মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

এত অসংগতি দেখে দেখে ভালো লাগে না

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

এত অসংগতি দেখে দেখে ভালো লাগে না

কীভাবে দিন চলে যায় বোঝা যায় না। মনে হয় এই তো সেদিন ২০০০ সালের ১৩ মে বাবাকে চিরবিদায় জানিয়ে ছাতিহাটি মসজিদের পাশে কবরে রেখে এলাম। গত শুক্রবার ছিল বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। দুই বছর করোনার কারণে যেতে পারিনি। বাবা-মার জন্য মনটা সব সময় ছটফট করে। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ৪ এপ্রিল, যেতে পারিনি। কারণ আমার গলব্লাডার অপারেশন হয়েছিল ৩০ মার্চ। ছোটবোন শুশু গিয়েছিল। তার সঙ্গে ছোট ভাই মুরাদ এবং ছেলে দীপ ছিল। তাই বাবার কবরে ফাতিহা পাঠ করতে গিয়ে এবার খুবই ভালো লেগেছে। ছাতিহাটির উদ্দেশে রওনাকালে কেন যেন মুরাদ এসেছিল। আমি মনে করেছিলাম ও বাবার কবর জিয়ারতে যাওয়ার জন্য এসেছে। কিন্তু না। ও এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। বাবার মৃত্যুদিনের কথা ওর মনে ছিল কি না জানি না। তবে আমার সঙ্গে ছাতিহাটি গিয়েছিল। একসময় বলল, ‘ছোট ভাই মঞ্জিলাকে কথা দিয়েছিলাম ৫টায় ওকে বাইরে নিয়ে যাব।’ তাই একাই কবরে ফাতিহা পাঠ করে ও চলে এসেছিল। আমরা আসরের নামাজ শেষে মিলাদ শরিফ পাঠ করে সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে টাঙ্গাইল ফিরেছিলাম। ফেরার পথে কুষ্টিয়া কামার্তী বাজারের সামনে নেমেছিলাম। যুব আন্দোলনের নেতা এস এম নাজমুল আলম ফিরোজ অফিস নিয়েছে। তার অফিস দেখতেই নেমেছিলাম। দু-চার কথা হতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা মহারাজা সাইদুর রহমান বীরপ্রতীকের কথা মনে পড়ে। সাইদুর একজন ঐতিহাসিক মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় যখন সিলেটের ফারুক ছাড়া আমার সঙ্গে আর কেউ ছিল না, তখন পাশের বাড়ির রাঙ্গা সিদ্দিকীর হাতে একটা চিঠি দিয়ে সাইদুরের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে তার ছোট ভাই ইদ্রিসসহ চারজন নিয়ে প্রথমে ছাতিহাটি তারপর বাঘেরবাড়ী ইউনিয়নের মরিচায় আমার সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। তারপর পুরো মুক্তিযুদ্ধে ছায়ার মতো থেকেছে, ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে, বীরত্বসূচক বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছে। ’৭৪ সালে বিয়ে করে। ওর এক ছেলে এখন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হলে সবার আগে সাইদুরকে লিখেছিলাম প্রতিরোধযুদ্ধে শরিক হতে। সেখানেও সে শরিক হয়েছিল। রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করেছে। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকারের পতনের পর মোরারজি দেশাই মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে জিয়াউর রহমানের হাতে যে ৬ হাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাকে তুলে দিয়েছিল সেখানেও মহারাজা সাইদুর ছিল। বহুদিন জেল-জুলুম সহ্য করে একসময় সে মুক্তি পায়। কুষ্টিয়া কামার্তীর বাজারে বসেই ওকে ফোন করেছিলাম। কত আর হবে, সেখান থেকে ২০০-৩০০ গজের মধ্যেই সাইদুরের বাড়ি। সাইদুর করটিয়া কলেজে আমার সঙ্গে পড়ত। বয়সে তিন-চার বছরের ছোট হবে। কারণ ছেলেবেলায় আট-নয় বছর পড়ার ক্ষতি করে স্কুল-কলেজে গেছি। একসঙ্গে পড়তাম বলে বড় বেশি সাহস নিয়ে ওকে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হতে অনুরোধ করেছিলাম। কারণ আমরা একসঙ্গে ছাত্রলীগ করতাম। আমাদের নেতা ছিলেন লতিফ ভাই। ১৯ এপ্রিল সকাল ৪টায় ধানগড়া থেকে কুষ্টিয়া কামার্তী সাইদুরের বাড়ি এসেছিলাম। সেখান থেকে কালিহাতীর হামিদপুর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী কিছু ইপিআর নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এসেছিলেন। কালিহাতী ফটিকজানি সেতুতে পৌঁছেই দেখি ৩ এপ্রিল গোড়ান-সাটিয়াচরা থেকে পিছিয়ে যাওয়া সেই ইপিআরের দলের এক অংশ। শুনেছিলাম ময়মনসিংহ-জামালপুর থেকে লতিফ ভাই অনেক সৈন্য নিয়ে এসেছেন। তাই ধানগড়া নাজিরের বাড়ি থেকে আমাকে ডেকে নিয়েছিলেন। যে ইপিআররা ৩ এপ্রিল সাটিয়াচরায় ডিফেন্স করেছিলেন তাদের দেখে আমি আর সাহস রাখতে পারিনি। ৩ এপ্রিল সাটিয়াচরার যুদ্ধে চার-পাঁচ জন ইপিআরসহ আমাদের ১২-১৪ জন যোদ্ধা শহীদ হয়েছিল। সে যুদ্ধে বিরাট ভূমিকার কথা বলে গত বছর জননেতা ফজলুর রহমান খান ফারুককে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। অথচ সে যুদ্ধে তার কিছুই করার ছিল না। তিনি সেখানে ছিলেনও না। আগের দিন বিকালে গিয়েছিলেন। তাতেই পদক! তার সঙ্গে সে সময় ছানা মিয়াও ছিলেন। তাহলে ছানা মিয়াকেও তো পদক দিতে হয়। কিন্তু যারা শহীদ হয়েছে, যারা যুদ্ধ করেছে তাদের গোনতায় ধরা হয়নি। এ হলো দেশের অবস্থা। ১৯ এপ্রিল কালিহাতীর যুদ্ধ তেমন ভালো হয়নি। তবে আচমকা আক্রান্ত হয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিল। এ আক্রমণের প্রভাব টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধে গভীরভাবে পড়েছিল। সুসংগঠিত কাদেরিয়া বাহিনী যখন দুর্বার গতিতে হানাদারদের বাধা দিয়েছে, ঝাঁপিয়ে পড়েছে তখনো সাটিয়াচরা এবং কালিহাতীর আচমকা আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা ওদের মনে থেকেছে। যে কারণে প্রথম প্রথম অনেকটাই ভয়ে ভয়ে থাকত। এতে আমাদের সুবিধা হতো। যুদ্ধে যতটা অস্ত্রের দরকার তার চাইতে অনেক বেশি মনস্তাত্ত্বিক কলাকৌশলের দরকার। কাদেরিয়া বাহিনী গঠন এবং তার বিজয় এসব কিছুতে প্রাথমিক পর্যায়ে মাত্র কয়েকজন মানুষের ব্যাপক অবদান ও ভূমিকা ছিল। তার মধ্যে কুষ্টিয়া কামার্তীর সাইদুর অন্যতম। কস্তুরিপাড়ার কমান্ডার মনিরুল ইসলাম, শামসুল হক এবং সাইদুর, অন্যদিকে বীরবিক্রম আবদুস সবুর খান, কচুয়ার হামিদুল হক বীরপ্রতীক, খোরশেদ আলম আরও, শওকত মোমেন শাজাহান, আবু হানিফ আজাদ, আবদুল মোতালেব গুরখা, মকবুল হোসেন খোকা, আবদুল হালিম মাস্টার, আমজাদ বিএসসি, বড় চওনার ইদ্রিস কমান্ডার অন্যতম। এরাই কয়েকজন আমার পেছনে হিমাদ্রির মতো অবিচল হয়ে না দাঁড়ালে হয়তো আমি কিছুই করতে পারতাম না। হ্যাঁ, বিশাল কাদেরিয়া বাহিনীতে পরবর্তীতে প্রায় দেড় শ কোম্পানি কমান্ডার। কারও সঙ্গে ১০০, কারও সঙ্গে ১ হাজার যোদ্ধা। কিন্তু শুরুর দিকটা মাত্র কয়েকজন যোদ্ধাই ছিল কাদেরিয়া বাহিনীর নিয়ামক শক্তি। সেই সাইদুরকে দেখে যেমন আনন্দিত হয়েছি, তেমনি দুঃখিতও কম হইনি। যাদের অবদানে আজকের সরকার, শেখ হাসিনা এত বড় নেতা, এত বিপুল ক্ষমতা সেই তাদের কোনো খোঁজখবর নেই। এর মধ্যে সাইদুর একবার চেয়ারম্যান হয়েছিল। এলাকার মানুষ মোটামুটি এখনো তাকে চেয়ারম্যান বলেই ডাকে। মুক্তিযুদ্ধ, ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধযুদ্ধ এসবের কোনো নামগন্ধ নেই। কদিন পর হয়তো কেউ জানবে না সাইদুর নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা, যে কাদের সিদ্দিকীর ডাকে সাড়া দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ইতিহাস গড়ে ছিল।

চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক থেকে শুরু করে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার আমলে সরকারিভাবে আমরা দুষ্কৃতকারী ছিলাম। দুষ্কৃতকারী হিসেবে আমি এমপি হয়েছি, লতিফ ভাই, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রাজা দীপঙ্কর আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩ বছর একটানা প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও পাঁচ বছর ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীরা আজ পর্যন্ত সরকারি খাতাকলমে সেই দুষ্কৃতকারী! অন্যদের ক্ষেত্রে কী হবে জানি না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ইতিহাসের কাছে এ ব্যাপারে কোনোমতেই মাফ পাবেন না। বঙ্গবন্ধুকে খুন করে যারা সরকারে এসেছিল তাদের কাছে আমরা দুষ্কৃতকারী হলেও শেখ হাসিনা সরকারের কাছেও কি দুষ্কৃতকারী? এ প্রশ্নের জবাব ভাবীকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই দিতে হবে। এখান থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ নেই। ’৭৫-এর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের যারা শহীদ হয়েছে, তাদের নামে সংসদ শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেনি, জাতীয় বীর হিসেবে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের স্বীকৃতি প্রদান করেনি- এসব ব্যাপার বর্তমানে এড়িয়ে যেতে পারলেও ভবিষ্যতে কোনোমতেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুরবস্থা নিয়ে বাংলাদেশেও অনেকে জল্পনা-কল্পনা করছেন। হাইব্রিড নেতা-মন্ত্রীদের কথা দেশবাসীর কাছে তেমন গুরুত্ব নেই। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথার নিশ্চয়ই মূল্য আছে। সেদিন তিনিও বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো দিন শ্রীলঙ্কার অবস্থা হবে না। না হলেই ভালো। আমরা কেউ প্রত্যাশা করি না, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী বা বঙ্গবন্ধুর ভক্ত কোনো নেতাকে জনতা উলঙ্গ করে পেটাক, কোনো নেতা, এমপি বা মন্ত্রীকে আত্মহত্যা করতে হোক। তাই একটু সতর্ক থাকলে দোষ কী? শ্রীলঙ্কার মতো দুরবস্থা হবে না। ভালো কথা, হবে না। কিন্তু সাবধান বা সতর্ক থাকতে অসুবিধা কোথায়? সরকারকে সমাজপতিদের শুধু সেই সতর্ক থাকতেই বলছি। সয়াবিন তেল নিয়ে যে তেলেসমাতি হচ্ছে তার পরও সন্দেহ একেবারে মুছে ফেলা যায় না। লাখ লাখ লিটার সয়াবিন লুকিয়ে রেখে বাজারে অশান্তি সৃষ্টি অমার্জনীয় অপরাধ। নিজের লোক বলে ছাড় দিলে পরিণতি খারাপ হবে। সেদিন বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছি। ভুল করেছেন পদত্যাগ করে বিদায় হোন। এখনো দেশের কলিজার ওপর বসে আছেন কেন? আসলে ব্যবসায়ী হয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী, লাইনঘাট তো থাকবেই। তবে এটা সত্য, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাপয়সা নিয়ে কেউ কবরে যেতে পারবে না। দুর্নীতি করে টাকা করে, মানুষ ঠকিয়ে টাকা করে কেউ কোনো দিন পার পায়নি, আপনারাও পাবেন না। জীবনে টিপু মুনশির মতো অযোগ্য বাণিজ্যমন্ত্রী আর দেখিনি। কোনো দেশে এমন মন্ত্রীও হয়, এটা আমার প্রিয় বোনের আমলেই সম্ভব। আবার দেখুন রেলমন্ত্রীর বউয়ের কান্ডকারখানা! মন্ত্রীদের বউয়েরা সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা নন। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী দেশের প্রথম নারী। তাই বলে প্রেসিডেন্ট নন। রেলমন্ত্রী হয়েছেন বলেই বিনা ভাড়ায় রেল ভ্রমণ, এটা এক অসম্ভব ব্যাপার। অত পাওয়ার না দেখালে অত হাই কোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট না করলে রেলের কামরাতেই বিনা টিকিটের যাত্রী সমস্যা সমাধান হয়ে যেত। সেটা এখন পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নাকের ডগায় থাকত না। কী আর করা যাবে, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় তা-ও যদি হয় জ্যাইঠাসের ছেলে- সে তো বিনা টিকিটে ভ্রমণ করবেই। তাকে ফেরায় কে? সব জায়গায় তো শফিকুল ইসলামের মতো টিটি থাকে না। জানি না আমার বোন কী ভাবছেন। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন খুব বড়সড় নেতা ছিলেন না। বড় নেতা ছিলেন তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম। সাহসী, ত্যাগী ছিলেন, ছিলেন পরিশ্রমী। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে কিছু পাননি। যত দিন বঙ্গবন্ধু বেঁচে ছিলেন তত দিন যথেষ্ট গুরুত্ব ও সম্মান পেয়েছেন। তারপর আর কিছুই না। মন্ত্রী হয়েছেন তার ছোট ভাই নুরুল ইসলাম সুজন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ৯-১০ মাস হলো বিয়ে করেছেন। বিয়ে করা কোনো দোষের নয়। কিন্তু তার যদি পাওয়ার দেখাবার বাতিক থাকে তাহলে সেটাই হলো চরম দুর্ভাগ্যের। এমন মন্ত্রীর অনেক আগেই পদত্যাগ করা উচিত। এমন অকর্মণ্যদের বোঝা মাথায় রাখার কোনো মানে হয় না। এ ফাঁকে টিটি শফিকুলকে বলি, ‘বেশি বেড়ো না ঝড়ে ভাঙবে মাথা, বেশি ছোট হইও না ছাগলে খাবে পাতা’- কথাটা মনে রেখ। প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার, লাখ টাকা জরিমানা করলেই সে ভালো হয় না, সাবধানে চলতে হয়।

মানুষের জীবন কত ঠুনকো, ’৯১ সালে আমি যখন বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রিজন সেলে ছিলাম তখন একদিন হঠাৎই গোপালপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রমজান কুমিল্লা পালপাড়ার এ জি ই খালেদ মজুমদার তাজুলকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। তাজুল ’৭৫-এর প্রতিরোধ যোদ্ধা ছিল। ’৯০ সালের পর কতবার দেখা হয়েছে, ফোনে কথা হয়েছে। সামনে এলেই স্যালুট করত। ফোনে কথা বলতেও স্যালুট বলে শুরু করত। এক অসাধারণ সরল সোজা মানুষ। ’৯৪ থেকে টুঙ্গিপাড়ায় শোক দিবস পালন অনুষ্ঠানে মালপত্র দেখাশোনা করত, স্টোরের দায়িত্বে থাকত। অমন নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল দশটা মানুষও যদি বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকত তাহলে দেশের অবস্থা আরও ভালো হতো। সেই তাজুল আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। রবিবার বিকাল ৩টায় সে ইহলোক ত্যাগ করেছে। আমি তার ছেলে মো. জাহিদ হাসান মজুমদারের কাছ থেকে খবর পেয়েছি রাত সাড়ে ১০টা-১১টায়। ওকে নিয়ে বেশ কয়েকবার কর্নেল আকবর বীরপ্রতীকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। কর্নেল আকবর তাকে বেশ ভালোভাবে চিনত। মন্ত্রী হিসেবে তার দফতরে তাজুলকে অত সম্মান করতে দেখে অভিভূত হতাম। অমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কর্নেল আকবরের মন্ত্রী পদে থেকেও অমন সম্মান দেখানো খুব ভালো লাগত। মানুষ অবিনশ্বর নয়। ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?’ আমরা সবাই চলে যাব দুই দিন আগে আর পরে। পরম দয়ালু আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা- তিনি যেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধা তাজুলকে মুক্তি দেন, বেহেশতবাসী করেন। তাকে তাঁর আরশের সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেন। তার পরিবার-পরিজনকে সুখে-শান্তিতে রাখেন।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর