বুধবার, ১৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জিব সাফল্য ও ধ্বংসের কারণ

মাওলানা আবদুর রশিদ

জিব মূলত অন্তরের দরজা। মানুষের অন্তরের গোপনীয়তা জিব দ্বারা প্রকাশ পায়। এর ক্ষমতা প্রবল। জিব মানুষকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করতে পারে। আবার সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করাতে পারে। অধিকাংশ পাপ ও পুণ্যের কাজ জিব দ্বারাই সংঘটিত হয়। গিবত-পরনিন্দা, কুটনামি, মিথ্যা, অশ্লীল কথা, গালমন্দ ইত্যাদি জিবেরই কাজ। সুতরাং জিবকে সংযত রাখাই মানুষের জন্য জরুরি কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস নিশ্চিত এমন ব্যক্তির জন্য যে সামনাসামনি মানুষকে গালাগাল দেয় এবং পেছনে নিন্দা রটাতে অভ্যস্ত।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত ১)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ওই ব্যক্তিকে পাবে যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়।’ (মিশকাত)

এ হাদিস দুটি থেকে প্রতীয়মান হয়, মানুষের জিব ও লজ্জাস্থান কবিরা গুনাহের উৎস। কেননা মানুষ মুখ দ্বারা মিথ্যাচার, গালমন্দ, চোগলখোরি, ধোঁকাবাজি, গিবত প্রভৃতি কবিরা গুনাহ করে। কিন্তু মানুষ সেসব পাপ থেকে সাবধান হওয়ার ন্যূনতম চেষ্টা করে না। এগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের জিবকে সংবরণ করা অত্যাবশ্যক। কেননা এগুলোর ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রসুল (সা.) বলেন, ‘চোগলখোর ও খোঁটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)। হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুত্তাফাক আলাইহি, মিশকাত)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একদা রসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো গিবত কী? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুল অধিক জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। জিজ্ঞেস করা হলো, আমি যা বলি যদি তা আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে আপনার কী অভিমত? তখন তিনি বললেন, তুমি যা বল তার মধ্যে তা থাকলে তুমি তার গিবত করলে। আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে যা তুমি বল, তখন তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে।’ (মুসলিম, মিশকাত)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদায় সেই ব্যক্তিই মন্দ বলে সাব্যস্ত হবে যার অনিষ্টের ভয়ে লোকেরা তাকে ত্যাগ করেছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, যার অশ্লীলতার ভয়ে লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করেছে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, ‘একদা আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, নাজাতের উপায় কী? তিনি বললেন, নিজের জিব আয়ত্তে রাখ, নিজের ঘরে পড়ে থাক এবং নিজের পাপের জন্য রোদন কর।’ (মিশকাত)। হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় দ্বিমুখী, কিয়ামতের দিন তার (মুখে) আগুনের দুটি জিব হবে।’ (দারেমি, মিশকাত) আল্লাহ আমাদের সবাইকে জিবের  সুব্যবহারের তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর