বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসলাম ভেদাভেদ স্বীকার করে না

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

ইসলাম ভেদাভেদ স্বীকার করে না

ইসলাম ধনী-গরিবের পার্থক্য স্বীকার করে না। কারোর মর্যাদা ধনী-গরিব হওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং আল্লাহর কাছে তাকওয়ার জন্য বান্দা গুরুত্ব পায়। যে কারণে গরিবি অবস্থার জন্য হতাশ হওয়া উচিত নয়। কেউ গরিব বলে তাকে উপেক্ষা করাও অনুচিত। কারণ রসুল (সা.) নিজেই গরিবি- জীবন যাপন করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল বলেন, ‘একদিন এক লোক মহানবী (সা.)-কে বললেন, “হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালোবাসি।” তিনি বললেন, “তুমি যা বলছ তা চিন্তা করে বল।” তিনি বললেন, “আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালোবাসি।” এরূপ তিনি তিনবার বললেন। রসুল (সা.) বললেন, “যদি তুমি আমাকে ভালোবাস তাহলে দারিদ্র্যের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখ। কেননা যে আমাকে ভালোবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চেয়েও বেশি দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য তার কাছে আগমন করবে”।’ (তিরমিজি)। রসুল (সা.)-এর দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করেছিলেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! ওফাতের সময় রসুল (সা.) কোনো দিনার বা দিরহাম রেখে যাননি। কোনো গোলাম বাঁদিও রেখে যাননি; বরং তিনি যে লৌহবর্মটি দিয়ে জিহাদ করতেন তা-ও ৩০ কফিজ (এক প্রকার আরবি পরিমাপ) যবের বিনিময়ে বন্ধক রেখে যান। তাঁর পরিবারে এমন অনেক রাত কেটেছে, যখন তাঁরা রাতের খাবার গ্রহণের জন্য কিছুই পাননি।’

রসুল (সা.)-এর মক্কার জীবনে এতটাই অভাবগ্রস্ত ছিলেন যে তাঁর পরিবারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যকার ঘটনা। দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তিনি সফরে যেতেন। এমন এক সফরের কথা তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আর বিলাল সফরে বের হয়েছি, একাধারে তিন দিন চলে গেছে, আমাদের সঙ্গে কোনো খাবার ছিল না। বিলালের বোগলে লুকানো (পোঁটলা বাঁধা) যৎসামান্য খাবার ছাড়া একটা প্রাণ বেঁচে থাকতে পারে এতটুকু খাবারও আমাদের কাছে ছিল না।’ এমন অভাবগ্রস্ত অবস্থায় রসুল (সা.)-কে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল আপনি চাইলে মক্কার পাহাড়কে সোনায় পরিণত করে দেওয়া হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি তা চাই না বরং আমি চাই এ অভাব-অনটনের মধ্যেই থাকব। এক ওয়াক্ত খাবার খাব আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব। আবার এক ওয়াক্ত উপবাস থাকব আর ধৈর্য ধারণ করব।’ মক্কার কুরাইশরা তাঁকে রাজত্ব প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিল। তিনি তা গ্রহণ না করে দরিদ্রতাকেই আপন করে নিয়েছিলেন। এতেই প্রমাণিত হয়, তিনি দরিদ্রতাকে কতটা পছন্দ করতেন। মদিনার জীবনে রসুল (সা.) মসজিদে নববীর পাশে তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য পৃথক কামরা করে দিয়েছিলেন। মেহমানদের জন্য ছিল পৃথক একটি কামরা। প্রতিটি কামরার দেয়াল খেজুর গাছের শাখার মধ্যে কাদামাটি লাগিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ছাদও ছিল খেজুরপাতা দিয়ে তৈরি। তেলের অভাবে অনেক সময় সান্ধ্যবাতিও রসুল (সা.)-এর ঘরগুলোয় জ্বলত না। ঘরের কাজ নবীপত্নীরা নিজেরাই করতেন। এমন সাদাসিধা ছিল মহানবী (সা.)-এর পারিবারিক জীবন। রসুল (সা.)সহ সব নবী-রসুল দুনিয়ায় এসেছেন আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য। ভোগবিলাসের জন্য নয়। তাদের সুন্নত পালনে ভোগবিলাসিতা থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।

            লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর