শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান। সে তার অপকর্ম থেকে কখনো অবসর নেয় না। যে বান্দা আত্মিক শক্তিতে যত প্রবল তার জন্য তত প্রবল বুদ্ধিসম্পন্ন শয়তান সদস্য নিয়োগ করা হয়। আল্লাহ শয়তানের সব কার্যক্রম আমাদের জানিয়ে দিয়ে তার খপ্পর থেকে বেঁচে থাকার পদ্ধতিও বাতলে দিয়েছেন। তথাপি বারবার আমরা তার খপ্পরে পড়ে যাই, তার প্ররোচনার জালে আটকা পড়ি, অর্থাৎ আল্লাহর নাফরমানি করি। তার পরও মেহেরবান আল্লাহ আমাদের পর করে দেন না। বান্দা গুনাহ করার পরও কীভাবে আল্লাহর আপন থাকতে পারবে তার তরিকা তিনি শিখিয়েছেন এভাবে, তোমরা নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে (কখনো) নিরাশ হয়ো না; (কারণ) নিশ্চয়ই আল্লাহ (তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তোমাদের) সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। ইসতিগফার শব্দের অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা। দুনিয়ায় সন্তান যত বড় অপরাধই করুক, মা-বাবার কাছে যদি আকুতি-মিনতি করে ক্ষমা চায় তাহলে তারা কি ক্ষমা না করে পারে? পারে না। কারণ সন্তানের প্রতি মা-বাবার যে মায়া, বান্দার প্রতি আল্লাহর মায়া তার চেয়ে অনেক বেশি। যা হোক, গুনাহ করার পরও আমরা আল্লাহর আপনত্ব ধরে রাখব, ইসতিগফারের মাধ্যমে। যত বেশি ইসতিগফার করব তত বেশি আপন হব। জানা-অজানা, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, ছোট-বড় কত গুনাহ যে আমরা করি তার কোনো হিসাব নেই। অতএব প্রতিদিন বহুবার ইসতিগফার করা দরকার। এমনকি হাঁটতে-চলতে সব সময় পড়তে পারি। অন্তত ন্যূনতম এতটুকু পড়তে তো কোনো কষ্ট হয় না। মনে রাখতে হবে, আমার প্রতিটি কাজকর্মের হিসাবের জন্য হাশরের ময়দানে আল্লাহর আদালতে আমাকে দাঁড়াতে হবে। দুনিয়ার আদালতে যে বিচার হয়, সেখানে কী বিষয়ের আলোচনা হয়? দোষী সাব্যস্ত হোক বা না হোক পত্রপত্রিকায় প্রথমে আসে গ্রেফতারের কথা। এরপর আদালতে হাজির হতে হয়, উকিলরা জেরা করেন। মানুষ তা শোনে। শরিয়তে এটা নিষেধ নয়। কেননা কোনো মজলুম তার ন্যায্য হক আদায়ের জন্য সর্বশেষ চেষ্টা করবে আদালতের মাধ্যমে। শরিয়ত বলে, অন্যের গিবত তথা দোষচর্চা কোরো না, তাহলে তোমার দোষচর্চা করা হবে। তবে নিজের হক আদায়ের জন্য অন্যের দোষ বলা যায়; যদি বিশ্বাস হয় যে তৃতীয় ব্যক্তির কাছে বললে সে আমার হক আদায় করে দিতে পারবে এবং জালিমকে জুলুম করা থেকে ঠেকাবে। তৃতীয় ব্যক্তি সমাজের যে কেউ হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সেরা জায়গা হলো আদালত। যদি কারও নাম নিয়ে তার দোষের কথা বিচারকের কাছে বলে তাহলে একে আদৌ গিবত বলা হবে না। তবে মিথ্যা বলতে পারবে না। নিজে মিথ্যা বলবে না, উকিলকেও মিথ্যা বলাবে না। কারণ হাদিসে আছে, তোমার মিথ্যা ওকালতি তোমাকে ধ্বংসের মধ্যে নিয়ে যাবে দুনিয়ায় ও আখিরাতে। হাদিসের মধ্যে আছে, তুমি তোমার সঙ্গী, বন্ধুবান্ধব ও মুসলমানদের প্রতি নম্র-ভদ্র ও ন্যায়পরায়ণ হও, এমনকি মজলুম ও জালিমের সাহায্যে এগিয়ে এসো। এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! মাজলুমকে সাহায্য করার বিষয়টা তো সহজে বোধগম্য কিন্তু জালিমকে কীভাবে সাহায্য করব? হুজুর (সা.) বললেন, জালিমকে সাহায্য করার অর্থ হলো তাকে জুলুম করা থেকে বিরত রাখা। মানুষ অভাবগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সাহায্য করার বিষয়টি বোঝে, কিন্তু লুটেরা, সন্ত্রাসী, অত্যাচারীকে সাহায্য করাটা বোঝে না। এজন্যই হজরত আলী (রা.) বলেছেন, মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত যুক্তি অনুপাতে যদি শরিয়তের বিধান সাজানো হতো তাহলে মোজা মাসেহ করার নিয়ম পায়ের নিচ দিয়ে হতো ওপর দিয়ে নয়। কেননা যুক্তি তো হলো ময়লা লাগে পায়ের নিচে, তাই মাসেহ করলে পায়ের নিচে কিংবা ওপর-নিচে সবখানে করা হবে। অথচ নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা মোজার শুধু ওপরে মাসেহ কর, নিচে নয়। যুক্তি যতই বলুক পায়ের নিচ দিয়ে মোজা মাসেহ করতে, করা যাবে না।

কারণ নবী (সা.) ওপর দিয়ে মাসেহ করতে বলেছেন। এটা ময়লা দূর করার জন্য করা হচ্ছে না। বরং শরিয়তের একটি নির্দেশ পালনের জন্য করা হচ্ছে। এ নির্দেশ পালনে এ ফায়দা হবে, মোজা খুলে পূর্ণ পা ধুলে যে সওয়াব পাওয়া যেত এখানেও তা পাওয়া যাবে। তাই উদ্দেশ্য ঠিক করে নিতে হবে যে মোজার ওপর মাসেহ করছি শরিয়তের হুকুম পালনের জন্য, ময়লা দূর করার জন্য নয়। এজন্যই তো নামাজ চার রাকাত, তিন রাকাত, দুই রাকাত পড়া হয়। রহস্য কী? অনেকে বিভিন্ন উত্তর দেয়। কিন্তু মূল রহস্য হলো শরিয়তের নির্দেশ। তাই যুক্তিতে বুঝে আসুক বা না আসুক বান্দার দায়িত্ব মনিবের হুকুম পালন করা। জালিমকে সাহায্য করার অর্থ কী? মজলুমকে সাহায্য করা সবাই বোঝে কিন্তু জালিমকে সাহায্য করার বিষয় অনেকে বোঝে না। সাহাবির প্রশ্নের উত্তরে নবী করিম (সা.) বলেছেন, জালিমকে সাহায্য করা হলো তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখা; যেভাবেই হোক। কারণ জুলুমের কারণে দুনিয়ায় শাস্তি পাবে আখিরাতেও শাস্তি পাবে। এভাবে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে হয়তো দুনিয়ায় শরিয়তসম্মত শাস্তি পাওয়ার কারণে আখিরাতের শাস্তিটা আল্লাহ মেহেরবানি করে কমিয়ে দিতে পারেন বা ক্ষমা করে দিতে পারেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর