা যে একেবারে অচল হয়ে যাবে। আগে রাস্তাঘাটে যত গাড়ি ছিল এখন তার চেয়ে বেশি মোটরসাইকেল। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে পীড়াপীড়ি করে মোটরসাইকেল কিনতে বাধ্য করে। অনেক সময় মনে হয় মোটরসাইকেল কেনা নয়, এ যেন মৃত্যুর টিকিট কেনা। কত মায়ের কোল খালি হয়, ঈদের আনন্দ কর্পূরের মতো উড়ে যায়। বিষাদ নেমে আসে পুুরো পরিবারে, গ্রাম-গঞ্জে-মহল্লায়। তবু যুবকের গরম রক্ত ওদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো থেকে বিরত রাখা যায় না। আমিও ছেলেবেলায় মোটরসাইকেল চালিয়েছি। কিন্তু খুব একটা বেপরোয়া নয়। আমার গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছে কিন্তু কখনো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা হয়নি। সড়কপথে যদি সুশৃঙ্খলতা ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে আমরা আরও বেশি স্বস্তি পেতাম, আনন্দ ও শান্তি পেতাম।

পয়লা মে রবিবার নঈম নিজামের একটি অসাধারণ লেখা পড়ে দারুণ অভিভূত হয়েছি। সত্যিই কারও কারও মনে হতে পারে আনন্দের ঈদুল ফিতরের ঠিক আগমুহূর্তে নঈম নিজামের নিরানন্দ ও বেদনার মৃত্যু নিয়ে আলোচনা কেন? কিন্তু আমার মনে হয়েছে মৃত্যুই পরম আনন্দের, মৃত্যুর চাইতে শাশ্বত সত্য আর কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে ‘আফসোসের দুনিয়ায় নিঃসঙ্গ মৃত্যুর খোলা দরজা’ এমন লেখা প্রতিদিন পাওয়া যায় না, এমন লিখতে যুগ যুগ সাধনা করতে হয়। নঈম নিজামকে তার সাংবাদিকতার প্রথম দিকেই পেয়েছিলাম। চিন্তা-চেতনা আত্মস্থ করার ক্ষমতা না থাকলে এমন করে কেউ ভাবতে পারে না। যত দিন গেছে ততই নঈম নিজাম পূর্ণতা পেয়েছে। মানুষ জন্মায় অনেক, চলেও যায়। কিন্তু সব মানুষ পূর্ণতা অর্জন করে না, অল্প কিছু মানুষ করে। এমনিতেই আমি যাদের ভালোবাসি, স্নেহ  করি তাদের যথার্থই করি। কোনো লুকোচুরি করি না। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য এ পর্যন্ত কাউকেই নিয়ন্ত্রণ বা করায়ত্ত করার চেষ্টা করিনি, এখনো করি না। অনেকে হয়তো মনে করেন বা করতে পারেন মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি সবাইকে শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। মোটেই তেমন নয়। মূলত আমি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছি। কাউকে বিপদের সামনে ঠেলে দিয়ে নিজে পেছনে থাকিনি। বরং অন্যকে পেছনে রেখে নিজে সামনে গেছি, বিপদের মোকাবিলা করেছি। তাই সবাই পেছনে এসে হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার যদি কোনো গুণ থেকে থাকে তাহলে এটাই আমার গুণ। আমি দেখেছি, নিখাদভাবে মানুষকে বিশ্বাস করতে পারলে এবং এক চোখে নুন আরেক চোখে তেল বেচাকেনা না করলে অধিকাংশ মানুষ সৎ এবং সরল থাকে। নিজে লোভী না হলে, ন্যায়পরায়ণ থাকলে অন্যরাও লোভ থেকে দূরে থাকে। হ্যাঁ, দু-চার জন দুষ্ট প্রকৃতির হয়, চুরি-চামারি করে এটা প্রকৃতির নিয়ম। সহনীয় চুরি-চামারি-দুর্নীতি সব সময়ই ছিল, সব সময়ই থাকবে। চুরি হবে অন্ধকারে, চুরি হবে গোপনে খুবই পরিশ্রম করে। সাবুদের মতো সিনা ফুলিয়ে যদি চোর চলে তাহলে সেটাই সমাজের অশান্তি। চোর চোরের মতো মাথা নিচু করে থাকবে, লুকিয়ে চলবে। চুরি করে কানাডা কিংবা অন্য কোনো দেশে প্রাসাদ নির্মাণে সাহস করবে না। তেমন চুরিতে কোনো দিনই আমার আপত্তি ছিল না, এখনো নেই। তাই সেদিনের নঈম নিজামের অসাধারণ লেখার প্রশংসা করার আমার ভাষা নেই। আমার মনে হয়েছে এযাবৎ নঈমের যত লেখা পড়েছি তার মধ্যে এটা শ্রেষ্ঠ। একজন পাঠক হিসেবে, একজন মুরুব্বি হিসেবে নঈমের প্রতি আমার উপদেশ থাকবে, নিরন্তর লেখা চালিয়ে যাও। ভাবীকালে অনেক কিছুই থাকবে না। কিন্তু লেখা থাকবে। লেখার দ্বারা লোক শিক্ষা পায়, সমাজের পরিবর্তন হয়।

নঈমের বন্ধু সৈয়দ বোরহান কবীর। নঈমের লেখা রবিবার, বোরহান কবীরের শনিবার। আমি নঈমের লেখা যেমন পড়ি, বোরহানের লেখাও পড়ি। ওদের লেখা আমাকে আকৃষ্ট করে। লেখকের কারও হাত-পা ধরে পাঠক সৃষ্টি করতে হয় না। লেখায় রস থাকলে, গাঁথুনি থাকলে, টানার ক্ষমতা থাকলে লেখাই পাঠককে টেনে নিয়ে যায়। তেমনই বোরহানের লেখা। গত শনিবার বোরহান কবীর এক চমৎকার লেখা লিখেছে। বোরহানের লেখা পড়লে মনে হয় সে আমার বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাথায় রেখে লেখে। শেখ হাসিনার প্রতি তার ভালোবাসা, দরদ অপরিসীম। এমন দরদি শুধু বোরহান কবীর নয়, আরও অনেকেই আছে। বোরহানের লেখার সবলতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তুলে ধরার অপরিসীম দুর্বার চেষ্টা, দুর্বলতাও প্রধানমন্ত্রীকে তুলে ধরা বা প্রকৃত অবস্থা আড়াল করা। তার লেখায় এটাই হয়তো গজমতির হার হতো অথবা হীরার মালা হতো, কহিনুরের চাইতে বেশি দামি হতো যদি সে প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা আড়াল করার চেষ্টা না করত। বরং তার যা মনে হয় তা-ই তুলে ধরত, তাহলে প্রধানমন্ত্রীরও ভালো হতো। শনিবার ‘চিন্তা কী, শেখ হাসিনা আছেন না’ এক অসাধারণ লেখা। বোরহান কবীরের এমন সাবলীল অনিন্দ্যসুন্দর চমৎকার লেখা দু-একটি ছাড়া খুব একটা দেখিনি। অনেক বড় লেখা। তেঁতুলতলা খেলার মাঠ খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল। ঢাকায় শ্বাস নেওয়া যায় না। ছোট্ট একটা ফুসফুস তেঁতুলতলা, সেটাও পচিয়ে ফেলার চেষ্টা এর চাইতে নিন্দনীয় আর কী হতে পারে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সত্যিই খুব ভালোবাসি, স্নেহ করি। অনেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখেছি মাটিতে পা পড়ে না। কিন্তু আসাদুজ্জামান খানের পা মাটি থেকে খুব একটা ওপরে উঠেছে বলে কখনো মনে হয়নি। কিন্তু তার তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে কথাবার্তা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানে গেলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে মাঠটি মাঠের মতোই রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটাই দরদি নেতার কাজ। কিন্তু এটাই যদি টানাহেঁচড়া না করে পুলিশের থানা বানাবার নাটক থিয়েটার না করে আগেভাগেই করা হতো তাহলে ভালো হতো না? বোরহানের লেখার একেবারে শেষ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক বা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং বাতিল নিয়ে যে প্রসঙ্গ এসেছে সেটাই বলছি। মাত্র দুই দিন আগে জেলা পরিষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ- জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রীর সামনে ব্যাপারটি তুলে ধরায় তিনি ভেঙে দেওয়া জেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত বিদায়ী চেয়ারম্যানদেরই পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা পরামর্শক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু মেয়াদ শেষে সরকারি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জেলা পরিষদ প্রশাসক বা চেয়ারম্যান করার বিধান রয়েছে, তাই পুরনো চেয়ারম্যানদেরই নির্বাচন পর্যন্ত স্বপদে বহাল রেখেছেন। ব্যাপারটা উত্তম। কিন্তু দু-তিন দিন পানিতে চুবিয়ে তারপর না করলেই কি ভালো হতো না? একজন নারী যত সফলই হোন তিনি যদি মা হতে না পারেন তাহলে তার নারীজীবনের কোনো সার্থকতা নেই। সম্রাজ্ঞীর চাইতেও একজন নারীর পূর্ণতা মা হওয়া। সেই নারী যদি কাউকে জীবন দিয়ে ভালোবাসেন, তাতে যদি তার পেটে সন্তান আসে সামাজিক স্বীকৃতি না থাকলে তার জন্য সেই সন্তান আসার খবর হবে জীবনের সবচাইতে বড় কলঙ্ক, বড় অন্ধকার। আর সামাজিক স্বীকৃতিতে মেয়ের পেটে বাচ্চা এলে খুশির ঝরনাধারা বয়ে যায়। বউ শাশুড়িকে বলে, শাশুড়ি শ্বশুরকে, দু-এক দিনের মধ্যে সবাই জেনে যায় নতুন অতিথি আসছে, সারা বাড়ি সারা মহল্লায় আনন্দের ঢেউ ওঠে, মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ি শুরু হয়। জেলা পরিষদ বাতিল এবং আবার চেয়ারম্যানদের স্বপদে বহাল সামাজিক স্বীকৃতিসহ মেয়ের পেটে বাচ্চা আর স্বীকৃতি ছাড়া জানাজানি ছাড়া কোনো নারীর পেটের বাচ্চার মতো মনে হয়েছে। বোরহানের লেখা পড়ে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম, কোথায় আছ। আজকের লেখা চমৎকার হয়েছে। তোমার কাছে লেখাটি কি আছে? বলেছিল, ‘না দাদা। আমি বাইরে।’ বলেছিলাম, এযাবৎকালের মধ্যে ‘চিন্তা কী, শেখ হাসিনা আছেন না’ তোমার শ্রেষ্ঠ লেখা। কিন্তু দু-এক জায়গায় সামান্য অসংগতি আছে বলেই লেখাটি পড়েছিলাম। ‘শুধু আওয়ামী লীগ কেন, সরকারের ভিতরও অনাসৃষ্টির ভূত হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। হঠাৎ কেউ কেউ এমন কান্ড করে বসেন, যার দায় বর্তায় ১৩ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের ওপর।’ বলেছিলাম, একটু ভেবে দেখ। বলল, ‘দাদা, হ্যাঁ। এখানে শুধু আওয়ামী লীগ হবে না। ১৩ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর হবে।’ আমার খুব ভালো লেগেছিল সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা ধরতে পারায়। বলেছিলাম, আরেকটা বিষয় দেখ- ‘র‌্যাবের বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা তারা নাকচ করে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এমন কেন হলো? সামনের দিনগুলোয় কি যুক্তরাষ্ট্র আরও চাপ দেবে? আগামী নির্বাচনে কি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে? যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাংলাদেশ কীভাবে সামলাবে?’ বলেছিলাম একটু চিন্তা করে দেখ তো এখানে কোনো অসংগতি বা লয়তালে অমিল পাও কি না? বোরহান বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করল ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন কেন হলো? সামনের দিনগুলোয় কি যুক্তরাষ্ট্র আরও চাপ দেবে?’ বললাম, আবার দেখ ‘যুক্তরাষ্ট্র কেন এমন হলো? সামনের দিনগুলোয় কি যুক্তরাষ্ট্র আরও চাপ দেবে?’ ও পাঁচ-ছয় বার শব্দগুলো উচ্চারণ করল। আমি বললাম, শুধু যুক্তরাষ্ট্র এমন কেন হলো? এ জায়গাটুকু দেখ। মনে হয় বিষয়টা কোনোভাবেই ধরতে পারল না। আমি বললাম, এ লেখার ওইখানে ‘১৩ বছরের আওয়ামী সরকার’ আর এখানে ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন কেন করল?’ হলে লেখাটা সম্রাট শাহজাহানের তাজের কহিনুর হতো। যা এখন ইংল্যান্ডের রানীর মাথায় শোভা পায়। কোনো চুরির জিনিস কারও মাথায় শোভা পাওয়ার কথা নয়। লুুকিয়ে রাখার কথা। কিন্তু ক্ষমতা এমনই জিনিস যা চোরকেও বা চুরিকেও রাজমুকুটে জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল করে তোলে।

 

লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর